ঢাকা, রবিবার, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ১৮ মে ২০২৫, ২০ জিলকদ ১৪৪৬

ফিচার

স্বপ্নজয়ী সুমন-আসিফ

ফারজানা রুম্পা | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০:৫৩, জুলাই ১৩, ২০১১
স্বপ্নজয়ী সুমন-আসিফ

যে কোনো আঁকিয়ের স্বপ্ন থাকে একবার প্যারিসের ল্যুভর মিউজিয়ামে যাওয়ার। একবার ভিঞ্চির অমর সৃষ্টি মোনালিসাকে কাছ থেকে দেখার।



এমনই স্বপ্ন নিয়ে বড় হওয়া চারুকলার কোনো একজন ছাত্রের যদি হঠাৎ ল্যুভর মিউজিয়াম ঘুরে দেখার সুযোগ আসে, তাহলে কেমন হয়! তাও এমন এক আমন্ত্রণে, যা নিয়ে আসবে দেশের সম্মান, তৈরি করবে সম্ভাবনার বিশাল ক্ষেত্র।

নুরুল হক সুমন তেমনই এক বাংলাদেশী তরুণ যিনি কেবল সৌভাগ্য দিয়ে নয়, যোগ্যতা দিয়ে নিজেকে নিয়ে গেছেন ফ্রান্সের স্বপ্নের নগরীতে। তার সাথে জুটি বেঁধেছিলেন নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বেরোনো আরেক টগবগে তরুণ আসিফুর রহমান খান। তবে এখন তাদের পরিচিতি একই সুতোয় গাঁথা। তারা দুজনই কাজ করছেন দেশের অন্যতম প্রধান বিজ্ঞাপনী সংস্থা ইউনিট্রেন্ড লিমিটেডে। সেখান থেকেই স্বপ্ন সত্যি হবার সূচনা।

এ বছরের শুরুর দিকে বাংলাদেশ ব্র্যান্ড ফোরাম আয়োজন করে একটি প্রতিযোগিতার যেখানে অংশ নেয় দেশসেরা ১০টি নাম করা এজেন্সি। সেখানে অ্যাডকম লিমিটেড কজিটো মার্কেটিং সলিউশনের বিভিন্ন টিমের মতো অংশ নেয় ইউনিট্রেন্ড । একজন কপিরাইটার এবং একজন আর্ট ডিরেক্টর দুজনের টিম আট ঘণ্টার মধ্যে তৈরি করে একটি ক্রিয়েটিভ প্রেজেনটেশন। দেশের খ্যাতনামা বিজ্ঞাপন-ব্যক্তিত্বদের বিচারে ব্র্যান্ড ফোরামের সেই প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অর্জন করেন ইউনিট্রেন্ডের টিম আসিফ এবং সুমন। অন্য এজেন্সির মাঝে নিজেদের তুলে ধরার পাশাপাশি তাদের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি ছিল ক্যানসে যাওয়ার অভূতপূর্ব সুযোগ। ২৮ বছর ধরে বিজ্ঞাপন জগতে সম্মানের প্রতিযোগিতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত ফ্রান্সে অনুষ্ঠিত ক্যানস ইয়ং লায়নসে প্রথমবারের মতো অংশ নেওয়ার সুযোগ পাওয়ার চেয়ে বড় আনন্দ আর কী-ই বা হতে পারে!

যেখানে ২৮ বছর ধরে বিশ্বের হোমড়া-চোমড়া দেশগুলো অংশ নেয়, সেখানে বাংলাদেশের দুজন আনকোড়া প্রতিযোগী অংশ নিয়ে হয়তো খুব বেশি কিছু করতে পারবে না, এমন মনোভাব  নিয়ে অভিজ্ঞতা অর্জনের লক্ষ্যে জুন মাসে উড়াল দেয় সুমন এবং অসিফ।
 
এরপরের গল্প রূপকথার কাছাকাছি।

বিশ্বের ৪২টি দেশের সেরা প্রতিযোগীদের সাথে মেলামেশা। বিশ্বের সেরা সেরা সব ব্র্যান্ড, যেমন- গুগল, ইউটিউব, অ্যাডোব, এমএস, সাচি অ্যান্ড সাচি, ওএনএম, লিওবার্নেট ইত্যাদির স্টলে স্টলে ঘোরা, প্রতিনিধিদের সাথে আলাপÑ এসবই অসাধারণ অভিজ্ঞতা। জানালেন আসিফ ।

এছাড়া প্রতিযোগিতার অংশ তো ছিলই। ব্রিফ অনুযায়ী মাত্র ২৪ ঘণ্টায় একটি বিশেষ বিষয়কে মাথায় রেখে প্রচারের জন্য প্রেস অ্যাডের (পত্রিকায় ছাপার জন্য বিজ্ঞাপন) আইডিয়া বের করলেই শুধু চলবে না, নমুনাটিও দেখাতে হবে।

এখানেই ছিল বিস্ময়। কাজ শেষ। জমা দেওয়াও শেষ । এবার প্রতীক্ষার পালা। এর মাঝে যারাই বাংলাদেশ টিমের আসিফ ও সুমনের কাজ দেখেছেন, তারাই বলছেন এই কাজ বাজিমাৎ করবে।

এজন্য যখন ফলাফল প্রকাশ হলো তখন প্রথম তিনটি স্থানে বাংলাদেশের নাম না দেখে অবাক হওয়ার সংখ্যাই ছিল অনেক।   তবে বাংলাদেশ ঢিম আবিষ্কার করলেন, প্রদর্শনীর সিরিয়াল অনুযায়ী তারা আছেন সেরা পাঁচের মধ্যে।   এটাই বা কম কিসে!

বিশ্বের বাঘা বাঘা দেশের সাথে পাল্লা দিয়ে বাংলাদেশ প্রথমবারেই যে এতোদূর এগিয়েছে, তাতেই খুশি বাংলাদেশ টিম, তাদের সহকর্মী আর শুভাকাক্সক্ষীরা।

তবে আসিফ-সুমন কেবল প্রতিযোগিতাতে ভালো করেই খুশি নন, খুশি বিভিন্ন কর্মশালা ও সেমিনারে অংশ নিয়ে। তাদের মতে, ক্যানসের এই বিশাল ক্রিয়েটিভ আসরে না গেলে হয়তো তারা বুঝতই না অ্যাডভার্টাইজিংয়ের পরিসর এতো বিস্তৃত, মজার আর এতো চিন্তাশীল হতে পারে!

পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের উদাহরণ টেনে আসিফ বলেন, প্রতিযোগিতার বাইরে ভারত থেকে শুধু ক্যানসের আয়োজনে উপস্থিত থাকার জন্যই উড়ে এসেছিলেন ৭০ জন। তারা প্রতিটি সেমিনার ও ওয়ার্কশপে উপস্থিত থেকে নোট নিয়েছেন খুঁটিনাটি বিষয়ের, যা পরে কাজে লাগাবেন নিজ দেশে।

আসিফ বললেন, আমাদের দেশ থেকেও বেশি প্রতিনিধি গেলে আমরা আরো রিসোর্স নিয়ে আসতে পারতাম, যা কাজে লাগানো যেত নিজেদের উন্নতিতেই ।

তিনি আরো উল্লেখ করেন, শুধু এজেন্সি নয়, ক্লায়েন্টরাও এই ওয়ার্কশপে অংশ নিয়ে ভাবনার পরিসরকে দিতে পারেন নতুন মাত্রা।

তারা আরো জানালেন, আমরা শুধু পিছিয়ে আছি টেকনোলজিতেই। চিন্তা-ভাবনা, আইডিয়া মেকিং বা এক্সিকিউশনে খুব বেশি পিছিয়ে নেই।

বাংলাদেশ সময় ২০২৫ ঘণ্টা, জুলাই ১৩, ২০১১ 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।