ঢাকা, মঙ্গলবার, ৩১ আষাঢ় ১৪৩২, ১৫ জুলাই ২০২৫, ১৯ মহররম ১৪৪৭

ফিচার

পৃথিবীর ১০টি দুর্গম জায়গা

শেরিফ আল সায়ার, বিবিসি অবলম্বনে | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩:০৮, জুন ৬, ২০১১
পৃথিবীর ১০টি দুর্গম জায়গা

পৃথিবীতে ১০টি সুদীর্ঘ দুর্গম জায়গা আছে, যেখানে বিভিন্ন দেশের আরোহীরা ভ্রমণে গিয়ে লাভ করেছেন দুর্লভ অভিজ্ঞতা।   কেউ যদি এসব দুর্গম জায়গা ভ্রমণ করতে চান, তাদের সকলের অবশ্যই থাকতে হবে মজবুত ফুসফুস, পায়ের শক্ত গঠন আর দুর্গম অঞ্চল ভ্রমণের মতো যেকোনো ধরনের প্রস্তুতি।

আরোহীদের জন্য এমন ১০টি দুর্গম জায়গা সম্পর্কে সংক্ষেপে তুলে ধরা হলো:

১. জিআর ২০, ফ্রান্স
করসিকা হলো একটি দ্বীপ। ফ্রান্সের ভূখণ্ড থেকে কঠোর পরিশ্রম করে এখানে পৌঁছতে সময় লেগে যাবে ১৫ দিন। পথে পড়বে  বন, ধূসর বর্ণের পাথরঘেরা পাহাড়। অনেক সময় দেখা যাবে আগ্নেয়গিরির জ্বালামুখও। সেই সাথে তুষারপাতেরও মুখোমুখি হওয়া লাগতে পারে। শুধু কী তাই? উঁচু-নিচু পথ ধরে চলে যাবে রাস্তা। এগুলো পাড়ি দেওয়া মোটেও কোনো সহজ কাজ নয়। তাছাড়া মাঝে মাঝে দেখা যাবে স্যাঁতসেঁতে পথটি খাড়া হয়ে উপরে দিকে উঠে গেছে। এমন জলাভূমিও দেখা যাবে যেখানে পানি দ্রুতবেগে চলে যাচ্ছে। এমন সব বিষয়গুলো আরোহীদের চমৎকার অভিজ্ঞতা দিতে পারে।  

২. ইনকা ট্রেইল, পেরু
প্রাচীন সভ্যতার ধ্বংসাবশেষ ইনকা ট্রেইল ৩৩ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত। হাজার বছরের সভ্যতা এখানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। এই পথ ধরে প্রাচীন সভ্যতা মাচু-পিচুর দিকে এগিয়ে যাওয়া যায়। ঢালু পথ বেয়ে চারপাশে দেখা যাবে পাহাড়-পর্বত। এখানে প্রবেশের জন্য রয়েছে তিনটি ভিন্ন পথ। পাহাড়ের উপরে উঠলে দেখা যাবে পুরো সবুজ বনটি ছেয়ে আছে মেঘে। এক অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করা যাবে পেরুর ইনকা ট্রেইলে।

৩. পেয়েস ডোগোন, মালি
এটিকে বলা হয় ‘একটি বিশেষ সংস্কৃতির অধিকারী মানুষের স্থান’, যা আফ্রিকার হারিয়ে যাওয়া গোত্র। মালি থেকে দুর্গম পথ ধরে  যেতে দুই থেকে দশ দিন সময় লাগবে। যাত্রাপথে পড়বে সুউচ্চ পাহাড়; পাহাড়গুলো সমুদ্র ঘেঁষে অবস্থিত। ডোগোন গ্রামে যেতে খাড়া পাহাড়গুলোই সবচাইতে বেশি চোখে পড়বে। ডোগোন সম্প্রদায় পৃথিবীতে পরিচিত তাদের ভিন্ন রকম নাচের জন্য।

৪. এভারেস্ট বেইজ ক্যাম্প, নেপাল
কালা পাত্তার থেকে এর উচ্চতা ৫৫৪৫ মিটার। এভারেস্টের নিচ থেকে বেইজ ক্যাম্প পৌঁছতে সময় লাগবে তিন সপ্তাহ। দুর্গম এ পর্বত পাড়ি দেয়া মোটেও সহজ কোনো কাজ নয়। ভয়ানক পথও অনেকে বলে থাকেন। তবে যারা এডভেঞ্চার পছন্দ করেন তাদের জন্য সত্যিকার অর্থেই অসাধারণ ভ্রমণ হবে। আবার যারা গর্ব করে বলতে চান ‘আমি পৃথিবীর সর্বোচ্চ পর্বতে উঠছি’, তাদের জন্য এই এভারেস্টেও বেইজ ক্যাম্প অনেকটাই বাধ্যতামুলক।

৫. হিমালয়, ভারত
সাধারণ মানুষের জন্য ভারতের হিমালয় পছন্দের হতে পারে না। কেউ যদি একা থাকতে পছন্দ করেন, তাদের জন্য হিমালয় প্রদেশে ভ্রমণ করা হয়ে উঠতে পারে অন্যরকম। ভূমি থেকে অত্যন্ত দুর্গম পথ পাড়ি দিয়ে পৌঁছতে সময় লাগবে ২৪ দিন। একই সাথে ভ্রমণ পথ হবে দুর্গম কিংবা প্রাচীন। নীরব ভয়ানক এই পথ পাড়ি দেওয়ার সময় মনে হতে পারে নিশ্চয়ই এখানে সৃষ্টিকর্তা থাকেন; কারণ এখানে মানুষের থাকার মতো কোনো জায়গা তৈরি হয়নি।

৬. ওভারল্যান্ড ট্র্যাক, অস্ট্রেলিয়া
তাসমেনিয়ার ঐতিহ্যগত দিকটি হলো এর জনশূন্যতা। বেইজ ক্যাম্প থেকে ৮০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে সময় লাগতে পারে ৫-৬ দিন। পথ পাড়ি দিতে চোখে পড়বে ক্র্যাডেল পর্বত এবং লেক ক্লেয়ার। লেক ক্লেয়ার হলো অস্ট্রেলিয়ার সবচাইতে গভীর প্রাকৃতিকভাবে তৈরি হওয়া লেক। ওভারল্যান্ডে যেতে সামনে পড়বে পাহাড়, সুন্দর প্রাকৃতিক দৃশ্য, বর্ধিত বন। যারা জলপ্রপাত দেখতে উৎসাহী তাদের জন্য এই অভিজ্ঞতা হতে পারে একদম অন্যরকম।  

৭. রুটবার্ন ট্র্যাক, নিউজিল্যান্ড
নিউজিল্যান্ডের দক্ষিণে অবস্থিত এই দ্বীপটি প্রকৃতির অসাধারণ নির্মাণ। দক্ষিণে ৩২ কিলোমিটার পথ হেঁটে পৌঁছতে সময় লাগতে পারে তিন দিন।   বেইজ ক্যাম্প থেকে দক্ষিণে যেতে দুটি ন্যাশনাল পার্ক পড়বে। একটি হলো ফিওরল্যান্ড, অন্যটি হলো অ্যাসপাইরিং। সাথে দেখা যাবে হ্যারিস স্যাডেল এবং কোনিক্যাল হিল। এখানে আবার দেখা যাবে সমুদ্রের ঢেউ। রুটবার্নের প্রধান বিষয়টি হলো নিরাপত্তা। সবাইকে সবসময় সেখানে ভ্রমণের অনুমতি দেওয়া হয় না।

৮. দ্য নেরোওস, যুক্তরাষ্ট্র
ভারজিন নদী ধরে ১৬ মাইল পথ পাড়ি দিতে হবে। দ্য নেরোওস-এর জিয়ন ন্যাশনাল পার্কের মতো পার্ক আর কোথাও নেই। মূলত নদীপথ দিয়েই যেতে হবে। কখনও কখনও সাঁতরেও পাড়ি দিতে হতে পারে।   এই যাত্রা দুর্গমও হতে পারে। কেউ কেউ ঝুলন্ত বাগানে প্রকৃতির সৌন্দর্যের সাথে একটি রাতযাপনও করে যান।

৯. দ্য হাউট রুট, ফ্রান্স-সুইটজারল্যান্ড
আরোহীরা এই পর্বতে উঠে দেখতে পাবেন ফ্রান্স এবং সুইটজারল্যান্ডের অপরূপ দৃশ্য। পুরো পথটি হেঁটে পৌঁছাতে সময় লাগবে দুই সপ্তাহ। এই পথ পাড়ি দিতে শারীরিকভাবে শক্ত হওয়া প্রয়োজন।

১০. বালটোরো গ্লাসিয়ার অ্যান্ড কে-২, পাকিস্তান
এটি বরফেঘেরা একটি করিডোর যার উচ্চতা ৮৬১১ মিটার। কে-২-কে পৃথিবীর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পর্বত বলা হয়। দুর্গম পথ পাড়ি দিয়ে কেউ যখন এর মাঝখানে পৌঁছবে  তখন দেখতে পাবে পৃথিবীর অপরূপ সৌন্দর্য। পথে পড়বে বরফের নদী। পড়বে গ্রানাইট পিরামিডের পাহাড়। সাথে দেখা যাবে পাইজু (৬৬১০ মিটার), উলি বিয়াহো (৬৪১৭ মিটার), গ্রেট ট্র্যাংগো টাওয়ার (৬২৮৬ মিটার) এবং সর্বশেষে চলে আসবে কে-২।

বাংলাদেশ সময় ২১২০, জুন ০৬, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।