সৈয়দপুর (নীলফামারী): জন্মগতভাবে শারীরিক প্রতিবন্ধী তিনি। হুইল চেয়ারে করে চলাচল করতে হয় তাকে।
এতোসব প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও থেমে যাননি নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলার ভুট্টু (২৫)। অভিনব উপায়ে পরিশ্রমের মাধ্যমে এখন সংসারের হাল ধরেছেন তিনি। এখন ভুট্টু জীবন-যুদ্ধে জয়ী এক প্রেরণার নাম।
সৈয়দপুর শহরের মুন্সিপাড়ায় এক ভাড়াবাসায় থাকেন ভুট্টু। বাবা-মায়ের মৃত্যু হয়েছে আগেই। তিন ভাই ও এক বোনের মধ্যে দুই ভাই পরিবার নিয়ে আলাদা থাকেন। ভুট্টু বোন ও নানীকে নিয়ে থাকেন ওই ভাড়া বাসায়।
জন্মগতভাবে প্রতিবন্ধী হলেও ভিক্ষার পথ বেছে নেননি তিনি। পরিবারের ভরণ-পোষণের দায়িত্ব কাঁধে আসার পর কিছুদিন এক চানাচুর কারখানায় কাজ করেন। এ আয়ে না চলায় একসময় অভিনব এক উপার্জনের চিন্তা মাথায় আসে তার।
একপর্যায়ে উপজেলা সমাজসেবা থেকে তিনি একটি হুইল চেয়ার পান। এরপর উপজেলা শহরের বিভিন্ন মহাজনদের অনুরোধ করেন সকালে মালামাল নেবেন, আর সন্ধ্যার আগেই টাকা পরিশোধ করবেন এ সুযোগ দেওয়ার। মানবিক বিবেচনায় বড় দোকানিরা ভুট্টুর প্রস্তাবে রাজি হন।
তাদের কাছ থেকে সকালে বাকিতে ডাল ভাজা, চানাচুর, হজমি, চকলেট, ঝুড়ি ভাজা, চিড়া ভাজা, চিপস, ললিপপসহ হরেক রকম মালামাল নেন। সারাদিন হুইল চেয়ারে করে ছোট দোকানিদের চাহিদামতো পণ্য ফেরি করেন তিনি।
এভাবে মালামাল ফেরি করতে ভুট্টু চালু করেন ‘মিসডকল’ ব্যবস্থা। যখনই কোনো দোকানির কিছু প্রয়োজন, তখনই ভুট্টুকে মিসডকল দেওয়া মাত্রই তিনি হাজির। এরপর দোকানিদের চাহিদামাফিক পণ্য দেন ভুট্টু। এভাবেই ভুট্টু এখন এলাকার দোকানিদের হরেক মালামাল পাওয়ার ভরসা হয়ে উঠেছেন।
এছাড়া ভুট্টু প্রতিদিন উপজেলা শহরের বিভিন্ন পাড়া-মহল্লার দোকানে পণ্য ফেরি করেন। এভাবে পণ্য ফেরির মাধ্যমে দৈনিক তার আয় ১৫০-২৫০ টাকা।
ভুট্টুর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এভাবে সংসার চললেও তাকে প্রচণ্ড পরিশ্রম করতে হয়। তার ওপর দোকানিরা বাকি রাখলে তার ব্যবসাতে টান পড়ে। সংসারের এ অবস্থায় বিয়ে নিয়েও আপাতত আগ্রহী নন ভুট্টু।
ভুট্টু চান এভাবে সংগ্রাম করেই প্রতিষ্ঠা পেতে, স্বাবলম্বী হতে। সেইসঙ্গে নিজের এক টুকরো জমির স্বপ্ন দেখেন তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৩১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৮, ২০১৬
এসআর