হতাশা নিত্যসঙ্গী। মাথায় বেকারত্বের অভিশাপ।
গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার পাথারপাড়া গ্রামের মোঃ তোফাজ্জল হোসেন। যিনি বদলে দিয়েছেন একটি জনপদ। ছোট্ট একটি খামার থেকে বিশাল খামার। আয় করছেন কোটি কোটি টাকা। মাওনা ইউনিয়নের ২১টি গ্রামের ৫৪৮ জন বেকার যুবক তোফাজ্জলের সফলতায় উৎসাহিত হয়ে পোল্ট্রি খামার করতে আগ্রহী হয়ে উঠছে।
তোফাজ্জল ১৮ বছরের কিশোর। নানা অভাব অনটনে একবেলা খেয়ে, না খেয়ে পিতার সাথে অনেক চেষ্টা করেছেন ভাগ্য ফিরাতে। কিন্তু কোনোটাতেই সুবিধা করতে না পেরে ১৯৯৬ সালে ঋণের টাকায় মাত্র কয়েক-শো লেয়ার মুরগি নিয়ে বাড়ির উঠানে গড়ে তুলেন ছোট্ট একটি খামার।
দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে থাকা অসংখ্য খামারে গিয়ে অর্জন করতে থাকেন বিশেষজ্ঞের দক্ষতা। এরপর আর তোফাজ্জলকে ফিরে তাকাতে হয়নি। ধীরে ধীরে প্রসার ঘটতে থাকে খামারের। এরই ফাঁকে গড়ে তুলেন রাইস মিল, ফিড মিল, ফিশারিজ, দুগ্ধ খামার, মেডিসিন সেন্টার ইত্যাদি।
বর্তমানে তোফাজ্জলের খামারে রয়েছে ১৮ হাজার মুরগি। সব মিলিয়ে তার শ্রমিকের সংখ্যা ২৫-৩০ জন। ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ‘আজিরন ফিড এন্ড মেডিসিন সেন্টারে’ রয়েছে ডিমের বড় আড়ৎ। তোফাজ্জলের খামারের ডিম ছাড়াও আশেপাশের খামারগুলোর অর্ধ-লক্ষাধিক ডিম প্রতিদিন এ আড়ৎ থেকে ঢাকায় পাঠানো হয়। লাভের একটা অংশ পান তোফাজ্জল হোসেন। পোল্ট্রি শিল্পের ওপর দিয়ে কয়েক দফা বার্ড-ফ্লু সহ নানা ধরণের ঝড় বয়ে গেলেও তোফাজ্জল তার অবস্থানে এখনও দাঁড়িয়ে আছেন।
পোল্ট্রি খামারের লাভের টাকায় তোফাজ্জল উচ্চ মূল্যের জমি, বাড়ি, গাড়ি সব করেছেন। মা, ভাই-বোনের বড় সংসার চালাচ্ছেন।

মোমবাতি আর লালবাতির পরিবর্তের ওই এলাকার ঘরে ঘরে এখন জ্বলে বৈদ্যুতিক বাতি, ফ্যান। পুরো এলাকায় এসেছে বৈপ্লবিক পরিবর্তন। শ্রীপুওে তোফাজ্জল পরিণত হয়েছে এক অনুকরনীয় ব্যক্তিত্বতে।
তাঁর খামার অত্যন্ত পরিচ্ছন্ন। খামারে কোনো দূর্গন্ধ নেই। মুরগির লিটার দিয়ে বায়োগ্যাস তৈরী করে নিজ পরিবারসহ প্রতিবেশিদেরকে দিয়েছেন জ্বালানী হিসাবে ব্যবহার করতে।
দরিদ্র ,অসহায় মেধাবী শিক্ষার্থীদের সাহায্য করার জন্য প্রতিষ্ঠা করেছেন ‘হাফিজ উদ্দিন ফাউন্ডেশন’ নামে স্বেচ্ছাসেবক সংগঠন। হাফিজ উদ্দিন তাঁর বাবার নাম।
মাওনা ইউনিয়নের পোল্ট্রি খামারীদের নিয়ে জাতীয় খামার রক্ষার জন্য প্রতিষ্ঠা করেছেন মাওনা ইউনিয়ন পোল্ট্রি মালিক সমিতি । সংগঠনটির সভাপতি হিসাবে এখন তোফাজ্জল দায়িত্ব পালন করছেন।
পোল্ট্রি শিল্পে বিশেষ অবদান রাখায় ২০০৬ সালে তিনি ‘শ্রীপুর লেখনী সাহিত্য সংসদ’ পুরস্কার লাভ করেন। উল্লেখ্য বরেণ্য কবি শামসুর রাহমান তার জীবনের সর্বশেষ অনুষ্ঠানে এ পুরস্কার তুলে দেন তোফাজ্জলের হাতে।
বাংলাদেশ সময়: ১৬১৫ ঘণ্টা, জুলাই ৫, ২০১১