ঢাকা: রাত পৌনে একটা। সুনসান নীরবতার মধ্যেও কিছু মানুষ জেগে আছে রাজধানীর কমলাপুর রেলস্টেশনে।
স্টেশনে ঘুরতে ঘুরতে হঠাৎ এক কোনে দেওয়ালের পাশে বসে একটা লোক কি যেন খুঁটিয়ে চলছে। কাছে গিয়ে দেখা গেলো প্লাস্টিকের পাইপে ভাঙা কাঁচি দিয়ে ফুটো করছেন তিনি। আঁধ ইঞ্চি প্লাস্টিকের পাইপে ফুটো করে তার একপ্রান্ত পরিত্যক্ত বিভিন্ন কাগজের প্যাকেটের টুকরো দিয়ে বন্ধ করে বাঁশি বানাচ্ছেন তিনি। প্লাস্টিকের পাইপের তৈরি এসব দেখতে বাঁশের বাঁশি মতো।
লোকটির নাম মোহাম্মদ মোশাররফ হোসেন। বাড়ি জামালপুর বাড়ি।
১৯৭৬ সাল থেকে তিনি বাঁশি বানিয়ে আসছেন বলে জানালেন। দিনে ১৫/১৬টি বাঁশি বানান। একেকটি বাঁশি ৩০ টাকা করে বিক্রি করতে পারেন। তবে বাঁশি নিখুঁত হলে দাম বেশি পান।
১৫টি বাঁশি বানালে তার মধ্যে ১০টির মতো ভালো মানের বাঁশি পাওয়া যায়। যার মধ্যে দুই একটি নিঁখুত বাঁশি থাকে।
কথা বলার ফাঁকে সাদা রঙ্গে একটা বাঁশিতে ফুঁ দেন মোশাররফ। চমৎকার সুর ওঠে বাঁশিতে। স্টেশনের ঘুমন্ত মানুষগুলোতে জেগে ওঠার ভয়ে নিচু স্বরে কিছুক্ষণ বাঁশি বাজান তিনি।
মোশাররফ হোসেন বলেন, সব বাঁশিতে সুর ওঠে না। কিছু বাঁশি খুবই ভালো, কিছু হয় মোটামুটি মানের।
সংসার জীবনে দুটি বিয়ে করেছেন মোশাররফ হোসেন। প্রথম স্ত্রী মৃগী রোগে মারা গেছেন। আর দ্বিতীয় স্ত্রী তাকে রেখে চলে গেছেন। এখন তার সংসার বলতে দুই ছেলে, এক মেয়ে।
কথাবার্তায় মনে হলো সংসারে খুব একটা মন নেই তার। ছেলে-মেয়েরা নিজের মতো চলেন। তাদের কাছে মাঝে মধ্যে যান তিনি। নিয়মিত ভাবে খোঁজ খবরও নেন না।
শুদ্ধ বাংলায় সাবলীলভাবে কথা বললেও তাতে এলোমেলো ভাব। গায়ে ময়লা কাপড়, উশকো খুশকো চুল।
তার জীবনটা এখন ফুটপাতে বন্দি। যেখানে সেখানে ঘুরে বেড়ানো, কখনো বাঁশি বানানো, কখনো বা ফুটপাতে ঘুমিয়ে সময় পার হয় তার। রাতের গভীরতা তার চোখে ঘুম আনতে পারে না।
দিনে গড়ে দুই তিন ঘণ্টা ঘুমান বলে জানান তিনি। এই বাঁশি বানানো ও বিক্রি ছাড়া অন্য কাজ ভালো লাগে না তার।
বাঁশিতে হৃদয়কাড়া সুর ওঠিয়ে নিজের মনের সঙ্গে অন্যদের মনেও ভিন্ন আবেশ ছড়িয়ে দেয়াই যেন তার জীবনের সব আনন্দ।
বাংলাদেশ সময়: ০৫২১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩১, ২০১৬
এমইউএম/আরআই