ঢাকা, রবিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ফিচার

লেবু-আনারসে মোড়ানো মাক্রিয়াছড়া পাহাড়

আসাদ জামান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৩১ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১১, ২০১৬
লেবু-আনারসে মোড়ানো মাক্রিয়াছড়া পাহাড় ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

শ্রীমঙ্গল থেকে ফিরে: চায়ের শহর শ্রীমঙ্গল থেকে বিকেল সাড়ে ৪টায় সিদ্দিক চাচার (টি হ্যাভেন রিসোর্টের পরিচালক আবু সিদ্দিক মো. মুসা) মিত্সুবিশি জিপ নিয়ে মাক্রিয়াছড়া পাহাড়ের উদ্দেশ্যে যখন রওনা দিলাম, তখন মনের গভীরে কয়েকটি প্রশ্ন বার বার নড়েচড়ে উঠছিল।  

আশ-পাশে এতো দর্শনীয় স্থান থাকতে শ্রীমঙ্গল শহর থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরে দুর্গম পাহাড়ে কেন যাচ্ছি? বাংলাদেশের অন্যতম পযর্টন শহর শ্রীমঙ্গলে বাংলানিউজ কর্মীদের পিতার আসন দখল করা সিদ্দিক চাচা কেনই-বা পাশের জেলা হবিগঞ্জের বাহুবল উপজেলার ফয়জাবাদ হিলস্‌ মৌজার মাক্রিয়াছড়া পাহাড়ে পাঠাচ্ছেন? কী রয়েছে সেখানে?

দেড়দিনের সফরে শ্রীমঙ্গল এসে হাতের কাছের লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান, নাগালের মধ্যে হাইল হাওর আর টিলার খাঁজে খাঁজে ভুবনবিখ্যাত সব চা বাগানের অপার্থিব সৌন্দর্য উপভোগ না করে কেনই-বা বোকার মতো মাক্রিয়াছড়া পাহাড়ের দিকে ছুটছি!

পাহাড়ের উঁচু-নিচু পথ পাড়ি দেওয়ার জন্য আদর্শ বাহন মিত্সুববিশি জিপে চড়ে খুঁত-খুঁতে মন নিয়ে এগুচ্ছিলাম।

গাড়িচালক রুস্তম আলীকে জিজ্ঞেস করলাম, যেখানে যাচ্ছি-সেখানে কী আছে? যেতে কতোক্ষণ লাগবে?

রুস্তম আলী বললেন, যেতে ঘণ্টাখানেক লাগবে। দেখার মতো অনেক কিছুই আছে। আনারস আর লেবু বাগান দেখার জন্য স্যার (সিদ্দিক চাচা) আপনাদের পাঠিয়েছেন। দেখে মজা পাবেন।

শ্রীমঙ্গল শহর থেকে উত্তর-পশ্চিম দিকে প্রায় ১০ কিলোমিটার যাওয়ার পর ঢাকা-মৌলভীবাজার মহাসড়ক থেকে নেমে আমাদের জিপগাড়ি সরু পথ ধরে এগোতে লাগলো। সমতল ভূমির উপর দিয়ে ইট বিছানো রাস্তা ধরে এগিয়ে যাচ্ছে জিপ। আরও দুই কিলোমিটার যাওয়ার পর গাড়ি চালক রুস্তম আলী বললেন, উ....ই.....যে পাহাড় দেখা যায়!

পড়ন্ত বিকেল। পশ্চিম আকাশে লাল আভা ছড়িয়ে অস্ত যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে সূর্য। আর সুর্যের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে আমরাও এগিয়ে যাচ্ছি মাক্রিয়াছড়া পাহাড়ে।

শ্রীমঙ্গল শহর থেকে যাত্রা শুরুর ৫০ মিনিট পর বিকেল সোয়া পাঁচটায় আমরা যখন মাক্রিয়াছড়া পাহাড়ে পৌঁছালাম, তখন সূর্যের লাল আভায় পাহাড়ের লালচে মাটি রীতিমতো লাল হয়ে উঠেছে। আনারসের বেগুনি রঙের কচি ডাটায় লাল সূর্যকিরণ ঠিকরে পড়ছে।
 
লেবু আর আনারসে মোড়ানো মাক্রিয়াছড়া পাহাড়ে মধ্য আগস্টেই শেষ হয়ে গেছে আনারসের মৌসুম। সব বাগান থেকেই তুলে নেওয়া হয়েছে আনারস। তবে নতুন কন্দ থেকে গজানো চারা গাছের ফাঁক-ফোকরে দেখা মিললো বেশ কিছু লাল টুকটুকে কচি আনারস।
 
সদ্যোজাত শিশুর মতো পবিত্রতার ঘ্রাণ ছড়ানো কচি আনারসের দিকে তাকালে হাজার বছরের সৌন্দর্য উপভোগ এক মুহূর্তেই সম্ভব। প্রয়োজন কেবল দেখার মতো চোখ, অনুভব করার মতো হৃদয় আর ধারণ করার মতো একটা দেমাগ!

হবিগঞ্জের বাহুবল উপজেলার ফয়জাবাদ হিলস্ মৌজায় ১০ থেকে ১২ কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত এই মাক্রিয়াছড়া পাহাড় পুরোটাই প্রায় আনারস আর লেবু বাগানে মোড়ানো। ব্যক্তি মালিকানাধীন এই বাগানগুলো থেকেই সারা দেশে লেবু ও আনারসের মোট চাহিদার বিশাল অংশ পূরণ করা হয়।
 
পাহাড় ও বাগান মালিকরা থাকেন শ্রীমঙ্গল শহর বা হবিগঞ্জের বাহুবলে। তাদের হয়ে পাহাড় ও বাগান পাহারা দেন হতদরিদ্র, খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষ। সমতল থেকে পরিবারসহ পাহাড়ের এসে ঢাল ও চূড়ায় ঘর বানিয়ে বংশ পরম্পরায় বাস করেন তারা।
 
শহর বা সমতল থেকে কেউ পাহাড় দেখতে গেলে অতি আপনজন মনে করে বাগান থেকে পাকা আনারস ও সতেজ লেবু ছিঁড়ে এনে আপ্যায়ন করেন তারা। চাইলে ব্যাগ ভরেও নিয়ে আসা যায়। পাহাড়ের মতো অটল হৃদয়ের মানুষগুলো এর বিনিময়ে কারও কাছে কিছু চানও না।
 
আবার পাহাড়ের ‍অপার সৌন্দর্য দেখার জন্য সর্বোচ্চ চূড়ায় উঠতে চাইলে নিজের কাজ ফেলে সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসবেন তারা। সুতরাং নির্মল আনন্দ উপভোগের জন্য আজই বেরিয়ে পড়ুন মাক্রিয়াছড়া পাহাড়ের উদ্দেশ্যে।
 
বাংলাদেশ সময়: ১০২৯ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১০, ২০১৬
এজেড/এসএনএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।