আমাদের প্রতিদিনের জীবনধারাকে মানসিক অশান্তি, দুশ্চিন্তা যেন আঁকড়ে ধরে রেখেছে। আর এর মাত্রা বাড়িয়ে দিচ্ছে জিনিসপত্রের লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধি, জীবনযাত্রার মানের সাথে আয়ের বৈষম্য ইত্যাদি ইত্যাদি।
তরুণ প্রজন্মের যে অনির্বাণ স্বপ্নযাত্রা, তা মুহুর্তে নিভে যেতে পারে হতাশা, মানসিক অশান্তি, দুশ্চিন্তার কালো থাবায়।
যাই হোক, শত শত দুশ্চিন্তার ভীড়ে যে মানুষটি এইসব কিছুকে পাশ কাটিয়ে বা অন্যকথায় বলা যায়, যিনি দুশ্চিন্তাকে ঝেড়ে ফেলে এগিয়ে যাবার পথ খোঁজেন, তিনিই আসলে এগিয়ে যেতে পারেন নির্দিষ্ট লক্ষ্যে।
মনোবিজ্ঞানীরা এই দুশ্চিন্তাকে পাশ কাটানোর তিন ধরনের পথ বাতলে দিয়েছেন। গবেষণায় দারূণ কার্যকারিতার প্রমাণও পাওয়া গিয়েছে।
বিজ্ঞানীরা এই পদ্ধতির প্রথম পথটির নাম দিয়েছেন, ‘হ্যাঁ-বোধক আত্মকথন’। এই ধারণাটির মূল বক্তব্যই হচ্ছে নিজের সাথে কথা বলা এবং সবগুলো কথাই হবে হ্যাঁ-সূচক।
এই যেমন: যে কাজটি আপনার দুশ্চিন্তার কারণ, তাকে নিয়ে এভাবে ভাবতে পারেন,
- আমি আমার সাধ্যমত কাজটি করার চেষ্টা করবো।
- আমার বিশ্বাস কাজটি আমি ভালভাবেই করতে পারবো।
- এই সামান্য ব্যাপারটিই পরে এক সময় ভাবলে হাসি পাবে, শুধু শুধু একে নিয়ে ভাবছি।
- মানুষ হিসেবে ভুল হতেই পারে, দারূন একটি প্লান নিয়ে এগুলে ভুলের মাত্রা কমবেই ইত্যাদি।
এই ‘হ্যাঁ-বোধক আত্মকথন’ এর চর্চা আপনি যেখানে সেখানে যেমন: গাড়িতে, ডেস্কে, বিছানায় বা যখন আপনি বুঝতে পারবেন যে আপনার মাথায় না-বোধক চিন্তাগুলো ঘুরপাক খাচ্ছে, তখন করলে দারূন ফল পাবেন।
এই ‘হ্যাঁ-বোধক আত্মকথন’ শুধু আপনার দুশ্চিন্তাকে পাশ কাটাতে সাহায্য করবে না বরং যার কারণে এই দুশ্চিন্তা তাকে সফলভাবে মোকাবেলাতেও পথ বাতলে দেবে।
দ্বিতীয়টি হলো, ‘ইমার্জেন্সি স্ট্রেস স্টপার’। বিজ্ঞানীরা এই পথটিকে উল্লেখ করেছেন, কেবলমাত্র তাৎক্ষণিকভাবে মানসিক চাপ ও দুশ্চিন্তাকে ঝেড়ে ফেলার কৌশল হিসেবে। ‘ইমার্জেন্সি স্ট্রেস স্টপার’ এর মূল কৌশলগুলো হচ্ছে:
- কথা শুরুর আগে এক থেকে দশ পর্যন্ত গুনুন।
- তিন থেকে সাতবার জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিন।
- কিছুক্ষণের জন্য মানসিক চাপ সৃষ্টিকারী কার্যক্রম থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখুন; ভাবুন এই কাজটি আপনি পরেও করতে পারবেন।
- যদি ভুল করে থাকেন তবে, ‘আমি দুঃখিত’ এই শব্দটি ব্যবহারে দ্বিধাবোধ করবেন না।
- দেরি হতে পারে, এই ধরনের মানসিক চাপ থেকে মুক্তি পেতে ঘড়ির সময় পাঁচ-দশ মিনিট এগিয়ে রাখতে পারেন।
- বড় সমস্যাগুলোকে ছোট আকারে ভেঙে তা একটির পর একটি সমাধান করতে পারেন।
- গোলাপের গন্ধ নিতে পারেন; ভালোবাসার মানুষকে জড়িয়ে ধরতে পারেন, প্রতিবেশী বা বন্ধুর সাথে সাধারণ কোন বিষয় নিয়ে ঠাট্টা করতে পারেন।
তৃতীয় পথটি হচ্ছে, ‘আনন্দকে খুজে বের করা’। যে কাজটিতে আপনি আনন্দ পান, ঠিক সেই কাজটিকেই খুঁজে বের করতে শুরু করুন। এই পথটির মাধ্যমে আপনি নিশ্চিতভাবে আপনার দুশ্চিন্তাকে দূরে সরিয়ে রাখতে পারবেন। এই পদ্ধতির মূল বক্তব্যগুলো হচ্ছে:
- পছন্দের কোনো বই পড়া যেতে পারে।
- পুরানো কোনো প্রিয় মুভি দেখতে পারেন।
- স্ট্যাম্প বা কয়েন সংগ্রহ যদি আপনার নেশা হয় তবে তা নিয়ে নাড়াচাড়া করতে পারেন।
- বন্ধুদের সাথে আড্ডায় বসতে পারেন, সাথে যোগ হতে পারে চা বা কফির ফ্লেভার।
- বাইরে থেকে একটু হেঁটে আসতে পারেন, সাথে ক্যামেরা থাকলে অবশ্যই এর ব্যবহার করতে পারেন।
- গান শুনতে পারেন
- ঠান্ডার সমস্যা না থাকলে বৃষ্টিতেও ভিজতে পারেন।
‘আনন্দকে খুঁজে বের করার’ মূল থিমটিকে গবেষকরা এক কথায় বলেছেন এভাবে,
"When stress makes you feel bad, do something that makes you feel good."
বিজ্ঞানীদের মতে, আপনি যদি দুশ্চিন্তাকে পাশ কাটিয়ে চলতে পারেন, তবে তা আপনার কর্মদক্ষতা বৃদ্ধি করবে।
জীবনে চলার পথে এই মানসিক চাপ ও দুশ্চিন্তার কালো থাবা যাতে আমাদের আহত করতে না পারে, এর প্রতি একটু খেয়াল রেখে চলাই হবে বুদ্ধিমানের কাজ।
বিদায় হোক দুশ্চিন্তার। জয় হোক তারুণ্যের....
বাংলাদেশ সময়: ১৪৪০ ঘন্টা, জুন ১১, ২০১১