একটি বাংলা উপন্যাসের এক চরিত্রের অদ্ভূত স্বভাব- নিজের ইচ্ছা পালনে লোকজনকে বাধ্য করতে যেখানে সেখানে প্রস্রাব করে দেওয়ার ভয় দেখানো। এজন্য সে নিজেই নিজকে ‘মুতা মিয়া’ (প্রস্রাবের সমার্থক শব্দ মূত্র থেকে মুতা) নামে পরিচতি করায়।
ট্যাঙ্কের পাশে লাগানো ক্লোজ সার্কিট টেলিভিশন (সিসিটিভি) ক্যামেরায় এ দৃশ্য দেখে শহরের ওয়াটার ব্যুরো পুরো ৮০ লাখ গ্যালন পানিই নর্দমায় ঢেলে দিয়েছেন।
নিজের বালখিল্য আচরণের পক্ষে সাফাই গেয়ে জোশ সিটার নামে একুশ বছর বয়সী ওই ‘খোকা’ অবশ্য জানিয়েছেন- এ ট্যাঙ্ক থেকে তার নিজের ঘরেও পানি যায়। আর তিনি ভেবেছিলেন এটি একটি তরল ময়লা শোধনাগার।
জোশ আরও বলেন, আমি বন্ধুদের সঙ্গে ছিলাম। সিউয়েজ ট্রিটমেন্ট প্লান্ট মনে করে আমি সেখানে কাজটি করি এবং এরপর সঙ্গে সঙ্গে অনুতপ্ত হই। তবে ইতোমধ্যে সিকিউরিটির লোকজন চলে এসেছিল। আমি বুঝতে পেরেছি যে এটা ভুল করেছি।
তবে পোর্টল্যান্ড শহরের জনস্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তাদের মতে, শুধুমাত্র ওইটুকুন ‘মুতু’র কারণে ৮০ লাখ গ্যালন পানি দুষিত হওয়ার কোনও কারণ নেই।
এ বিষয়টিকে সামনে রেখে ওই শহরে বিস্তর আলোচনা-সমালোচনা চলছে। অনেকেই জনস্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের বক্তব্যের সমর্থনে বলছেন- ওই ট্যাঙ্কের পানিতে এমনিতেই কত ধরনের কীট-পতঙ্গ আর হাঁস সারাক্ষণ সাঁতার কাটছে। এদের মধ্যে অনেকেই মারা যাওয়ার পর ওই পানিতেই পচে-গলে মিশে যাচ্ছে। কই, তাতে তো তেমন কোনও মহামারী লেগে যাচ্ছে না শহরে! এমনকি এ পানি খেয়ে কেউ অসুস্থও হচ্ছে না! বছরে দু’বার ওই রিজার্ভয়ারটি পরিষ্কার করার সময়ে যেসব বস্ত পাওয়া যায় সেগুলো হচ্ছে- ফেলে দেওয়া বিভিন্ন পণ্যের কৌটা, কুকুর বেড়ালের বর্জ্য ভরা প্লাস্টিক ব্যাগ আর হাঁসের মৃতদেহ।
তবে জনগণের সমালোচনার জবাবে শহরের কমিশনার ও ওয়াটার ব্যুরো প্রধান রেন্ডি লিয়োনার্ডের ব্যাখ্যা হচ্ছে- ট্যাঙ্কে প্রস্রাব করনেওয়ালা যুবক এইড্স বা অন্য কোনও ভয়াবহ রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকতে পারে। আর প্রস্রাব করা ছাড়াও সে পানিতে আরও কিছু একটা ছুড়ে ফেলেছে যা ক্যামেরায় ঠিকমত ধরা পড়েনি।
ওয়াটার ব্যুরোর প্রশাসক ডেভিড শ্যাফ বলেন, ‘কেউ’ই প্রস্রাব পান করতে চায় না। আর আমি এ ধরনের শত শত লোককে মোকাবেলা করতে মোটেই ইচ্ছুক নই যারা অসন্তুষ্ট হবেন এ কারণে যে - আমি তাদের পানির সঙ্গে মিশিয়ে প্রস্রাব পরিবেশন করছি। ’
ওই পানি ড্রেনে ফেলে দিতে ৮ হাজার ডলার খরচ হয়েছে। এ অর্থ ওই ৮০ লাখ গ্যালন পানি নতুন করে পরিশোধনের খরচের চেয়েও কম। আর যে পানি ফেলে দেওয়া হয়েছে তা’র মূল্য ২০ হাজার ডলার। অর্থাৎ ওয়াটার ব্যুরোকে ধাঁড়ি খোকা জোশ সিটার সাহেবের অপরিনামদর্শীতার কারণে গচ্চা দিতে হয়েছে মোট ২৮ হাজার ডলার।
আহ্সান কবীর
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
বাংলাদেশ সময়: ১৮৫৭ ঘণ্টা, ২৫ জুন, ২০১১