অ্যাডভেঞ্চার ব্যাপারটা বাংলাদেশে এখনো অনেকটাই পুরুষালি বিষয়। সেখানেও আমরা এখনো অনেকটাই পিছিয়ে।
৩ জুলাই ২০১১ হয়তো অনেকের জন্যই শুধু একটা তারিখ। কিন্তু ওয়াসফিয়ার কাছে দিনটা বিশেষ কিছু। এই দিনে তিনি সাত মহাদেশের সর্বোচ্চ সাতটি পর্বতশৃঙ্গ জয়ের নতুন মিশন শুরু করেছেন। স্বাধীনতার চল্লিশতম বছরকে বিশেষভাবে উদযাপন করতে অসীমের সাহসকে বুকে ধারণ করে লালসবুজ পতাকা মাথায় নিয়ে সুউচ্চ শৃঙ্গ থেকে শৃঙ্গে তার এই ছুটে চলার তৃষ্ণা। তার এই নতুন মিশনের পথ চলা শুরু হবে ইউরোপের জর্জিয়ায় অবস্থিত মাউন্ট অ্যালব্রাস থেকে।
জর্জিয়া রওনা হওয়ার আগে ২ জুলাই রাতে বাংলানিউজের সাথে আলাপকালে ওয়াসফিয়া বলেন, ‘আজ রাতে আমি ইউরোপের জর্জিয়ার উদ্দেশে রওয়ানা দিচ্ছি। আগামী ৩ জুলাই আমি মাউন্ট আলব্রাস (৫৬৪২ মিটার) আরোহণ শুরু করব। আশা করি ১৫ দিনের মধ্যে আমার মিশন শেষ করতে পারব। ’
তিনি আরো বলেন, ‘আমি পাহাড়ি এলাকার মেয়ে। পাহাড়ে ওঠা ভালই জানি। এরপর উচ্চশিক্ষার জন্য স্কটল্যান্ড গিয়েছিলাম। সেখানে পাহাড়ে উঠার জন্য প্রশিক্ষণ নিয়েছি। আর ইতিমধ্যেই আইসল্যান্ড পিক (৬২০০ মিটার), লুক রি (৬২০০ মিটার) ও কালা পাথুর (৫৫৬০ মিটার) আরোহণ করেছি। সব ঠিক থাকলে আশা করছি প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে আগামী এক বছরের মধ্যে সাতটি সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ আরোহণ করে উদাহরণ সৃষ্টি করতে পাবো। ’
ওয়াসফিয়ার এই স্বপ্নপূরণে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক ও রেনেটা র্ফামাসিউটিক্যালস লিমিটেড। ওয়াসফিয়া প্রতিষ্ঠান দুটিকে তার প্রতি বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ জানিয়েছেন। পাশাপাশি তিনি এই ধরনের কাজে পর্যাপ্ত সহযোগিতার অভাব রয়েছে উল্লেখ করে বলেন, ‘আমি আপাতত মাত্র একটি পর্বত আরোহণের প্রস্তুতি নিয়ে যাচ্ছি। স্পন্সর প্রতিষ্ঠান বা অন্য কোনো প্রতিষ্ঠান যদি এগিয়ে আসে তবে অন্য মহাদেশের সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ আরোহণ করব। ’
‘আফ্রিকার কিলিমাঞ্জারো (৫৮৯৫ মিটার), দক্ষিণ আমেরিকার একাঙ্গাগুয়া (৬৯৫৯ মিটার), এন্টার্কটিকা মহাদেশের ভিনসন মাসিস (৪৮৯৭ মিটার), এশিয়া মহাদেশের মাউন্ট এভারেস্ট (৮৮৫০ মিটার), উত্তর আমেরিকার মাউন্ট ম্যাককিনলে (৬১৯৪ মিটার), ওশেনিয়া মহাদেশের পানকাটজায়া (৪৮৮৪ মিটার) পর্বতশৃঙ্গ আমাকে হাতছানি দিয়ে ডাকছে। সবার দোয়া ও স্পন্সরদের পর্যাপ্ত সহযোগিতা থাকলে প্রথম বাঙালি মেয়ে হিসেবে একটি অনন্য রেকর্ড স্থাপন করতে পারবো বলে মনে করি। ’ আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে ওয়াসফিয়া বাংলানিউজকে বললেন কথাগুলো।
ওয়াসফিয়ার যাত্রা প্রাক্কালে কথা হচ্ছিল বন্ধু শাহানা সিদ্দিকীর সাথে। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমি জানি ওয়াসফিয়া পারবে। সে আমাদের জন্য স্বপ্ন দেখার নতুন চোখ। এর আগেও সে এ ধরনের অভিযানে অংশ নিয়েছে এবং সফল হয়েছে। এবারও সফল হবে। ওয়াসফিয়ার জন্য রইল শুভ কামনা। ’
ওয়াসফিয়ার যাত্রা উপলক্ষে ২ জুলাই সকাল ১১টায় মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে ‘বাংলাদেশ অন সেভেন সামিটস: পাহাড়চূড়ায় নারী’ শীর্ষক এক ফ্লাগ অব সেরেমনির আয়োজন করা হয়। এ সময় উপস্থিত থেকে মিডিয়া ব্যক্তিত্ব ও মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি সারা যাকের ওয়াসফিয়াকে দিয়েছেন সবচে বেশি কমপ্লিমেন্ট। তিনি বললেন, ‘ওয়াসফিয়া বাংলাদেশের সাহসী ও উদ্যোগী নারীদের জন্য এক জ্বলন্ত উদাহরণ। তার এই সাহসী উদ্যোগ অন্য বাঙালি নারীদের শেকল ভেঙে বাইরে এসে কাজ করতে উদ্বুদ্ধ করবে। ’
আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল বলেন, ‘সাতটি পর্বতশৃঙ্গে আরোহণের এমন সাহসী উদ্যোগ নেওয়াটাই অনেক বড় অর্জন। আমাদের সবার উচিত তার এই জয়যাত্রার জন্য মঙ্গল কামনা করা। ’
অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে আরো শুভেচ্ছা জানিয়েছেন মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব তারিক উল ইসলাম, চাকমা সার্কেলের প্রধান ব্যারিস্টার রাজা দেবাশীষ রায়, অভিনেতা ইরেশ যাকের।
বাংলাদেশ সময় ১৮১০ ঘণ্টা, জুলাই ৩, ২০১১