সাতক্ষীরা: বাঙালি বরাবরই ভোজন রসিক। হোক সে গরম কিংবা শীত মৌসুম।
নানা রকম খাবার তৈরিতে আবহমান বাংলার গ্রামীণ নারীরা সব মৌসুমেই সিদ্ধহস্ত। তবে শীতে যেন তাদের ব্যস্ততা বাড়ে কয়েকগুণ। এই যেমন শীতে পিঠা তৈরির পাশাপাশি গ্রামীণ নারীদের হাতের ছোঁয়ায় তৈরি হয় ডালের বড়ি। তবে আগের মতো আর ব্যাপক হারে নয়। আসলে গ্রামে গ্রামে কমেছে বড়ি তৈরির রেওয়াজ।
মাস কলাইয়ের ডাল (স্থানীয় ভাষায় ঠিকরে কলুর ডাল) ও চাল কুমড়ার সমন্বয়ে তৈরি এই খাদ্যপদটির জন্য নারীদের প্রস্তুতি দেখা যায় শীত মৌসুমের আরও দু’তিন মাস আগে থেকে। বড়ি প্রস্তুতের জন্যই অনেকে বাড়িতে চাল কুমড়ার চারা লাগান। উৎপাদিত চাল কুমড়া সংরক্ষণ করে শীতের কোনো এক সুবিধাজনক সময়ে বাজার থেকে ঠিকরে কলাইয়ের ডাল সংগ্রহ করে গ্রামীণ নারীরা লেগে যান বড়ি প্রস্তুতের কাজে। এ যেন এক উৎসব। তৈরি করা বড়ি সংরক্ষণ করে রাখা যায় বছরজুড়ে। সারা বছরই বিভিন্ন তরকারির সঙ্গে রান্না করে খাওয়া যায় এটি।
এখন শীত মৌসুম। বড়ি তৈরির অন্যতম সময়। সাতক্ষীরা পৌর এলাকার রাজার বাগান গ্রামে বড়ি তৈরি করতে (স্থানীয় ভাষায় বড়ি দেওয়া) দেখা গেলো গৃহবধূ তাহেরা খাতুনকে।
তিনি বাংলানিউজকে জানান, বড়ি দেওয়ার জন্যই বাড়িতে চাল কুমড়ার চারা লাগিয়েছিলেন। তাতে বেশ ফলনও হয়েছে। পরে বাজার থেকে তিন কেজি ঠিকরে কলুর ডাল সংগ্রহ করেন তিনি।
বড়ি দেওয়ার প্রক্রিয়া সম্পর্কে তিনি বলেন, চাল কুমড়া ভালো করে কেচে মিহি করে নিতে হয়। অন্যদিকে ডাল ভিজিয়ে মিহি করে বাটতে হবে। পরে কুমড়া ও ডাল মিশিয়ে খামির তৈরি করতে হবে। এক্ষেত্রে অনুপাত হবে দুই কেজি ঠিকরে কলুর ডাল ও আড়াই কেজি চাল কুমড়া।
কুমড়া ও ডালের খামির হয়ে গেলে শুকনা পরিষ্কার কাপড় রোদে বিছিয়ে বা টাঙিয়ে তার ওপর ছোট্ট ছোট্ট করে বড়ি দিতে হবে (অনেকটা বড়ার মতো আকার করে)। শুকিয়ে মচমচে হয়ে গেলে সংরক্ষণ করে প্রয়োজন মতো রান্না করে খাওয়া সম্ভব যে কোনো সময়।
বড়ি তৈরি সম্পর্কে বৃদ্ধা আমিনা বেগম বাংলানিউজকে বলেন, আগে বাড়ি-বাড়ি বড়ি তৈরির উৎসব হতো। কিন্তু এই যুগে নারীদের মধ্যে সেই উৎসাহ বা আগ্রহ দেখি না। আবার চাল কুমড়া প্রাপ্তিও দুঃসাধ্য। সব মিলিয়ে বড়ি দেওয়ার রেওয়াজ কমে যাচ্ছে। তারপরও গ্রামের বেশ কিছু বাড়িতে এ বছর বড়ি তৈরি করতে দেখা গেছে।
বাংলাদেশ সময়: ০৮১০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৮, ২০১৬
আইএ/এসআই/জেডএম