কিশোরগঞ্জ থেকে: নমোনমো নম, সুন্দরী মম জননী বঙ্গভূমি/ গঙ্গার তীর, স্নিগ্ধ সমীর জীবন জুড়ালে তুমি/ অবারিত মাঠ, গগনললাট চুমে তব পদধুলি/ছায়া সুনিবিড় শান্তির নীড় ছোট ছোট গ্রামগুলি- বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘দুই বিঘা জমি’ কবিতার পংক্তিমালার মতই সুন্দর কিশোরগঞ্জ জেলার হাওরবেষ্টিত গ্রামগুলো।
জেলার হাওরবেষ্টিত (অষ্টগ্রাম-মিঠামইন-ইটনা) উপজেলায় বর্ষায় এক একটি গ্রামকে মনে হয় এক একটি ভাসমান দ্বীপ।
সরেজমিনে দেখা যায়- হাওরের পানি, হাওরের মাটি যেন প্রকৃতির এক অকৃপণ দান। হাওরের মাটিতে যেমন ফলে সোনালী ধান তেমনি হাওরের ভাসান পানিতে, হাওরের অগণিত নদ-নদী, খালবিলে পাওয়া যায় রুপালী মাছ।
অষ্টগ্রাম-মিঠামইন-ইটনা উপজেলার মানুষের বর্ষায় চলাচলের একমাত্র বাহন নৌকা। নৌকা ছাড়া এক গ্রাম থেকে অন্য গ্রামে যাওয়ার কথা কল্পনাও করা যায় না। এমনকি প্রাথমিক স্কুলের কোমলতি শিশুদেরও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে স্কুলে যেতে হলে নৌকা চড়তে হয়।
অন্যদিকে, বর্ষায় একটু বাতাস হলেই সৃষ্টি হয় কক্সবাজারের মতো বড় বড় ঢেউ। সেই ঢেউ উপেক্ষা করে ছোট ছোট ডিঙ্গি নৌকায় চড়ে দুলতে দুলতে জেলেরা যায় মাছ ধরতে যায়। ইঞ্জিন চালিত ট্রলার বা লঞ্চে চড়ে মাইক বাজিয়ে বিয়ে করতে যায় বর। এসব দৃশ্য মনোযোগ আকর্ষণ না করে পারে না।

ইটনা উপজেলার মৃগা ইউনিয়নের আলমগীর হোসেন ফরিদ বলেন, বর্ষায় আমরা পানিতে ভাসি। বড় বড় ঢেউ এসে গ্রামে আছড়ে পড়ে। আমাদের গ্রামের আড়াল (বর্ষায় গ্রাম রক্ষার্থে বাঁশ আর ছাইল্ল্যা দিয়ে তৈরি বেড়া) রক্ষার জন্য পানিতে নেমে থাকতে হয়।
সম্প্রতি মিঠামইন ঘুরে এসে ভৈরব রফিকুল ইসলাম মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ মো.শরিফ আহম্মেদ বাংলানিউজ বলেন, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের বিশাল জলরাশি দেখে আমরা পুলকিত হয়েছি। হাওরের মানুষ বিশাল জলরাশির মাঝে বসবাস করতে করতে জলের মতই সহজ-সরল।
তিনি আরো বলেন, তবে বর্ষায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো সচল ও মানুষের জীবনমান স্বাভাবিক রাখতে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে উদ্যোগ প্রয়োজন।
সার্ক এগ্রিকালচার সেন্টারের কৃষি বিজ্ঞানী ও হাওরের ভূমিপুত্র হিসেবে খ্যাত ড. নিয়াজ পাশা বাংলানিউজকে বলেন, হাওরের গ্রামগুলো অপার সৌন্দর্যের লীলাভূমি। বিছিন্ন গ্রামগুলোকে পরিকল্পিতভাবে গড়ে তুলতে পারলে জমি রক্ষা পাবে, আয় বৃদ্ধি পাবে ও সব নাগরিক সুবিধা পাবে। সবকিছু মিলিয়ে সারা বছরের কর্মসংস্থান হবে।
বাংলাদেশ সময়: ০৯১৩ ঘণ্টা, জুলাই ১১, ২০১৫
জেডএম