ঢাকা, রবিবার, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ১৮ মে ২০২৫, ২০ জিলকদ ১৪৪৬

ফিচার

‘থ্রি অ্যাঙ্গেল’ থিওরিতে দেশসেরা রাজউক কলেজ

রিয়াজ রায়হান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭:৩৮, জুলাই ২৭, ২০১১
‘থ্রি অ্যাঙ্গেল’ থিওরিতে দেশসেরা রাজউক কলেজ

ঢাকা: বড় লোহার গেট পার হয়ে ভেতরে ঢুকলে যে কারোরই চোখে পড়বে বড় হরফে লেখা একটি বিশালাকৃতির বোর্ড। যাতে লেখা আছে ‘সাফল্যের সোনালী বছর-২০১১’।



এরপর আর বোধকরি কারোরই বুঝতে অসুবিধা হবে না সকাল থেকে এখানে কেন এত উৎসবের আয়োজন। কারণ এবারের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার (এইচএসসি) প্রকাশিত ফলে দেশসেরা হয়েছে রাজউক উত্তরা মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ।

পরীক্ষার ফল প্রকাশ হতে তখনও ঘণ্টা দুয়েক বাকি। কিন্তু দেশসেরার তকমা যাদের অঙ্গে মাখা হয়ে গেছে তাদের কি আর তর সয়!

তাইতো সকাল থেকে কলেজের হাজার হাজার শিক্ষার্থী ঢোল, বাঁশি, করতাল ইত্যাদি বাদ্যযন্ত্রের ছন্দে মাতিয়ে তোলে পুরো কলেজ প্রাঙ্গণ।

দুপুর দেড়টার দিকে কলেজের অধ্যক্ষ কর্নেল এএসএম মুশফিকুর রহমান হাজারো শিক্ষার্থীর মধ্যে দাঁড়িয়ে ঘোষণা করেন, ‘এবারের পরীক্ষায় আমাদের কলেজ সারা দেশে প্রথম হয়েছে। আমরা ঢাকা বোর্ডের দুটি ক্যাডেট কলেজকে পেছনে ফেলে প্রথম হয়েছি। ’

এরপর আর তাদের পায় কে!

চারিদিকে শুধু রাজউক, রাজউক রব। একে অন্যের গলা ধরে, হাতে হাত রেখে উল্লাসে ফেটে পড়ে বর্তমান ও সদ্য সাবেক (!) হওয়া কয়েক হাজার শিক্ষার্থী।

মাথার ওপর তখন তীব্র রোদে দম বের করা উত্তাপ। কিন্তু তা যেন গায়ে মাখার সময় নেই কারোরই।

এবারের এইচএসসি পরীক্ষায় এ কলেজ থেকে পরীক্ষায় অংশ নেওয়া ১ হাজার ৫০ জন শিক্ষার্থীর সবার হাতেই ধরা দিয়েছে সাফল্যের দেবী।

এখান থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৮৯১ জন। মোট ১০০ পয়েন্টের মধ্যে তাদের অর্জিত পয়েন্ট ৯৪.৬৪। যা সারা দেশের মধ্যে সর্বোচ্চ।

গতবার এ কলেজের অবস্থান ছিল ঢাকা বোর্ডে ৪র্থ, জিপিএ-৫ এর সংখ্যা ছিল ৪৯৮। অকৃতকার্য হয়েছিল মাত্র তিন জন।

এক বছরের মধ্যে পুরো ‘ইউটার্ন’ করেছে রাজউক কলেজ।

কী গোপন রহস্য লুকিয়ে আছে ঈর্ষণীয় এ সাফল্যের পেছনে?

সেই সাফল্যের গল্পই শোনালেন কলেজের অভিভাবক অধ্যক্ষ কর্নেল এএসএম মুশফিকুর রহমান।

‘আমরা অসম্ভবকে সম্ভব করেছি। দুটি ক্যাডেট কলেজকে পেছনে ফেলে প্রথম হয়েছি। সোজা কথা এটি একটি শক্তিশালী টিমওয়ার্কের ফসল। ’

তিনি বলেন, ‘থ্রি অ্যাঙ্গেল থিওরিতে এ ফল এসেছে। অর্থাৎ শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবকদের সম্মিলিত প্রচেষ্টা। সবার মধ্যে সমন্বয় করে শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়েছি। ’

অধ্যক্ষ বলেন, ‘বছরের শুরুতেই একটি একাডেমিক ক্যালেন্ডার তৈরি করা হয়। এর ভিত্তিতে শিক্ষার্থীদের সিলেবাস নির্দিষ্ট করে তা তাদের হাতে পৌঁছে দেওয়া হয়। এরপর শুরু হয় সে ক্যালেন্ডার অনুযায়ী ক্লাস, পরীক্ষা, ইত্যাদি পর্ব। ’

শিক্ষকদের ভূমিকা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘ভালো ফলাফলের জন্য ভালো শিক্ষক দরকার। এখানে আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে শিক্ষকদের দেশে ও দেশের বাইরে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়। যারা প্রশিক্ষণ নিয়ে আসেন, তারা অন্যদের সঙ্গে তা শেয়ার করেন। এতে করে সবাই প্রশিক্ষিত ও দক্ষ হয়ে ওঠে। এটি ছাত্রদের গড়ে তোলার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ’

তিনি বলেন, ‘প্রতিটি শিক্ষার্থীর দৈনন্দিন পারফরম্যান্স এসএমএসের মাধ্যমে অভিভাকদের কাছে পাঠানো হয়। যাতে করে তারা নিজেদের সন্তানদের ব্যাপারে সতর্ক ও যত্নবান হতে পারেন। এছাড়া অপেক্ষাকৃত দুর্বল শিক্ষার্থীদের জন্য আলাদা ক্লাসের ব্যবস্থা করা হয়। ’

এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, ‘ভালো কিছুর জন্য ভালো নিয়মের দরকার। এজন্য এখানে ছাত্র-শিক্ষক- অভিভাবক সবাইকে নিয়ম মেনে চলতে হয়। এজন্যই এ সাফল্য এসেছে। ’

বর্তমানে যে পরিমানে পাস করছে এবং জিপিএ-৫ অর্জন করছে সে অনুযায়ী দেশে উচ্চ শিক্ষার ভালো প্রতিষ্ঠান নেই। এর প্রতিকারের উপায় নিয়ে অধ্যক্ষ বলেন, ‘সরকারি প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোও মান উন্নত করে উচ্চ শিক্ষায় ভূমিকা রাখতে পারে। তবে তাদের বিরুদ্ধে বাণিজ্যিকিকরণের যে অভিযোগ রয়েছে, তা রোধকল্পে সরকারকে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে। ’

এবারে প্রথমবারের মতো পরীক্ষার ফল কাগজের পরিবর্তে ইন্টারনেটের মাধ্যমে প্রকাশ করা হলো। তাতে কী ধরনের সমস্যা হয়েছে তা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এ পদ্ধতি খারাপ নয়। তবে প্রথমবারের মতো হওয়ার তাতে কিছু সমস্যা দেখা গেছে। ইন্টারনেটের পাশাপাশি কাগজেও ফল দেওয়া উচিত ছিল। তাতে পূর্ণাঙ্গ ফল পেতে বিড়ম্বনা পোহাতে হতো না। ’

ফলের ভিত্তিতে কলেজের স্থান নির্বাচনের বর্তমান পদ্ধতি নিয়ে তিনি বলেন, ‘ আগে যে পদ্ধতিতে স্থান নির্ধারণ করা হতো তা ছিল অগ্রহণযোগ্য। তাতে কলেজের সঠিক চিত্র ফুটে উঠত না। কিন্তু বর্তমানে যে পাঁচটি পদ্ধতিতে কলেজের অবস্থান নির্ণয় করা হয়, তা অত্যন্ত যুগোপযোগী ও বৈজ্ঞানিক। ’

রাজউক কলেজের এ অভাবনীয় সাফল্যের জন্য সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা ও অভিনন্দন জানান অধ্যক্ষ কর্নেল মুশফিকুর রহমান।

শুরুতে বলছিলাম একটি বোর্ডের কথা। যেখানে লেখা আছে কলেজের এ বছরের কিছু গৌরবগাঁথা ইতিহাস।

এ বোর্ডের মাধ্যমে জানা যায়, এবারের মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) পরীক্ষাতেও দেশসেরা হয়েছিল এ প্রতিষ্ঠান। একই ফল রয়েছে জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) পরীক্ষাতেও।  

এছাড়া সম্প্রতি শেষ হওয়া আন্তঃকলেজ ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়নের ট্রফি উঠেছে তাদেরই ঘরে। বাংলাদেশ একাডেমি অব সায়েন্স আয়োজিত বিজ্ঞান উৎসবেও তারা অর্জন করেছে সর্বাধিক পুরস্কার।

সব মিলিয়ে এ বছরকে অনেকদিন ধরে মনে রাখতেই পারেন রাজউক উত্তরা মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।

বাংলাদেশ সময় : ১৭৩০ ঘণ্টা, জুলাই ২৭, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।