ঢাকা, রবিবার, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ১৮ মে ২০২৫, ২০ জিলকদ ১৪৪৬

ফিচার

দুঃসাহসী চান মিয়া

এ কে এম ফয়জুল ইসলাম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮:৫৫, জুলাই ২৩, ২০১১
দুঃসাহসী চান মিয়া

২০১০ সালের অক্টোবরে আমিনবাজার এলাকায় যাত্রীসহ একটি বাস সেতু থেকে পড়ে যায়। ফায়ার সার্ভিসের অত্যাধুনিক মেশিনও ব্যর্থ হয় বাসটি শনাক্ত করতে।

  ঠিক সেই মুহূর্তে সাহসী চান মিয়া পানির নিচে গিয়ে খুঁজে বের করেন বাসটি। তখন থেকেই বলা হয়, মর্মান্তিক লঞ্চডুবি কিংবা ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড। আস্থার নাম চান মিয়া।

প্রবল পানির স্রোত আর পাইপ ফুটো হয়ে বের হয়ে আসা গ্যাসের তীব্র বাধায় গত বছরের ১০ অক্টোবর আমিনবাজারে নদীতে তলিয়ে যাওয়া বাস সন্ধানে যখন সাউন্ড নেভিগেশন (সোনার) যন্ত্রও ব্যর্থ; তখন (১১ অক্টোবর) নিখোঁজ বাসের সন্ধানে পানির তলদেশে নামেন চান মিয়া।   তার আগের ডুবুরিরা গ্যাসের লিক দেখে ফিরে এসেছেন।

প্রথমে তিনি খোঁজ শুরু করলেন বাসটা যেখানে পানিতে পড়েছে, ঠিক সেখান থেকে। ১০-১৫ মিনিট এগিয়ে যাওয়ার পর তাঁর হাতে একটি ভাঙা কাচের খোঁচা লাগলো। তিনি ক্রমাগত খুঁজতে লাগলেন বাসটি। কিন্তু কিছুই দেখতে পাচ্ছিলেন না।   শুধু দিক ঠিক রেখে খুঁজে যাওয়া ছাড়া তার কিছুই করার ছিল না।

তবে ১০ ফুট এলাকার মধ্যেই তিনি খুঁজে পেলেন সেই বাসটি। যেটি এর আগে অত্যাধুনিক সোনার মেশিন দিয়ে খোঁজা ছাড়াও ফায়ার সার্ভিসের প্রায় ১৩ জন ডুবুরি খুঁজে গেছেন।  

এবার শুরু হলো তার আরেক লড়াই। যে ‘টিথগার্ড’ দিয়ে তিনি পিঠের সিলিন্ডার থেকে অক্সিজেন টানছেন সেটি স্রোতের ধাক্কায় খুলে যেতে চাচ্ছে। আরও বিপদ হবে যদি তার ‘লাইফ লাইনটি’ খুলে যায়। এই লাইফ লাইনই হচ্ছে ডুবুরিদের পানির নিচে জীবনের প্রধান ভরসা।

কী করবেন তিনি এখন? তিনি যদি এ বাস কোনোভাবে শনাক্ত না করে ওপরে যান তবে আবার এখানে নাও পৌঁছাতে পারেন। কারণ প্রবল স্রোত ও ঘূর্ণন।   অবশেষে দুঃসাহসী চান মিয়া ডুবুরি জীবনের সবচে ঝুঁকির কাজটি করলেন। পানির নিচে জীবনের প্রধান ভরসা লাইফ লাইন শরীর থেকে খুলে বেঁধে দিলেন নিমজ্জিত বাসের গায়ে। প্রায় ৩৩ মিনিট পর ভেসে উঠে ঘোষণা দিলেন তিনি সন্ধান পেয়েছেন সেই বাসের।

সারা দেশে তখন এক্সক্লুসিভ নিউজ হচ্ছে, ‘নিমজ্জিত বাসটি উদ্ধার’।

চান মিয়ার জন্ম গাইবান্ধা জেলার মোল্লার চর এলাকায় চিথুলিয়া দিগর গ্রামে। বয়স ৩৭ বছর। টঙ্গী সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি শেষ করে ২০০০ সালে যোগ দেন ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সে। এরপর ঢাকার মিরপুর ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স ট্রেনিং কমপ্লেক্স থেকে অগ্নিনির্বাপণ বিষয়ে প্রাথমিক প্রশিক্ষণ নেন।

তার প্রথম পোস্টিং হয় পাবনায়। এখন আছেন চট্টগ্রামে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সে।

চান মিয়া জীবনের প্রথম উদ্ধার অভিযানে অংশ নেন বুড়িগঙ্গার তলদেশে। চট্টগ্রাম থেকে সদ্য প্রশিক্ষণ শেষ করে ঢাকার সিদ্দিকবাজার ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স কার্যালয়ে যোগ দেওয়ার কিছুদিনের মধ্যেই ২০০৪ সালে অংশ নিয়েছেন বুড়িগঙ্গায় নৌকাডুবি ও মাঝির মৃতদেহ উদ্ধার অভিযানে।

বুড়িগঙ্গার দূষিত ও কালচে পানির মধ্যে থেকে অভিযান শুরুর ৩০ মিনিটের মধ্যেই তিনি খুঁজে পান সেই মৃত মাঝিকে। নিজেই সেই লাশ তুলে এনেছিলেন ওপরে।

এমন বহু দুঃসাহসিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেছেন চান মিয়া।

বাংলাদেশ সময়: ১৮১৩ ঘণ্টা, জুলাই ২৩, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।