সকাল থেকেই থেমে থেমে বৃষ্টি। কলাবাগান মাঠে গিয়েই দেখা হলো অনুষ্ঠানের আয়োজক তমালের সাথে।
বৃষ্টি দিয়ে দিনের শুরু হলেও ধীরে ধীরে বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আবদুর রউফ পাবলিক কলেজের (প্রাক্তন বাংলাদেশ রাইফেলস স্কুল ও কলেজ) পুনর্মিলনী অনুষ্ঠান প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠেছিল। শুক্রবার ১৭ জুন সকাল ১০টায় কলাবাগান ক্রিড়াচক্র মাঠে অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার কথা থাকলেও বৃষ্টির কারণে কিছুটা বিলম্বিত হয়। ১১টায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শুরু হয়। শুরুতেই স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ মরহুম মিয়া মো: মনিরুজ্জামান স্যারের জন্য ১ মিনিট নিরবতা পালন করা হয়। এরপর উদ্বোধনী অংশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিশিষ্ট চলচ্চিত্র নির্মাতা মোরশেদুল ইসলাম বলেন, প্রতিটি মানুষের জীবনের সেরা সময় তার স্কুল জীবন। আজ একদিনের জন্য হলেও সেই জীবন তোমরা সবাই ফিরে পাবে। এটাই তো অনেক বড় পাওয়া।
উদ্বোধনী পর্ব শেষ হলে শুরু হয় স্মৃতিকথা। ১৯৮৬ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত প্রতিটি ব্যাচের শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে একজন এসে স্কুল জীবনের নানান মজার ঘটনা বলা শুরু করে। সবার মধ্যে একটিই আক্ষেপ ছিল, ‘যদি নিজ স্কুল প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠানটি হতো তাহলে আরও ভালো লাগতো। ’ তবে অনুষ্ঠানের সবচাইতে মজার বিষয় ছিল, উপস্থাপক হঠাৎ বলে উঠলো, আমরা স্কুলে প্রতিদিন শপথ বাক্য পাঠ করতাম। আজ সব কিছুর শুরুতে শপথ হবে। সাথে সাথে সবাই দাড়িয়ে গেলো। হাত উচিয়ে শপথ বাক্য পাঠ করতে থাকলো।
একদম প্রথম ব্যাচের ছাত্র মিলন বর্তমানে সক্রিয়ভাবে রাজনীতিতে জড়িত। তার সাথে কথা বলার এক পর্যায়ে বলেন, ‘আমরাও তো চাই স্কুল প্রাঙ্গনে অনুষ্ঠান করতে। কিন্তু বাস্তবতাটা হলো, বিডিয়ার বিদ্রোহের কারণে পিলখানা এখন নিরাপত্তার ভেতর থাকে। সেখানে অনুষ্ঠানের অনুমতি দেয়নি কর্তৃপক্ষ।
আরেক প্রাক্তন ছাত্র রুবেল বলছিল, ‘জানেন এমনও বন্ধু খুঁজে পেলাম যার সাথে দীর্ঘ ১০ বছর পর দেখা হলো। এই আবেগ ধরে রাখতে পারছি না। এভাবেই পুনর্মিলনী স্থল ভরে ওঠে উচ্ছাস ও আবেগে। ’
বন্ধু বন্ধুকে জড়িয়ে ধরছে। শিক্ষক তার শিক্ষার্থীদের জড়িয়ে ধরছেন। কেউ কেউ পায়ে ধরে সালাম করছে। এমন দৃশ্য একমাত্র পুনর্মিলনীতেই সম্ভব।
স্কুলের পক্ষ থেকে অন্যতম উদ্যোক্তা বাংলার প্রভাষক আকমল হোসেন বললেন, অক্টোবর থেকে শুরু করে জানুয়ারি পর্যন্ত আমরা চেষ্টা করেছি স্কুল প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠানটি আয়োজন করার। কিন্তু সম্ভব হয়নি। তাই কলাবাগান মাঠকেই বেছে নেয়া হয়েছে। তারপর প্রাক্তন কিছু শিক্ষার্থীদের অক্লান্ত পরিশ্রমের পর আজকের এই আয়োজন আমাকে মুগ্ধ করলো।
অনুষ্ঠানে থেমে থেমে হয়েছে নাচ, গান, স্মৃতিকথা। আর পুরাণ বন্ধুদের পেয়ে আড্ডা তো ছিলই। গোল হয়ে বসে অনেককে দলবেঁধে গানও গাইতে দেখা যাচ্ছিল। তারা বলছিল, ‘এতোদিন পর মনে হচ্ছে আবার স্কুল জীবনটা ফিরে পেয়েছি। আজ কোনো স্মৃতি নেই। সব কিছুই জীবন্ত মনে হচ্ছে। ’
অনুষ্ঠান শেষ অংশে ব্যান্ডদলগুলো মাতাতে থাকে। জনপ্রিয় ব্যান্ডদল মহাকাল এবং যাত্রীর তপু মাতিয়ে দেয় পুরো অনুষ্ঠান স্থল।
এভাবেই আবেগ উচ্ছাসের মধ্য দিয়া পুনর্মিলনীর সমাপ্তি টানা হয়। সমস্ত শিক্ষার্থীরা প্রতি বছর এমন আয়োজনের জন্য স্কুলের সব শিক্ষকদের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন।
উল্লেখ্য, বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আবদুর রউফ পাবলিক কলেজের পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানের অনলাইন মিডিয়া পার্টনার হিসেবে সহযোগিতা করেছে বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম।
বাংলাদেশ সময়: ২৩৫০ ঘন্টা, জুন ১৭, ২০১১