ঢাকা, শনিবার, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ১৭ মে ২০২৫, ১৯ জিলকদ ১৪৪৬

ফিচার

চলনবিলে নৌকাস্কুলে লেখাপড়া

স্বপন দাস, জেলা প্রতিনিধি | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯:৫৮, জুন ৩০, ২০১১
চলনবিলে নৌকাস্কুলে লেখাপড়া

নাটোর: শিক্ষার্থীদের স্কুলে যেতে হয় না। স্কুলই আসে বাড়ি বাড়ি।

পানি বেষ্টিত চলনবিলের ছেলেমেয়েরা এখন লেখাপড়ার সুযোগ পাচ্ছে। সুবিধা বঞ্চিত শিশুদের শিক্ষাসেবা পৌঁছে দিচ্ছে নৌকাস্কুল। ৫০ টি স্থানে নৌকাস্কুলের মাধ্যমে পাঠদান করা হয়।

নৌকাস্কুল সৌরশক্তি ব্যবহার করে বিশেষ নকশায় তৈরি। দেশের বৃহৎ চলনবিল এলাকায় বর্ষা মৌসুমে শিশুদের শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে এই নৌকাস্কুলের মাধ্যমে। নৌকায় পাঠ দান ছাড়াও পাঠাগার, কমপিউটার, কৃষি প্রশিক্ষণ ও ইন্টারনেট সুবিধা পাচ্ছে নদী নির্ভর দুর্গম জনপদের দরিদ্র গ্রামবাসী।

নদী কোলে বেড়ে ওঠা চলনবিলের  সিধুলাই গ্রামের সন্তান প্রকৌশলী আবু হাসনাত মোহাম্মদ রেজোয়ান নৌকাস্কুল চালু করেন।

তিনি জানান, বর্ষায় চলনবিল প্লাবিত হয়ে যোগাযোগ ব্যবস্থা বিছিন্ন হয়ে যায়। স্কুলে যেতে পারে না শিক্ষার্থীরা। তখন নৌকাই একমাত্র বাহন।

নৌকাস্কুল বিল এলাকার অবহেলিত শিশুদের মাঝে শিক্ষা আলো পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রে একটি মডেল হতে পারে বলে জানান তিনি।
 
সিধুলাই স্বনির্ভর সংস্থার  ম্যানেজার প্রকৌশলী সুপ্রকাশ সরকার বাংলানিউজকে জানান, ২০০২ সাল থেকে নৌকাস্কুল পরিচালিত হচ্ছে। নৌকায় লাইব্রেরি, কৃষি প্রশিক্ষণ, সোলার সার্ভিস, স্বাস্থ্য সেবাসহ নানা ধরনের কর্মকান্ড পরিচালনা করা হয়। নৌকায় সৌর বিদ্যুতে কম্পিউটার চলে। অতিরিক্ত বিদ্যুৎ হারিকেনে চার্জ করা হয়।

নৌকা স্কুলের প্রথম শ্রেণীর ছাত্রী শান্তা খাতুন বাংলানিউজকে বলেন, ‘এখানে কমপিউটার আছে। আমি এখন কমপিউটার শিখেছি। ’

স্কুলের শিক্ষিকা মিনারা খাতুন বলেন, ‘আমি নৌকা স্কুলে শিক্ষকতা করি। পড়াতে বেশ ভালোই লাগে। সৌর বিদ্যুতের সাহায্যে পরিচালিত কমপিউটারে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করি। ’

পাঠ্য বইয়ের পাশাপাশি পরিবেশ, মাছ, পাখি, ফুল, ফল, নদীর পানি দুষণ ও প্রকৃতি সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের ধারণা দেওয়া হয় বলে জানান তিনি।
 
কলেজ ছাত্র সোহেল রানা বলেন, ‘আমি নৌ গ্রন্থাগারের সদস্য। এখানে লাব্রেরিতে বই পড়ি, কম্পিউটার শিখেছি। ’

কলেজ ছাত্রী শ্যামলী বলেন, ‘ইন্টারনেটের মাধ্যমে খবর, পড়াশুনা ও জাতীয় বিষয়ে জানতে পারি। ’

অভিভাবক লিপি খাতুন বাংলানিউজকে বলেন, ‘ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা দূরের স্কুলে যেতে পারে না। বর্ষার সময় দুর্গম চলনবিলের অনেক স্কুল পানিতে ডুবে যায়। স্কুল বন্ধ থাকে। তাই নৌকা স্কুলে পড়তে দিয়েছি। ’

তথ্য কর্মকর্তা আব্দুস সামাদ প্রধান জানান, নৌকাস্কুলে বিভিন্ন সেবা দেওয়া হয়। নৌগ্রন্থাগারে দেড় হাজার বই আছে। কমপিউটারর শেখার সুযোগ আছে। ইন্টারনেটে পত্রিকা পড়ার সুযোগ আছে। নারীরা কৃষি প্রশিক্ষণের মাধ্যমে উপকৃত হচ্ছে।

চলনবিলের বাসিন্দা সংসদ সদস্য অধ্যাপক আব্দুর কুদ্দুস বাংলানিউজকে বলেন, ‘বিশাল চলনবিলের অনেক গ্রাম এখনও বিদ্যুৎ পৌঁছেনি। ভালো যোগাযোগ ব্যবস্থাও নেই। অধিকাংশ লোক দিনমজুর কৃষি শ্রমিক, অশিক্ষিত। নৌকাস্কুলের মাধ্যমে এখান শিশুরা লেখাপড়া করার সুযোগ পাচ্ছে। ’

নৌকাস্কুলের জন্য ১৫ টি আন্তর্জাতিক পুরস্কার পেয়েছেন রেজোয়ান। পুরস্কারের টাকা দিয়ে বিনামূলে নৌকাস্কুলের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৪৫ ঘণ্টা, জুন ৩০, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।