পাকহানাদারদের বিরুদ্ধে জীবনবাজি রেখে যে বীর সন্তানেরা মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে আমাদের দিয়েছেন লাল-সবুজের বাংলাদেশ, তাদের মধ্যে অনেকেই আজ রোগ-শোকে ধুঁকছেন, অর্থাভাবে পর্যাপ্ত চিকিৎসাসেবাও নিতে পারছেন না। এই মুক্তিযোদ্ধাদের সুচিকিৎসার জন্য জাপান-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ হসপিটাল একটি বিশেষ ইনডোর ও আউটডোরসহ ওয়ান স্টপ মেডিকেল সার্ভিস চালু করেছে।
৯ জুলাই শনিবার ধানমন্ডিতে এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী ও সেক্টর কমান্ডার্স ফোরামের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) এ কে খন্দকার বীর উত্তম এমপি, বিশেষ অতিথি ছিলেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ক্যাপ্টেন (অব.) এবিএম তাজুল ইসলাম এমপি, শহীদ বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান ট্রাস্টের সভাপতি মিলি রহমান, বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) হেলাল মোর্শেদ খান বীর বিক্রমসহ সেক্টর কমান্ডার, শিল্পী, সাহিত্যিক, মুক্তিযোদ্ধা, প্রজন্মযোদ্ধা ও বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ।
উদ্বোধন উপলক্ষে ধানমন্ডিতে দিনব্যাপী ঢাকার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও স্কুলের পাঁচশত প্রজন্মযোদ্ধারা পথর্যালি, ফটোগ্রাফি প্রদর্শনী, অঙ্গীকার নামাসহ উৎসবমুখর পরিবেশে মিলনমেলায় মাতিয়ে রাখেন ঢাকা ও আশপাশের শতাধিক মুক্তিযোদ্ধাদের।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনায় ছিলেন জাপান-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ হসপিটালের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. জোনাইদ শফিক, ম্যানেজিং ডিরেক্টর অধ্যাপক ডা. সরদার এ নাঈম।
জাপান-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ হসপিটাল সূত্রে জানা গেছে, মুক্তিযোদ্ধাদের নিবিড় স্বাস্থ্যসেবায় বাংলাদেশে প্রথম এই জেবিএফএইচ জেরিয়াট্রিক সেন্টার। নিউরো মেডিসিন, ইন্টারনাল মেডিসিন, ক্রিটিক্যাল মেডিসিন ইউনিট, হৃদরোগ, নিউরোলজি বিভাগের পাঁচজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে ১২ শয্যার এই সেন্টারটি পরিচালিত হচ্ছে।
এখন থেকে সারা দেশের মুক্তিযোদ্ধারা অত্যন্ত স্বল্পমূল্যে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ, পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও প্রয়োজনে ভর্তি হয়ে সুচিকিৎসা নিতে পারবেন। এক্ষেত্রে তার সনদপত্র ও গেজেট নম্বরের প্রয়োজন হবে। যে কোনো ধরনের চিকিৎসার প্রয়োজনে ০১৭১৭৭৬০৩০০ এবং ০১৭১২০৩৯৭২৯-তে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ করা যাবে।
গত কদিনে এখান থেকে চিকিৎসা নিয়েছেন বগুড়ার মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হালিম, টাঙ্গাইলের ফজলুল হক মিয়া, যশোরের আবদুল লতিফ, চট্টগ্রামের আবু তাহের বাঙ্গালী এবং সুনামগঞ্জের কাকন বিবি বীর প্রতীক। অসুস্থ এই ৫ জন মুক্তিযোদ্ধার পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন বিশিষ্ট সুরকার শেখ সাদী খান, সঙ্গীত শিল্পী একরামুল ইসলাম, খুরশীদ আলম, ফরিদা পারভীন, দিলরুবা খানম, শাম্মী আকতার, অভিনেত্রী মৌ, ম্যাপললিফ স্কুল, ইউল্যাব, এশিয়া প্যাসিফিকসহ বিভিন্ন স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা। শুভেচ্ছাস্বরূপ ফুল, ফলের বাসকেট, শাড়ি, লুঙ্গি, বিভিন্ন উপঢৌকন নিয়ে হাজির হচ্ছেন তারা।
দেরিতে হলেও মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য এই উদ্যোগ গ্রহণ করায় সবাই আন্তরিক ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেছেন জাপান-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ হসপিটাল কর্তৃপক্ষকে।
বাংলাদেশ সময় ১৫২৫ ঘণ্টা, জুলাই ১৭, ২০১১