বাংলা অঞ্চলে আড়াইশ বছর আগেও ৭শ নদী ছিল। বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ, মানুষের নদী দখল ও দুষণ প্রক্রিয়ার ফলে আজ অধিকাংশ নদীর অস্তিত্ব বিপন্ন হওয়ার পথে।
‘ছোট নদী ছোট নয়’ এই স্লোগানকে ধারণ করে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শুরু হয়েছে তিনদিন ব্যাপী দ্বিতীয় জাতীয় নদী মেলা। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগ এবং দুর্যোগ ফোরামের আয়োজনে গত শনিবার সকাল ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জহির রায়হান মিলনায়তনে এই মেলার উদ্বোধন করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিনী।
তিনি বলেন, নদী আমাদের ঐশ্বরিক শুভেচ্ছা। প্রকৃতির এ দানকে ভালবাসতে হবে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শরীফ এনামুল কবীর। প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, আমাদের জীববৈচিত্র রক্ষায় নদী একটি গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে। এক শ্রেণীর বালু ব্যবসায়ীর কারনে আমাদের এই নদী তার গতি হারাতে বসেছে। এই নদী রক্ষা করতে না পারলে আমরা আমাদের সভ্যতাকে রক্ষা করতে পারব না। বাংলাদেশের নদী রক্ষার জন্য তিনি সরকারের প্রতি অনুরোধ জানান। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগকে প্রতিবছর এই নদী মেলা আয়োজনের আহবান জানান।
বাংলাদেশের বিভিন্ন আঞ্চলিক ও জাতীয় প্রতিষ্ঠানের স্ব-স্ব এলাকার নদীর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিগণ মেলায় অংশগ্রহণ করেন এবং দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের নদীর উৎস, গতি প্রবাহ ও বর্তমান অবস্থা তুলে ধরে সেসব নদীকে বাঁচানোর আবেদন করা হয়।
মেলায় সিইজিআইএস এর ডেপুটি এক্সিকিউটিভ অফিসার ড. মমিনুল হক সরকার তথ্য ও প্রামাণ্যচিত্র উপস্থাপন করেন। তিনি বাংলাদেশের নদী ইতিহাসের ওপর গবেষণা প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। সিজিআইএস এর এক গবেষণায় দেখা যায়, বর্তমানে বাংলাদেশে ৪০৫ নদী রয়েছে।
তিনদিন ব্যাপী এ মেলাকে কেন্দ্র করে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে নদী প্রেমিক সচেতন মানুষ ও গবেষকগণ ছুটে এসেছেন। মেলার কেন্দ্রস্থলে বিভিন্ন নদী গবেষক ও পরিবেশ বিশেষজ্ঞ নদী নিয়ে তাঁদের বিভিন্ন প্রকল্প ও গবেষাণা রিপোর্ট উপস্থাপন ও আলোচনা করেন।
মেলায় দেশের বিভিন্ন ঐতিহ্যবাহী নদী ও খালের নাম ব্যবহার করে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ২৩টি স্টল নিয়ে নদীর ওপর বিভিন্ন গবেষণা, তথ্যচিত্র ও চলচ্চিত্র প্রদর্শন করে। স্টলগুলোতে দেশের বিভিন্ন নদী ও খালের আদি ও বর্তমান অবস্থার তথ্য ও প্রামাণ্যচিত্র তুলে ধরা হয়।
দুর্যোগ ফোরামের পক্ষ থেকে অনুষ্ঠিত হয় শিশুদের মুক্ত ছবি আঁকা উৎসব ‘শিশুরাজ্য’। বিশ্ববিদ্যালয়ে অবস্থিত কলতান বিদ্যানিকেতনের শিশুদের অংশগ্রহনে অনুষ্ঠিত হয় মুক্ত ছবি আঁকার উৎসব। কলতান বিদ্যানিকেতনের শিক্ষার্থী তালহা, রাফি, নাহরিন, শান্ত, অপূর্বসহ প্রায় ২০ জন শিশু এই শিশুরাজ্যে মুক্তভাবে ছবি আকেঁন।
দুর্যোগ ফোরামের কো-অর্ডিনেটর সুমাইয়া আক্তার বলেন, আমাদের দেশের শিশুদের নদী সম্পর্কে ধারণাকে স্বচ্ছ করা এবং নদী প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করার জন্যই মূলত এই মুক্তভাবে ছবি আকাঁর আয়োজন করা হয়েছে। এটি কোন প্রতিযোগিতা নয়। এখানে শিশুরা তাদের নিজের ইচ্ছা মত মনের আনন্দে নদীর ছবি এঁকেছে।
মেলার শেষ দিন ছিল ২৫ জুলাই পর্যন্ত।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৪৫ ঘণ্টা, ২৫ জুলাই, ২০১১