‘কথায় বলে চুরি বিদ্যা বড় বিদ্যা, যদি না পড়ে ধরা!’ দুনিয়াজুড়ে স্মরণাতীতকাল থেকে এখন পর্যন্ত তস্করকূল এ বাক্যটি শিরোধার্য করেই যাবতীয় চৌর্যবৃত্তির কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। ধরা পড়লেই সব শেষ।
এই চোর ‘ভদ্রলোক’ একটি ল ফার্মের বাইরের দেওয়ালে লাগানো ৪টি সিকিউরিটি ক্যামেরা (CCTV) চুরি করতে গিয়ে গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে স্থান পাওয়ার মত অসাধারণ ‘কর্মতৎপরতা’ দেখিয়েছেন। তিনি দেওয়াল থেকে সিকিউরিটি ক্যামেরার স্ক্রু খুলতে চার চারটি ঘণ্টা ব্যয় করেছেন। বিশ্বাস হচ্ছে না!
না হওয়ারই কথা। কিন্তু ক্যামেরার স্কু খুলতে গিয়ে চোর মহাশয়ের চার ঘণ্টা ব্যয়ের পুরো ঘটনার রেকর্ড রয়েছে অপর একটি গোপন ভিডিও ক্যামেরায়। একটি পূর্ণদৈর্ঘ্য বাংলা সিনেমার ব্যপ্তির চেয়েও এক ঘণ্টা সময় বেশি ধরে ওই চোর ক্যামেরার স্ক্রু খোলার কালে আশপাশে বারবার সতর্ক দৃষ্টিতে নজরদারি করেছে- কেউ তাকে দেখে ফেলছে কি না আর বমাল পালানোর রাস্তাটা পুরোপুরি ফাঁকা আছে কি না তা নিশ্চিত হতে।
ইংল্যান্ডের ব্র্যাডফোর্ড এলাকার ওই ভবনের মালিক ৩৭ বছর বয়সী আইনজীবী আমজাদ আলী খান সাংবাদিকদেরকে বলেন, লোকটি সম্ভবত ব্রিটেনের সবচেয়ে হাঁদারাম টাইপের ঘুঘু। ভিডিওতে দেখা গেছে- সে চোখ বড় বড় করে প্রায়ই ক্যামেরার লেন্সের দিকে তাকিয়ে আছে। সে তার ঘটনা রেকর্ড করতে থাকা ওই ক্যামেরার এত কাছে ছিল যে তার স্বাস প্রশ্বাসও দেখতে পাওয়া যাচ্ছিল প্রায়!
আর সর্বশেষ ক্যামেরাটি দেওয়াল থেকে আলগা করতে গিয়ে তো ওই নিশি-কুটুম্ব রীতিমত আত্মহত্যাই করে বসেছিলেন অসাবধানতার কারণে। সে এতই বেখেয়াল আর আহাম্মক যে চৌর্যকর্মের ওই মাহেন্দ্রক্ষণে পা ফসকে ১২ ফুট ওপরের দেওয়াল থেকে পড়ে গিয়েছিল প্রায়। দুনিয়ার আর কোনও কর্মনিষ্ঠ সচেতন চোর এমন করতে পারে!
ডেইলি মিররের খবরে জানা গেছে, চুরি যাওয়া ওই ক্যামেরাগুলোর প্রতিটির দাম ১০০ পাউন্ড করে। ভবন মালিক আইনজীবী সাহেবের ওই ক্যামেরাগুলো প্রতিস্থাপনে মোট ৮০০ পাউন্ড গচ্চা দিতে হয়েছে।
চোর বাবাজী এখনও ধরা পড়েননি।
এদিকে, আমজাদ আলী ওই মাথামোটা চোরের সন্ধানদাতার জন্য ২০০ পাউন্ড পুরস্কার ঘোষণা করেছেন।
অনুসিদ্ধান্ত: তবে বলতেই হয়- যতটা মাথামোটা বলে মনে করা হচ্ছে- চোর ব্যাটা কিন্তু আসলে ততটা মাথামোটা নয়। কারণ, সে স্ক্রু খুলতে চার ঘণ্টা সময় লাগিয়েছে, ১২ ফুট ওপর থেকে পড়ে মরতে বসেছিল, তার কর্মকাণ্ড অপর একটি ভিডিও ক্যামেরায় ধারণ হচ্ছে তা টের পায়নি- এর সবই সত্য। কিন্তু এর সঙ্গে সঙ্গে এটা আরও বড় সত্য যে সে বমাল পালাতে পেরেছে। আর স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডের দেশের পুলিশ-গোয়েন্দারাও ভিডিও ফুটেজ থাকা সত্ত্বেও দীর্ঘ সময় তাকে ধরতে পারেনি- এটাও দেশ-বিদেশের চোরদের জন্য কম ‘গৌরব আর অহংকারের’ বিষয় নয় কি! সাধে কী আর বাঙাল বলে- ‘চুরি বিদ্যা বড় বিদ্যা, যদি না...’
আহ্সান কবীর, বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম