এমন কেউ কি আছে যে কৈশোর বয়সে একদিনের জন্যও তিন গোয়েন্দার রবিন বা মুসা হতে চায়নি! কিংবা অনেকে তো ‘দীপু নম্বর টু’ পড়ার পর দীপুও হতে চেয়েছে। আবার একটু বয়স হলেই সপ্তপদীর কৃষ্ণেন্দুর প্রেমে পড়ে গেছে।
এভাবেই সাহিত্য প্রেমিকদের কাছে জীবন্ত হয়ে উঠে অক্ষরে আঁকা চরিত্রগুলো। চরিত্রগুলো আঁকেন লেখক কিন্তু তাতে প্রাণ দেয় পাঠক নিজেই। নিজের মতো করে তারা চরিত্রগুলোকে সাজান আপন ভূবনে।
কিন্তু বাংলাদেশে পাঠক সংখ্যা নাকি অনেক কম! বহুবার বহুজনে তত্ত্ব দিয়ে বলেছেন, বাংলাদেশে পাঠক নেই।
যদিও বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে পৌছালে বোঝার উপায় নেই যে পাঠক নেই। বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের একজন স্বেচ্ছাসেবক সজিব বলছিল, ‘স্কুল কলেজের বই দেখতে দেখতে যখন চোখ ঘোলা হয়ে যায় ঠিক তখন মনে প্রাণ দেয় বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের বইগুলো’।
সত্যিই কি তাই?
সজিব আরো বলে, ‘স্বস্তির প্রাণখোলা শ্বাস নেয়া যায় বইগুলো পড়ে’।
আর এই প্রাণখোলা শ্বাস এবং আরো নির্মোল জ্ঞানের আলো জ্বালাবার জন্য অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ স্যার প্রতিষ্ঠা করেন বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র। ১৯৮৪ সাল থেকে বিভিন্ন কলেজের শত-শত শিক্ষার্থীর হাতে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র পৌছে দেয় দেশ-বিদেশের নামকরা বইগুলো। স্কুল কিংবা কলেজ বয়সকে বলা কাঁচা বয়স। তাই বেড়ে ওঠার ঐ কাঁচা বয়সে শক্ত ভিত্তি গড়ে তোলার জন্য এর চেয়ে বড় মাধ্যম আর কি হতে পারে?
সায়ীদ স্যারের তত্ত্বাবধানে একে একে কেটে গেছে এই কলেজ কর্মসূচির ২৬টি বছর।
প্রকৃতির মনোরম পরিবেশে দাঁড়িয়ে থাকা বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র এখন আকাশছোঁয়া অট্টালিকা হয়ে বেড়ে উঠছে। তবে কিছু বিষয় রয়ে গেছে আগের মতো অটুট। আছে ২৬ বছরের ২৫ টি ব্যাচের সদস্য। বাংলাদেশের নানা জায়গায় ছড়িয়ে আছে তারা।
গতবছর হয়ে গেছে কলেজ কমসূচির পুনর্মিলনী। সেখান থেকে আবার কাছে এলো ব্যস্ততায় দূরে চলে যাওয়া একদল মানুষ। একদল মানুষ না বলে বলতে হয় একদল পাঠক।
এই পাঠকদের ধরে রাখার জন্য তাই আবারও আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ স্যার এবং বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের পৃষ্ঠ-পোষকতায় ‘বিসাকে কলেজ কর্মসূচির’ প্রাক্তণ সদস্যরা এবার পরিচালনা করছে এক অনন্য পাঠচক্র। যার হাল ধরে আছেন প্রাক্তন সদস্যরাই।
এই কর্মসূচীতে স্যারের বাছাইকৃত বিভিন্ন বই নিয়ে হয় আলোচনা। যেই আলোচনায় থাকছেন কখনও স্যার নিজে, কখনও গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় পররাষ্ট্র সচিব মিজারুল কায়েস, কখনও বিশিষ্ট নাট্য ব্যক্তিত্ব খায়রুল আলম সবুজ।
প্রতি মাসের শেষ শুক্রবার বইপড়ার জন্য উজাড় করা হয়। পুষ্পিতা বলে, ব্যস্তার মধ্যেও একটি দিন বইপড়ার জন্য উৎসর্গ করতে তো আপত্তি নেই।
এই পাঠচক্রে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের পুতুল নাচের ইতিকথা, হেনরিক ইবসেন-এর নোরা, রবীন্দ্র রচনাবলীসহ আরো কিছু বই নিয়ে আলোচনা হয়ে গেছে। তালিকায় আছে আরো এমন অনেক বই যা পাঠকের মনকে বারবার নাড়া দেবে।
কলেজ কর্মসূচির যে কোনো সদস্য হতে পারেন এই পাঠচক্রের সক্রিয় পাঠক। কেউ যদি কলেজ কর্মসূচির সদস্য নাও হন তবুও আসতে তো মানা নেই। পড়ার জন্য শর্ত নেই।
পাঠচক্রের সদস্যদের সক্রিয় রাখতে প্রতি-মাসে নির্দিষ্ট সময় পৌছে যাবে মুঠোফোনে এসএমএস। শুধু তাই নয়, ফেসবুকের ‘বিএসকে কলেজ কর্মসূচী’-র গ্রুপটিও সব সময় চাঙ্গা থাকে।
এই অভূতপুর্ব কর্মসূচির মতো আরো কয়েকটি পদক্ষেপ নিলে ‘পাঠকের মৃত্যু’ হবে না। বরং প্রতিনিয়ত নব নব রূপে পুনর্জন্ম হবে পাঠকের।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৪৫ ঘন্টা, জুন ২১, ২০১১