পৃথিবীর সব দেশেই কাছে থেকে বন্যপ্রাণী দশর্নের অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য চিড়িয়াখানা রয়েছে। এসব চিড়িয়াখানা সাধারণত দর্শনার্থীদের জন্য খোলা থাকে দিনের বেলায় এবং রাত নামার সঙ্গে সঙ্গে সবগুলো চিড়িয়াখানার প্রবেশ পথ বন্ধ করে দেওয়া হয়।
দর্শনার্থীদের জন্য রাতের বেলায় চিড়িয়াখানা বন্ধ রাখার কারণ হিসেবে কর্তৃপক্ষের যুক্তি হলো- সব বন্যপ্রাণীই অন্ধকারে কম বেশি ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠে। নানা রকম বন্য বিশেষ করে ভীতিকর অদ্ভূত ডাক, দৌড়ঝাঁপ দেওয়াসহ এরা সুযোগ পেলেই অন্যদের আক্রমণ করে বসে। এর ফলে মুহূর্তেই ঘটিয়ে ফেলতে পারে বিভৎস ঘটনা।
এসব কারণ বিবেচনা করে দর্শনার্থীদের জন্য রাতে বিশ্বের অন্যসব চিড়িয়াখানা বন্ধ রাখা হলেও বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এর বিপরীত ঘটনাও ঘটে। এখানে দিনের সূর্য অস্ত যাবার পর আঁধার নামার সঙ্গে সঙ্গে দর্শনার্থীদের জন্য খুলে দেওয়া হয় চিড়িয়াখানার প্রবেশ দ্বার। এসময়টায় খাঁচাবন্দি ভয়ঙ্কর সব জন্তু-জানোয়ার খাঁচার দরজায় আঘাত করতে থাকে জান্তব উম্মত্ততায়- চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ চায় ঠিক এমন সব দৃশ্যই সরাসরি চাক্ষুষ করে শিহরিত আর রোমাঞ্চিত হয়ে উঠুন দর্শনার্থীরা।
আর প্রকৃতিগতভাবে মানুষ তো শিহরণ-রোমাঞ্চের বনেদী ভক্ত। চিড়িয়াখানাওয়ালারা এ বাস্তবতাকে কাজে লাগিয়েই চালিয়ে যাচ্ছে শিহরণ আর রোমাঞ্চ বিতরণের বিচিত্র এ বাণিজ্য।
যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, আরব আমিরাত, সিঙ্গাপুরসহ দুনিয়ার উন্নত দেশগুলোতে এ ধরনের বিনোদন কেন্দ্রের ছড়াছড়ি দেখতে পাওয়া যায় আজকাল। তবে, এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ফিলাডেলফিয়ার চিড়িয়াখানাগুলো অন্যতম।
দেখা গেছে, ফিলাডেলফিয়া থেকে ডেনভার পর্যন্ত আমেরিকার সুপরিচিত চিড়িয়াখানাগুলোয় সূর্য ডোবার পর যখন চাঁদ ওঠে তখন থেকে দর্শকরা সারা রাত সেসব চিড়িয়াখানা পরিদর্শন করেন। এসব চিড়িয়াখানায় আজকাল সাধারণ নিরীহ প্রাণী থেকে ভয়াল দর্শন খুনে স্বভাবের মাংসাশী প্রাণীও খোলামেলা ছাড়া থাকে। দর্শক সেখানে নিরাপদ খাঁচায় বা গাড়িতে চড়ে ঘুরে বেড়িয়ে দেখেন ‘বন্যেরা বনে সুন্দর’দের ভয়ংকর-সুন্দর নিশিজগৎ।
রাতে চিড়িয়খানা দর্শন বিষয়ে ১৩শ’র অধিক বন্যপ্রাণীর নিরাপদ আবাস ‘ফিলাডেলফিয়া জ্যু’ কর্তা জেনিফার ল্যাবোজ বলেন, ‘চিড়িয়াখানাকে নিজের মতো করে দেখতে রাতের কোনও বিকল্প নেই। দর্শকদের জন্য এটি সত্যিই এক অনন্য অভিজ্ঞতা!’
ফিলাডেলফিয়া জু’র রাতের প্রোগ্রামগুলোর মধ্যে ‘রোয়ারস অ্যান্ড ¯েœায়ারস’ প্রোগ্রামটি চলছে প্রায় ২০ বছর ধরে। তবে শিশুদের জন্য পরিচালিত এখানকার সবচেয়ে জনপ্রিয় প্রোগ্রাম হলো ‘নাইট ফ্লাইট ওভারনাইট’। এ প্রোগ্রামে অংশ নেওয়া ৫ থেকে ১২ বছর বয়েসি শিশুরা ভয়-রোমাঞ্চ আর আনন্দের নাগর দোলায় দুলতে দুলতে চিড়িয়াখানার জু’স ট্রি হাউস-এ ঘুমিয়ে পড়ে এবং সারা রাত ঘুমের ভেতরে এক ধরনের স্বপ্নময় ভীতি ও উত্তেজনার ঘোরে সময় কাটে তাদের। কেউ কেউ ঘুমের ঘোরেও অদ্ভূত আর বিচিত্র সব শব্দ শোনার বিরল অভিজ্ঞতা অর্জন করে।
‘নাইট ফ্লাইট ওভারনাইট’ নামের এ প্রোগ্রামে অবশ্য চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ শিশুদের মধ্যরাতে ঘুম থেকে জাগিয়ে ¯œ্যাকস এবং ভোরে ব্রেকফাস্ট সরবরাহ করে থাকে।
ডেনভার জু’র ট্রেসি পিটারসন যিনি ১৯৯৮ থেকে ‘বিস্ট প্রোগ্রাম’ নামে রাতে চিড়িয়াখানা দর্শনের একটি প্রোগ্রাম পরিচালনা করে আসছেন তিনি বলেন- ‘অযাচিত কোলাহলমুক্ত পরিবেশে রাতের বেলায় চিড়িয়াখানার পশুপাখিদের দেখতে পাওয়ার সুযোগ সত্যি অন্যরকম। ’ ৪ হাজারের অধিক বিচিত্র পশুপাখির আবাসস্থল এ চিড়িয়াখানায় বছরে ১৮ লাখেরও বেশি দর্শনার্থী পদধূলি দেন।
ডেনভার জু’র সারা রাতের বিস্ট প্রোগ্রামে অংশ নিতে চাইলে জনপ্রতি খরচ পড়বে ৪৫ থেকে ৬৫ ডলার আর ফিলাডেলফিয়া জু’র রোয়ারস অ্যান্ড স্নোয়ারস প্রোগ্রামে এ বাবদে গুণতে হবে জনপ্রতি ৬০ডলার মাত্র।
সাধে কী আর দুনিয়ার মানুষ আমেরিকানদের বলে সবচেয়ে ‘হাস্যকার জাতি’!
আসাদুল হক খোকন, বাংলানিউজ পাঠক
বাংলাদেশ সময়: ১৬৫৬ ঘণ্টা, ০৩ জুলাই, ২০১১