ঢাকা, শনিবার, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ১৭ মে ২০২৫, ১৯ জিলকদ ১৪৪৬

ফিচার

ডিজিটাল লাইব্রেরি : বিশ্ব দেখার জানালা

রেজিনা আলম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮:১৬, জুন ১৬, ২০১১
ডিজিটাল লাইব্রেরি : বিশ্ব দেখার জানালা

বর্তমান সময়ের অত্যন্ত পরিচিত একটি শব্দ হচ্ছে ‘ডিজিটাল’। কথায় কথায় আমরা বলে থাকি ডিজিটাল ক্যামেরা, ডিজিটাল ফোন, ডিজিটাল ফরমেটে চলচ্চিত্র, ডিজিটাল লাইব্রেরি ইত্যাদি।

আমাদের দৈনন্দিন জীবনের পরতে পরতে রয়েছে ডিজিটালের ছোঁয়া।

একটা সময় ছিল যখন মানুষ নিজের মনের ভাব প্রকাশ করার জন্য নানাভাবে চেষ্টা করেছে। হাতের কাছে যা পেয়েছে তাতেই লিপিবদ্ধ করতে চেয়েছে নিজের না বলা কথাগুলোকে। লেখার উপকরণ ও সংরক্ষণের জন্য তখন ব্যবহার করা হতো কাদামাটির টুকরা, প্যাপিরাস, বাঁশের বই, পাতা এবং কাঠ ছাড়াও পার্চমেন্ট  ও ভেলাম। পরবর্তীকালে এর জায়গা দখল করেছে কাগজ । বর্তমানে তথ্য সংরক্ষণ, ব্যবস্থাপনা ও পুনরুৎপাদনের জন্য মুদ্রিত বইয়ের পাশাপাশি সিডি-রম, ওয়েবপেজ অথবা অন্য যে কোনো ডিজিটাইজড ফরমেট ব্যবহার করা হয়।

তথ্য বিস্ফোরণের এই যুগে তথ্য ও যোগাযোগের অন্যতম একটি মাধ্যম হচ্ছে লাইব্রেরি। যে কোনো ধরনের উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের জন্য তথ্য একটি গুরুত্বপূর্ণ উপকরণ। পরিকল্পনা প্রণয়ন ও সিদ্বান্ত  গ্রহণেও তথ্যের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য।

কম্পিউটার এবং আধুনিক তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির (আইসিটি) উন্নয়নের ফলে প্রয়োজনীয় তথ্যকে তাৎক্ষণিকভাবে হাতের মুঠোয় পাওয়া যাচ্ছে খুব সহজেই। ইন্টারনেট এবং ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব (www) প্রযুক্তির মাধ্যমে এমন সব প্রয়োজনীয় তথ্য পাওয়া সম্ভব, যা একাডেমিক ও গবেষণা কাজে সহায়ক হিসেবে কাজ করে।

লাইব্রেরি বলতে আমরা সাধারণত বুঝি এমন একটি স্থান, যেখানে মুদ্রিত বই, সাময়িকী, বিভিন্ন প্রকার  শ্রবণ-দর্শন (অডিও-ভিস্যুয়াল) সামগ্রীকে নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে সংরক্ষণ করে পাঠকের ব্যবহার-উপযোগী করে রাখা হয়। অপরদিকে ডিজিটাল লাইব্রেরি বলতে বোঝায়, ইলেকট্রনিক মাধ্যমে একত্রে সংগঠিত ইন্টারনেট ও সিডি-রম ডিস্কের সহায়তায় সহজলভ্য উপকরণসমূহের সমষ্টি। অর্থাৎ ইন্টারনেটের মাধ্যমে তথ্যের উৎসসমূহে প্রবেশ ডিজিটাল লাইব্রেরির মূল উপাদান।

ডিজিটাল লাইব্রেরিতে একজন ব্যবহারকারী ইন্টারনেট ব্যবহার করে অতি সহজেই তার প্রয়োজনীয় জার্নাল, প্রবন্ধ, বই, পত্রিকা, ছবি বা ইমেজ, অডিও এবং ভিডিও ফাইল খুঁজে পেতে সক্ষম হয়। কিছু কিছু প্রতিষ্ঠান ও প্রকাশক তাদের সম্প্রতিক  প্রকাশনাসমূহ ইন্টারনেটের মাধ্যমে (ইলেকট্রনিক ফরমেটে) পাঠকদের পড়ার সুযোগ করে দিচ্ছে।

যেমন- গুগল একাউন্ট হোল্ডাররা ই-মেইলের ফ্রন্ট পেজ থেকে গুগল লাইব্রেরিতে প্রবেশ করে মিলিয়ন মিলিয়ন বইয়ের রাজ্যে হারিয়ে যেতে পারেন, যা কখনো একটি সাধারণ লাইব্রেরীতে সম্ভব নয়। একাউন্টধারী যে কেউ এ লাইব্রেরির সদস্য হতে পারে। অ্যাড্রেসবারে গিয়ে http:/books.google.com/ সার্চ দিয়ে ডুবে যেতে পারেন জ্ঞানসমুদ্রের গভীর তলদেশে। কী নেই সেখানে? ফিকশন, নন-ফিকশন আর সাম্প্রতিক সময়ের নানা দিক দিয়ে সাজানো হয়েছে বিশ্ববিখ্যাত সব বইয়ের পসরা। অথবা পাঠক যদি সার্চ বারে গিয়ে তার প্রয়োজনীয় বইয়ের নাম লিখে দেন তাহলে মুহূর্তেই এর প্রচ্ছদপট ভেসে উঠবে কমপিউটার স্ক্রিনে। বই রাখার জন্য গুগল তার গ্রহকদের জন্য একটি আলাদা লাইব্রেরি রুমের ব্যবস্থাও করে দিয়েছে। বইয়ের নিচে Add to my library ক্লিক করলেই বিশ্বের যে কোনো প্রান্ত থেকে যখন খুশি তা ব্যবহার করা যাবে বিনামূল্যে। তবে কপিরাইট আইন অনুযায়ী তা ডাউনলোড করা যাবে না। কিন্তু কারো যদি কোনো কিছু ডাউনলোড করার প্রয়োজন হয় তাতেও কোনো অসুবিধা নেই।  http:/www.scribd.com/people/documents এবং http:/www.esnips.com/ এক্ষেত্রে হতে পারে সাইট আইকন। যে কোনো বিষয়ের ওপর যে কোনো ধরনের বই পাওয়া যাবে এখানে। যত ইচ্ছে ডাউনলোড করে বন্ধুদের সাথে অথবা সহকর্মীদের সাথে শেয়ার করা যাবে নতুন নতুন সব তথ্য। এতে করে বই পড়ার পাশাপাশি জ্ঞান অর্জনের দিক থেকেও নিজেকে আপটুডেট  রাখা সম্ভব।

ডিজিটাল লাইব্রেরিতে তথ্য সংগ্রহ, প্রক্রিয়াজাতকরণ, সংরক্ষণ এবং বিতরণ করা হয়  ডিজিটাল ডিভাইস এবং নেটওয়ার্কের মাধ্যমে, ইলেকট্রিক ফরমেটে। এখানে তথ্য বিতরণ বা সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে যেসব উপাদান ব্যবহার হয় তা হলো টেলিফোন, টেলেক্স, ফ্যাক্স, ই-ফ্যাক্স, সিডি-রম, স্ক্যানার, ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব (www) এবং ইন্টারনেট।

ডিজিটাল লাইব্রেরি কোনো জায়গার অপচয় করে না। কারণ সবটাই থাকে অনলাইনে। অন্যদিকে তথ্য আদান-প্রদানের ক্ষেত্রে দূরবর্তী ব্যবহারকারীদেরও সুযোগ দেয়। অর্থাৎ তথ্য প্রাপ্তি ও প্রদানের ক্ষেত্রে ভৌগোলিক সীমারেখা কোনো বাধার সৃষ্টি কওে না। এর মাধ্যমে প্রাপ্ত সুবিধা ভোগ করে একজন পাঠক বা গবেষক তার নিজস্ব সংগ্রহ গড়ে তুলতে পারেন খুব সহজেই। এখানে প্রয়োজনীয় তথ্য পেতে প্রবেশাধিকারের সুবিধা যেমন রয়েছে, তেমনি একই তথ্য একই সময়ে অনেকজন পেতে পারেন। এই বিশাল তথ্যভা-ার থেকে ব্যবহার উপযোগী তথ্য সংগ্রহ গড়ে তোলা সম্ভব এবং বহু ভাষার শিক্ষা উপকরণ পরিচালনা করা সম্ভব।

ডিজিটাল লাইব্রেরি ব্যবহারের মাধ্যমে পাঠক বেশ কিছু সুবিধা ভোগ করতে পারেন, সেগুলো হলো :

  • অনলাইনের মাধ্যমে বই ও জার্নাল সাবস্ক্রিপশন করার সুবিধা;
  • অনলাইনের সাহায্যে বই বা জার্নালসমূহে প্রবেশাধিকারের সুবিধা;
  • ওয়েব সাইট এবং ডাটাবেইস হ্যান্ডলিং;
  • ইলেকট্রিক্যালি যে কোনো ডকুমেন্ট বিতরণ করা সম্ভব;
  • প্রকাশকদের কাছ থেকে ই-মেইলের মাধ্যমে প্রকাশনাবিষয়ক আগাম সংবাদ পাওয়ার সুবিধা;
  • প্রচলিত লাইব্রেরির তুলনায় ডিজিটাল লাইব্রেরিতে ইন্টারনেটের মাধ্যমে লাইব্রেরি সার্ভিস খরচ তুলনামূলকভাবে অনেক কম হয়। তাই লাইব্রেরি সংগ্রহ বৃদ্ধি করা সহজ;
  • লাইব্রেরি ক্যাটালগসমূহ অনলাইনে অনুসন্ধান করার সুবিধা;
  • প্রিন্ট মাধ্যম ছাড়াও লাইব্রেরিতে সিডি-রমের সংগ্রহ, গ্রাফিক ভিডিও,
  • ভয়েস-বেইসড মাল্টিমিডিয়া প্রভৃতির সংগ্রহ বৃদ্ধি করা;  এবং
  • ইন্টারনেটের মাধ্যমে রিসোর্স শেয়ার করা সহজ হয় ।

একটি গণতান্ত্রিক সমাজ তথ্যসমৃদ্ধ ও শিক্ষিত নাগরিকদের ওপর বহুলাংশে নির্ভরশীল । অপরদিকে তথ্যসমৃদ্ধ ও শিক্ষিত মানুষ গড়ে তুলতে লাইব্রেরির কোনো বিকল্প নেই। বৈশ্বিক নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে হলে এখনই সময় আমাদের শিশুদের কাছে বিশ্ব দেখার জানালাটা খুলে দেওয়ার। এজন্য প্রয়োজন অ-প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে লাইব্রেরিকে আরো আধুনিক, আকর্ষণীয় ও তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর করে শিশুদের লাইব্রেরিমুখী করে তোলা।

বাংলাদেশ সময় ১৬৫০, জুন ১৬, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।