ঢাকা, রবিবার, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ১৮ মে ২০২৫, ২০ জিলকদ ১৪৪৬

ফিচার

রমেশের সাত রঙা চা

সাইদ আরমান ও ফেরদৌস আহমেদ | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০:৩৪, জুলাই ১৬, ২০১১
রমেশের সাত রঙা চা

মৌলভীবাজার (শ্রীমঙ্গল) থেকে : সাত রঙের চা শ্রীমঙ্গলের ঐতিহ্য। গ্লাসের দিকে তাকালেই দেখা যায় ভিন্ন রঙে চায়ের সাতটি স্তর।

দেশি বলেন আর বিদেশি বলেন, যে পর্যটকই শ্রীমঙ্গলে বেড়াতে যান না কেন, সাত রঙের চা না খেয়ে ফিরেছেন এমন মানুষ খুব কমই পাওয়া যাবে।

সাধারণ চা বানানোর রহস্য কমবেশি সবার জানা থাকলেও এই চা তৈরির রহস্য সাধারণের কাছে অজানা। সাধারণ চা থেকে এটিতে স্বাদেও রয়েছে ভিন্নতা। সাতটি স্তরের স্বাদ সাত রকম।

চায়ের রহস্য খুঁজতে গিয়ে জানা গেছে এর আবিষ্কারকের কথা। তার নাম রমেশ রাম গৌড়। বয়স চল্লিশ।

স্থানীয়রা জানান, তিনিই প্রথম এক গ্লাসে সাত রঙের চা বানানোর কৌশল বের করেন। এ চা তৈরির জন্য বর্তমানে তার সুনাম দেশ ছাড়িয়ে বিদেশেও। এক সময়ের টং দোকানের চা বিক্রেতা এখন দেশের ভিন্ন মাত্রার চা আবিষ্কারক। রমেশ ইতিমধ্যে কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে চাকরির প্রস্তাবও পেয়েছেন। তবে ব্যবসার কারণে তা ফিরিয়ে দিয়েছেন।

দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রায় প্রতিদিনই বহু পর্যটক তার তৈরি চায়ের স্বাদ পরখ করতে ছুটে আসেন শ্রীমঙ্গলে। বর্তমানে তার দুটি দোকান। একটি শ্রীমঙ্গলের মণিপুরী অধ্যুষিত এলাকা রামনগরে এবং অন্যটি শহরের কালিঘাট রোডের ১৪ রাইফেল ব্যাটালিয়ন ক্যান্টিনে।

কথা হয় এম মুসলিম চৌধুরীর সঙ্গে। থাকেন শ্রীমঙ্গলেই। তিনি প্রতি সপ্তাহে এ চা খেতে আসেন। বাংলানিউজকে তিনি বলেন, ‘সাত রঙের চায়ের প্রতিটি স্তরেই স্বাদ ভিন্ন। খেলেও আসে চাঙ্গাভাব, যা সাধারণ চায়ের চেয়ে একটু বেশিই। ’

তিনি বলেন, ‘বর্তমানে দেশের বেশ কিছু স্থানে এ চা তৈরি করা হয়। দু-একটি জায়গায় খেয়েছিও। তবে রমেশের চায়ের স্বাদ আর কোথাও পাইনি। ’

রমেশ রাম গৌড় বাংলানিউজকে জানান, ময়মনসিংহ জেলার মুক্তাগাছা উপজেলার আটানিবাজার গ্রামে তার বাড়ি। সেখানে অংশীদার নিয়ে ব্যবসা করতেন। একসময় অংশীদার তার সঙ্গে প্রতারণা করে বসে।

তাই ভাগ্যবদলের উদ্দেশ্যে ২০০০ সালের মার্চ মাসে স্ত্রী, তিন ছেলে, ২ মেয়েসহ মাত্র ১৫০০ টাকা নিয়ে শ্রীমঙ্গলে চলে আসেন। রামনগর মণিপুরী পাড়ায় বাসা ভাড়া নিয়ে শহরের একটি দোকানের কর্মচারীর চাকরি নিয়ে নতুন করে জীবন শুরু করেন তিনি।

কিন্তু ব্যবসায়ী রমেশ চাকরিতে মন বসাতে পারছিলেন না কিছুতেই। তাই ওই বছরেই চাকরি ছেড়ে বাংলাদেশ চা গবেষণা ইন্সটিটিউট (বিটিআরআই) সংলগ্ন কাকিয়াছড়া চা বাগানে একটি চায়ের দোকান খুলে বসেন। এরপর ২০০২ সালে এক গ্লাসে দু রঙা চা আবিষ্কার করে শ্রীমঙ্গলে তোলপাড় সৃষ্টি করে ফেলেন। একই পদ্ধতিতে পরে তিনি এক গ্লাসে সাত স্তরের সাত রঙের চা আবিষ্কার করেন।

চা তৈরির পদ্ধতি সম্পর্কে তিনি জানান, শুধু ক্লোন টি এবং বিভিন্ন ধরনের মসলার সংমিশ্রণে এক গ্লাসে একাধিক স্তরের চা তৈরি করা হয়। বর্তমানে সেই চা স্তরভেদে ৫ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি হয়।

রমেশ রাম গৌড় বাংলানিউজকে জানান, বর্তমানে তার ছেলে রাজু রাম গৌড়, রাজিব রাম গৌড়, দীপ্ত রাম গৌড় ও ভাই মানিক রাম গৌড় চা তৈরি করে থাকেন। ব্যবসা এখন জমজমাট। তাই চায়ের দোকান থেকেই তিনি প্রতি বছর সরকারকে নিয়মিত রাজস্ব দিচ্ছেন বেশ বড় অংকের।

বাংলাদেশ সময় ১০২০ ঘণ্টা, ১৬ জুলাই, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।