ঢাকা, শনিবার, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ১৭ মে ২০২৫, ১৯ জিলকদ ১৪৪৬

ফিচার

বাংলাদেশে দুবাই কেয়ারস’র ‘স্কুল ফিডিং’

ডেস্ক রিপোর্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪:২৯, জুলাই ৫, ২০১১
বাংলাদেশে দুবাই কেয়ারস’র ‘স্কুল ফিডিং’

ঢাকা: ‘উন্নয়নশীল দেশে দারিদ্র দূরীকরণের সর্বোৎকৃষ্ট দীর্ঘমেয়াদী পন্থা হচ্ছে শিক্ষা’- এ মূলমন্ত্রকে সামনে রেখে বাংলাদেশ ও গাজা উপত্যকার প্রাইমারি পর্যায়ের দারিদ্রপীড়িত শিশুদের জন্য ২বছর মেয়াদি ‘স্কুল ফিডিং’ কার্যক্রম হাতে নিয়েছে দুবাই ভিত্তিক জনকল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠান দুবাই কেয়ারস।

তারা আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সাহায্য সংস্থার সঙ্গে কাজ করছে উন্নয়নশীল দেশে অপুষ্টির শিকার শিশুদের জন্য ‘স্কুল ফিডিং’ কর্মসূচিকে পরিচিত করতে।



এক জরিপে দেখা গেছে, বিশ্ব জুড়ে প্রতিদিন গড়ে ৬ কোটি ৬০ লাখ শিশু অভুক্ত অবস্থায় স্কুলে যায়। পারিবারিক দারিদ্রের কারণে পেটে ক্ষুধা নিয়ে বিদ্যালয়ে পাঠগ্রহণ করাটা পক্ষেই শেষ পর্যন্ত আর সম্ভববপর হয়ে ওঠে না এদের অনেকের পক্ষেই। এর অবশ্যম্ভাবী পরিণতি হিসেবে তারা ঝরে পড়ে স্কুল থেকে। এরপর বাধ্য হয় শিশুশ্রমে বা পা বাড়ায় অপরাধ জগতের দিকে।

এ প্রবণতা ঠেকাতে আর উন্নয়নশীল দেশে শিশুদের মাঝে মানসম্পন্ন প্রাথমিক শিক্ষা পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার সহযোগিতায় দুবাই কেয়ারস অপুষ্টির শিকার দরিদ্র পরিবারের শিশুদের জন্য ‘স্কুল ফিডিং’ নামে এ কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। এর আওতায় প্রথম পর্যায়ে অপুষ্টির শিকার বাংলাদেশি ৮৮ হাজার এবং গাজা উপদ্বীপের ৮০ হাজার ফিলিস্তিনি শিশু উপকৃত হবে।

বাংলাদেশ ও গাজা উপদ্বীপের দরিদ্র শিশুদের জন্য স্কুলে পুষ্টিকর খাবার সরবরাহের এ প্রকল্পে আনুমানিক ব্যয় ধরা হয়েছে ১ কোটি ৩০ লাখ ইউএই দিরহাম।   এতে দুবাই কেয়ারস এর নিজস্ব তহবিল ছাড়াও গত ২০১০ সালের রমজান মাসে চালানো ‘স্কুল ফিডিং ক্যাম্পেইন’ এর সংগৃহীত অর্থও ব্যয় করা হচ্ছে। উল্লেখ্য, দুবাইভিত্তিক দাতব্য এ প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রধানমন্ত্রী ও ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং দুবাই’র শাসক শেখ মোহাম্মদ বিন রশিদ আল মাকতুম এর উদ্যোক্তা।

এ ব্যাপারে দুবাই কেয়ারস এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) তারিক আল গুর্গ এর মতে- উন্নয়নশীল দেশে দারিদ্র দূরীকরণের সর্বোৎকৃষ্ট দীর্ঘমেয়াদী পন্থা হচ্ছে শিক্ষা। আর বিগত কয়েক বছরে ওইসব অঞ্চলে স্কুলগামী শিশুদের জন্য স্কুলেই পুষ্টিকর খাদ্য সরবরাহের এ উদ্যোগ শিশুদের জন্য স্কুলে প্রচলিত অন্যান্য সুবিধা সুযোগের চেয়ে বেশি দরকারি বলে প্রমাণিত হয়েছে।    

তারিক আল গুর্গ বলেন, “উন্নয়নশীল দেশের শিশুদের দৈনিক পুষ্টি চাহিদা মোকাবেলায় ‘ইন-স্কুল মিল’ পদ্ধতিতে পুষ্টিকর খাবার সরবরাহের এ প্রকপ্লের জন্য তহবিল গঠনে গত বছর শুরু করা আমাদের ‘স্কুল ফিডিং ক্যাম্পেইন’ সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিভিন্ন মহল থেকে ব্যাপক সাড়া পেয়েছে। ”

তিনি বলেন, ‘আমারা ওই দু’টি দেশে আমাদের লক্ষ্য অর্জন নিশ্চিত করবো। ’

বাংলাদেশে স্কুল ফিডিং প্রকল্প বাস্তবায়নে দুবাই কেয়ারস কাজ করে যাচ্ছে গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ইমপ্রুভ্ড নাট্রিশন (এঅওঘ) এর সঙ্গে। প্রাথমিক পর্যায়ের স্কুলগামী বয়সের দরিদ্র শিশুদের মাঝে পুষ্টিহীনতার মাত্রা কমাতে তাদের জন্য পর্যাপ্ত পুষ্টিযুক্ত ও বিশেষায়িত খাদ্যগ্রহণের হার বাড়াতে তারা কাজ কের যাচ্ছে। এর উদ্দেশ্য স্কুলে পুষ্টিকর খাবারের জন্য শিশুরা স্কুলের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠবে। এর ফলে তাদের স্কুলে ভর্তি হওয়া ও পড়াশোনায় নিয়মিত হওয়ার হার বাড়বে। একই সঙ্গে তারা পুষ্টিহীনতা কাটিয়ে উঠে সুস্থ সবল শিশু হয়ে উঠবে। এসব কিছুই দারিদ্র দূরিকরণে তথা অনগ্রসর ও সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের শিক্ষা অর্জণে ভূমিকা রাখবে। সুস্থ দেহমনে সঠিক শিক্ষা অর্জণের মাধ্যমে তারা দারিদ্রমুক্ত হওয়ার পথে এগিয়ে যাবে।

গাজা উপদ্বীপে দুবাই কেয়ারস কাজ করছে বিশ্ব খাদ্য কর্মসচি (ডঋচ) এর সঙ্গে। এখঅনে প্রথমত এক বছর মেয়াদি প্রকল্পের লক্ষ্য হচ্ছে- স্কুলগুলোতে পুষ্টিমান সমৃদ্ধ খাদ্য সরবরাহের মাধ্যমে ছাত্রভর্তির হার বাড়ানো। এর আওতায় প্রতিদিন গাজার ১৫০টি স্কুলে ৮০ হাজার ছাত্রের জন্য ৬০ গ্রাম করে বিশেষ পুষ্টিমান ও ভিটামিন সমৃদ্ধ খেজুরের বার সরবরাহ করা হবে।

তবে বাংলাদেশের স্কুলগুলোতে খেজুরের বার নয়- দেওয়া হবে কয়েক ধরনের খাদ্য। এর মধ্যে রয়েছে দুবাই কেয়ারস নির্মিত কেন্দ্রীয় কয়েকটি বাবুর্চিখানা থেকে পাক করা গরম খাবার এবং সপ্তাহের নির্দিষ্ট কয়েকদিন বিশেষায়িত খাবার।

দু’বছর মেয়াদি এ প্রকল্পের মাধ্যমে শিশুদের জন্য পুষ্টিকর খাদ্য নিশ্চিত করার সঙ্গে সঙ্গে তাদেরকে পুষ্টি সম্পর্কেও শিক্ষিত করে তোলা হবে। এর ্গাতায় তারা জীবাণু মুক্তকরণ, নিরাপদ পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন তথা নিরাপদ স্বাস্থ্য বিধান সম্পর্কেও ধারণা পাবে তারা। দুবাই কেয়ারস আরও মনে করে যে এ প্রকল্পের মাধ্যমে সংশ্লিষ্টরশিক্ষক নীতি নির্ধারক মহলও অনেক ক্ষেত্রে এ ধরনের বিষয়ে সচেতনতা গড়ের তুলতে ও কার্যকর ভূমিকা রাখতে সচেষ্ট হবেন যা এ উদ্যোগকে আরও বেগবান করবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৪১৬ ঘণ্টা, ০৫ জুলাই, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।