ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ফিচার

মানুষের ঠোঁট থেকে খাবার ঠুকরে নেওয়া ম্যাকাও

মফিজুল সাদিক, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬১৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ১০, ২০১৫
মানুষের ঠোঁট থেকে খাবার ঠুকরে নেওয়া ম্যাকাও ছবি: জি এম মুজিবুর / বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক থেকে ফিরে: বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কের সাফারি কিংডম। বাঘ, সিংহের মতো মাংসাশী প্রাণীর ভয় নেই এখানে।

পায়ে হেঁটে ঘুরে বেড়ানো যাবে দিব্যি। হাজারও পাখির কলকাকলি  আর কিচির মিচিরে সব সময়ই মুখরিত থাকে সাফারি কিংডম।

সাফারি কিংডমের প্রবেশপথে ম্যাকাউ পাখির রাজত্ব। সব সময় দর্শনার্থীদের জটলা এখানে লেগেই থাকে। জটলা ঠেলে দেখা গেল ভিন্ন এক চিত্র। মানুষের ঠোঁটের বাদাম নিজের ঠোঁটে নিয়ে খাচ্ছে ম্যাকাউ। মানুষের মতোই বাদামের উপরে অংশ ফেলে দিয়ে ভেতরের অংশ আয়েস করে চিবুচ্ছে।

এছাড়া পাকা কলা দিয়ে ম্যাকাউ বলে ডাকলেই আপনার ঘাড়ে উড়ে আসবে ম্যাকাউ।

সাফারি কিংডমে প্রাণিকূলকে ছোট-খাট বেষ্টনীর মধ্যে আবদ্ধ করে রাখা হয়েছে। এখানে বিভিন্ন বন্যপ্রাণীর নৈপুণ্য ও খেলাখুলা প্রদর্শনের মাধ্যমে পযর্টকদের বিনোদন দেয়া হচ্ছে। ম্যাকাউ যেন দর্শনার্থীদের কাছে বিনোদন কেন্দ্র।

ম্যাকাউ রাজ্যে দর্শনার্থীদের চোখ কান খোলা রাখতে হবে। কারণ অন্যদিকে নজর থাকলে হয়তো ম্যাকাউয়ের পাখার বাড়ি খেতে হতে পারে।  

সাফারি পার্কে মোট ৩০টি ম্যাকাউ রয়েছে। এর মধ্যে হলুদ ও কালো ঠোঁটের ম্যাকাউ ১৬টি। প্রতিটি ম্যাকাউ সাউথ আফ্রিকা থেকে গড়ে তিন লাখ টাকা দরে কেনা।
 
অন্যদিকে লাল ও নীল রং মিশ্রিত সাদা  ঠোঁঠের ১৪টি ম্যাকাউ নেদারল্যান্ড থেকে কেনা। প্রতিটি ম্যাকাউ এর মূল্য পাঁচ লাখ টাকা। এসব ম্যাকাউএর গড় বয়স আড়াই থেকে তিন বছর।

সাফারি পার্ক থেকে জানা গেছে, ম্যাকাউ দারুণ হিংস্র পাখি। খাবার খাওয়ার সময় সবলেরা দুর্বলের উপর আঘাত হানে। এদের ঠোঁট অনেক শক্ত। অনেক সময় খাঁচার তারও কেটে ফেলে। শারীরিক সক্ষমতার সঙ্গে একে অপরের সঙ্গে সমান না হলে দলে থাকতে পারে না।
 
একে অপরকে প্রতিনিয়তই আঘাত হানে। শারীরিকভাবে দুর্বল হওয়ার কারণে তিনটি ম্যাকাউ বর্তমানে অসুস্থ। যে কারণে এদের আলাদা করে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। শারীরিক সক্ষমতা ফিরে এলে ম্যাকাউ দলের মধ্যে ছেড়ে দেয়া হবে এদের।

সাফারি পার্কে ম্যাকাউ-এর খাবার মেন্যুতে রাখা হয়- রকমারি ফল, সবজি ও নানা ফলের বিচি।

সাফারি পার্কে ম্যাকাউ এর বিষয়ে রয়েছে সুসংবাদ। মেঘে মেঘে ম্যাকাউদের বয়স সাড়ে তিন বছরের কম নয়। এদের সবারই প্রেমের বয়স হয়েছে। পেয়ার বেঁধে গেছে। একে অপরের সঙ্গে মিলনে মত্ত। আর তিন মাস পরে কিছু ম্যাকাউ ডিম দিতে পারে।
 
ম্যাকাউগুলো দেখভাল করছেন খিলগাঁও মডেল ইউনিভার্সিটি কলেজের প্রাণীবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান মিহির রঞ্জন দে।

ম্যাকাউয়ের সম্ভাবনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সবাই মোটামোটিভাবে পেয়ার বেঁধেছে, এরা ম্যাচিউরড। আশা করা যাচ্ছে, তিন মাসের মধ্যে ডিম দেবে। এটা আমাদের জন্য সুসংবাদ। আফ্রিকা থেকে ব্লু ম্যাকাউ তিন লাখ এবং নেদারল্যান্ড থেকে রেড ম্যাকাউ পাঁচ লাখ টাকা দরে কেনা। আমাদের সাফারি পার্কে  ম্যাকাউয়ের বাচ্চা ফোটে- এটা আমাদের জন্য অনেক বড় সুসংবাদ।
 
সাফারি কিংডমে পায়ে হেঁটে ঘুরে আরো দেখা যাবে ছোট-খাট বেষ্টনীর মধ্যে আবদ্ধ প্রাণিকূল। দেখা মিলবে অসংখ্য পাহাড় গেট, প্রজাপতির রাজ্য, মেরিন অ্যাকুরিয়াম, ছোট জাতের পাখিশালা। শকুন আর পেঁচার পৃথক কর্ণার রয়েছে। এগ ওয়ার্ল্ড এ গেলে দেখা যাবে অজগর, পেঁচা, কচ্ছপ, ইমু, উটপাখি, গোখরা সাপসহ নানা প্রজাতির ডিম।
 
অন্যদিকে বৃহৎ আকারের গাছপালা ঘেরা স্থানে ক্রাউন্ট ফিজেন্ট এভিয়ারি, ধনেশ এভিয়ারি, প্যারট এভিয়ারিসহ দেশি-বিদেশি পাখির রাজ্য।

ম্যাকাউয়ের পাশেই টিয়ার রাজ্যে লাল, হলুদ এমনকি সাদা রংয়ের রকমারি টিয়ার দেখা মিলবে। তবে টিয়ার বেষ্টনীর মধ্যে দর্শনার্থীদের একটু সচেতন থাকতে হবে, কারণ শত শত টিয়ার ঝাঁক যে কোনো মুহূর্তে আপনার শরীরে আছড়ে পড়তে পারে।

** সিংহ শাবকের পুরুষ মা!

বাংলাদেশ সময: ১৫৩৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ১০, ২০১৫
এমআইএস/জেডএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।