ঢাকা, রবিবার, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ১৮ মে ২০২৫, ২০ জিলকদ ১৪৪৬

ফিচার

চাঁদে হবে মানুষের কলোনি

মনোয়ারুল ইসলাম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮:৪৪, জুলাই ২৩, ২০১১
চাঁদে হবে মানুষের কলোনি

প্রাচীনকাল থেকেই চাঁদ নিয়ে অনেক রহস্য, অনেক গল্পকথা, অনেক উদ্ভট চিন্তাভাবনা চালু ছিলো মানুষের সমাজে। কিন্তু চাঁদে মানুষের পা পড়ার পর এসব আর রূপকথা নয়।



চাঁদের বুকে প্রথম মানুষের পা পড়েছিল ১৯৬৯ সালের ২০ জুলাই।

আজ ৪২ বছর পর মানুষ এখন চাঁদে বসবাসের স্বপ্ন দেখছে। আর চন্দ্রজয়ের এই ঘটনা মানুষকে এই শিক্ষাও দেয়, অসম্ভব বলে কোনো শব্দ মানুষের অভিধানে থাকা উচিত নয়। সাহসী মানুষ যা কিছু অসম্ভব, তার স্বপ্নকে স্বাগত জানায়। চাঁদে মানুষের কলোনি বানানো তেমনি স্বপ্ন।

চাঁদ নিয়ে বৈজ্ঞানিক গবেষণার শুরু ১৬০৯ সালে। ইতালিয়ান বিজ্ঞানী গ্যালিলিও গ্যালিলি উন্নত একটি টেলিস্কোপ আবিষ্কার করেন। এটাই আসলে চাঁদ নিয়ে সর্বজনস্বীকৃত বৈজ্ঞানিক গবেষণার শুরু। গ্যালিলিওর পরবর্তীকালের বিজ্ঞানীরা চাঁদ নিয়ে আরও গবেষণা করেন।

এদিকে পৃথিবীর সবেধন নীলমণি একমাত্র উপগ্রহকে নিয়ে কবি-সাহিত্যিক বা সঙ্গীতশিল্পীদেরও আগ্রহ কম নয়। চাঁদ বা চাঁদে অভিযান নিয়ে কল্পকাহিনী লিখেছেন অনেক লেখক। এখনো লিখে চলছেন।

জুল ভার্নের ১৮৬৫ সালে  লেখা ‘ফ্রম দি আর্থ টু দি মুন’ নামের বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী প্রকাশিত হবার পর অনেকেই বিশ্বাস করতে শুরু করেন চাঁদে যাওয়া সম্ভব।

বর্তমানে আমাদের প্রতিবেশী ভারতের মহাকাশ গবেষণা সংস্থার (ইসরো) সঙ্গে ন্যাশনাল অ্যারোনটিক্স অ্যান্ড স্পেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (নাসা) একটি সমঝোতাপত্র স্বাক্ষরিত হয়েছে । রিমোট সেন্সিং পদ্ধতির সাহায্যে দূর থেকেই চাঁদের বুকে খোঁজ চলবে নানান খনিজ পদার্থের।

চাঁদ নিয়ে বা চাঁদে অভিযান নিয়ে এখনো শেষ কথা বলার সময় আসেনি।

মানুষের অনেক আগে থেকেই ইচ্ছা চাঁদে বসতি গড়ার। সেই সম্ভাবনাও খতিয়ে দেখছেন গবেষকরা। তাদের বিরামহীন গবেষণা চলছে চাঁদকে নিয়ে।

সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার পাশাপাশি চীন, জাপান, ভারতসহ আরও কটি দেশ নতুন করে চাঁদে অভিযান ও চাঁদ নিয়ে গবেষণা শুরু করেছে। এর সাথে যোগ দিয়েছে পূর্বেকার মহাকাশ বিজয়ী দেশ রাশিয়া ও আমেরিকা। তাই নিশ্চিতভাবেই বলা যায় চাঁদ নিয়ে আরও অনেক কথা অপেক্ষা করছে আমাদের সামনের দিনগুলোতে।

ইরান `অমিদ` নামে একটি স্যাটেলাইট এবং `শরিফ-২` নামে একটি রকেট চাঁদের উদ্দেশে প্রেরণ করেছে।

সম্প্রতি মরক্কো ঘোষণা করেছে, ২০১৩ সালের মধ্যে তারা চাঁদে একটি বৈজ্ঞানিক গবেষণাগার নির্মাণ করবে। কাতারের দৈনিক আল আরব জানায়, এই বৈজ্ঞানিক গবেষণাগারটির নাম হবে `মুহাম্মাদ`।


চাঁদে মানুষের পা রাখা-না রাখা নিয়ে গত শতাব্দীতে অনেক বিতর্ক হয়েছে। এসব বিতর্ক যখন তুঙ্গে, তখনও কিন্তু মানুষের চন্দ্রাভিযান স্তিমিত ছিল না।

২০২০ সালে মানুষ আবার পা রাখবে চাঁদের বুকে। এ জন্য ৩০ বছরের বেশি সময় ধরে প্রস্তুতি চলছে মহাসমারোহে। এটা নিশ্চিত যে পরবর্তী চন্দ্রাভিযানে নাসা তখনকার সর্বশেষ প্রযুক্তির সমাবেশ ঘটাবে।

‘২০২০ সালের চন্দ্রাভিযানে মানুষ অন্তত কয়েক মাস থাকতে চায় চাঁদে। সেই সময় যে কোনো বৈরী পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে এ অভিযানের সব অনুষঙ্গ। নাসার প্রযুক্তি উন্নয়ন কর্মস’চির (ইটিডিপি) পরিচালক ফ্রাংক পেরি বিভিন্ন গণমাধ্যমকে বলেন, আমি নিশ্চিত, ২০২০ সাল নাগাদ এতে আরও অনেক চমক এসে জুড়বে। ’

চাঁদে থাকতে অভিযাত্রীদের যাতে কোনো সমস্যা না হয়, সেজন্য নিয়মিত মহড়া চলছে পৃথিবীতে। কৃত্রিমভাবে বৈরী পরিবেশ তৈরি করে সেখানে থাকার অভ্যাস গড়ে তুলছেন নভোচারীরা।

২০২০ সালে যুক্তরাষ্ট্র চাঁদে আবারও মানুষ পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয় ২০০৪ সালের জানুয়ারিতে। তখন মহাকাশে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান আরও দৃঢ় করার ঘোষণা দেন দেশটির তখনকার  প্রেসিডেন্ট। চাঁদে মানুষ পাঠাতে সর্বপ্রথম সফল হয়েছিল নাসা। ১৯৬৩ থেকে ১৯৭২ সাল পর্যন্ত যে কার্যক্রম তারা হাতে নিয়েছিল, তারই সফলতার ফল অ্যাপোলো-১১।

১৯৬৯ সালে অ্যাপোলো-১১ চাঁদে মানুষের পায়ের যে ছাপ ফেলেছিল, তারই ধারায় ছয়টি পৃথক অভিযানে মোট ১২ জন নভোচারীর পা পড়েছে চাঁদের বুকে।

শুধু চাঁদ নয়, মঙ্গল জয়েরও চেষ্টা চলছে। নভোচারীরা চাঁদে গেলে যে কাজটি হবে, তা হচ্ছে পৃথিবীর বাইরে কোথাও থাকার সুযোগ পাবেন তাঁরা। আর এ অভিজ্ঞতা কাজে লাগানো হবে অজানা মঙ্গলে।

এখানেই মঙ্গলের বৈরী পরিবেশে টিকে থাকার একটা মহড়া হয়ে যাবে। নাসার নভোচারীরা চাঁদে বিকল্প শক্তি ও জ্বালানি বা পানি খোঁজার কাজটিও করবেন তখন।

২০২০ সালে চাঁদে যাওয়ার আগে প্রস্তুতি হিসেবে ২০১৪ সালে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে যাবে মনুষ্যবাহী এ নভোযান।

এ অভিযানের মাধ্যমেই চাঁদের বুকে মানুষের পায়ের মলিন ছাপ আরও গভীর হয়ে জানান দিতে পারে আমাদের বিজয়গাথা।

চাঁদে মানুষের বসতির কথা শোনা যাচ্ছে অনেক দিন ধরেই। এরই ধারাবাহিকতায় এবার চাঁদে মানুষের বসবাসের জন্য বানানো হবে বাড়ি। রুনি নামের একটি রোবট বিশেষ এই বাড়ি বানাবে। সুইডেনের মালারডালেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক লাস আসপ্লুন্ডের নেতৃত্বে এ বিশ্ববিদ্যালয়েরই একদল ছাত্রের অংশগ্রহণে তৈরি হচ্ছে এই প্রকল্প। পুরো প্রকল্পে সহায়তা করছেন বিশিষ্ট শিল্পী মিকায়েল গেনবার্গ।

সবকিছু ঠিক থাকলে ২০১২ সালে তৈরি হবে চাঁদে মানুষের বাসের উপযোগী প্রথম কুটির কলোনি।

বাংলাদেশ সময় ২০৩০ ঘণ্টা, জুলাই ২৩, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।