সিঙ্গাপুর: সারা বিশ্বে ক্রমবর্ধমান খাবার পানির সংকট মেটাতে ভবিষ্যতে পানির প্রধান উৎস হতে পারে মানুষের মূত্র বা ব্যবহার করা পানি। সিঙ্গাপুরের একজন বিজ্ঞানী এমন অভিনব তথ্য জানিয়েছেন।
বিশ্বে জনসংখ্যা বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিশুদ্ধ পানি এখন একটি মূল্যবান দ্রব্য হয়ে উঠছে। অনেক দেশেই বিশুদ্ধ খাবার পানির সংকট ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে।
অপরদিকে, পানির যথেচ্ছ ব্যবহার, জলবায়ু পরিবর্তনসহ মানবসৃষ্ট নানা কারণে ভূগর্ভস্থ পানির স্তরও নিচে নেমে যাচ্ছে। এতে করে খুব শিগগিরই খাবার পানি দুর্লভ বস্তুতে পরিণত হবে বলে অনেকে আশঙ্কা করছেন।
এ বিষয়ে চলতি বছর লি কুয়ান ইউ ওয়াটার পুরস্কার পাওয়া ড. জেমস বার্নার্ড বলেন, ব্যবহৃত পানির পরিশোধনের প্রক্রিয়াকে এ সমস্যা সমাধানের একটি উপায় হিসেবে খুব গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করতে হবে। এ প্রক্রিয়া নিয়ে পানি পরিশোধন করার চীনা প্রতিষ্ঠান এনইওয়াটার সিঙ্গাপুরে সঙ্গে কাজ করছে।
প্রতিষ্ঠানটি ইতিমধ্যে এনইওয়াটারের পাঁচটি প্ল্যান্ট স্থাপন করেছে। এ প্ল্যান্টগুলোতে শিল্পকারখানা এবং বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করা পানি ব্যবহার উপযোগী করা হয়। বর্তমানে তারা দেশের চাহিদার প্রায় ৩০ শতাংশ পানি সরবরাহ করছে। তারা আশা করছে, ২০৬০ সালের মধ্যে চাহিদার অর্ধেক পানি তারা সরবরাহ করতে পারবে।
ড. বার্নার্ড বলেন, বিশ্বের একাধিক দেশে মূত্র পরিশোধনে অনেক অগ্রগতি হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘এ কাজটা ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে। তবে অনেক মানুষই এ সম্পর্কে কিছুই জানে না এবং এ কারণে তারা বিনা দ্বিধায় তা ব্যবহার করে। ’
যুক্তরাষ্ট্রে ফেয়ারফ্যাক্স কাউনটি এবং ওয়াশিংটন ডিসির শহরতলী থেকে পানি সংগ্রহের জন্য একটি ট্যাঙ্ক রয়েছে। আর এখানে যে পানি আসে তার ৬০ শতাংই ব্যবহৃত পানি। সুতরাং বলাই যায়, এখানে পুনঃবিশুদ্ধ করা পানির ব্যবহার সিঙ্গাপুরের চেয়েও বেশি।
ড. বার্নার্ড টয়লেটে ফ্ল্যাশ করা পানি থেকেও বিশুদ্ধ পানি উৎপাদনের ব্যাপারে একটি অভিনব ধারণা দিয়েছেন। তিনি বলেন, স্টকহোমের একটি শহরতলীতে এই পানি প্রক্রিয়াজাত করে ব্যবহার করা হয়।
তিনি বলেন, ‘যেসব ভবনে দুইভাবে ফ্ল্যাশ করার সুবিধা (মল ও মূত্রের জন্য আলাদা পাইপ রয়েছে) সংবলিত টয়লেট নেই সেখানে এ পদ্ধতি কাজে আসবে না। তাই আমি মনে করি এ কাজটা আমরা উন্নত দেশগুলো থেকেই শুরু করতে পারি। ’
তিনি বলেন, প্রক্রিয়াজাত করার মাধ্যমে খাবার এবং কৃষিকাজে ব্যবহারের পানির উৎস হতে পারে মূত্র। এমনকি এর উপজাত শক্তি এবং সারেরও উৎস হতে পারে।
ব্যবহৃত পানি প্রক্রিয়াজাত করার কৌশল উদ্ভাবনে অবদানের জন্য ড. বার্নার্ডকে মঙ্গলবার লি কুয়ান ইউ পুরস্কারে ভূষিত করা হয়।
আধুনিক সিঙ্গাপুরের রূপকার ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী লি কুয়ানের নামানুসারে এ পুরস্কারের প্রচলন করা হয়েছে। ড. বার্নার্ড মূলত জৈবনিক পুষ্টি অপসারণ প্রযুক্তি উদ্ভাবনের জন্য বিখ্যাত।
বাংলাদেশ সময়: ২০২৬ ঘণ্টা, জুলাই ০৬, ২০১১