ঢাকা, রবিবার, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ১৮ মে ২০২৫, ২০ জিলকদ ১৪৪৬

ফিচার

লন্ডনে রিকশার আধিপত্য বাড়ছে

শোয়ায়েব চমক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১:১১, আগস্ট ৬, ২০১১
লন্ডনে রিকশার আধিপত্য বাড়ছে

সেন্ট্রাল এবং পশ্চিম লন্ডনের বিখ্যাত ‘ব্ল্যাক ক্যাব’ ট্যাক্সিচালকদের সাথে স্থানীয় রিকশাচালকদের যাত্রী নিয়ে প্রতিযোগিতা চলছে। জুন, জুলাই এবং আগস্ট মাস হচ্ছে লন্ডনের টুরিস্ট সিজন।

এ সময় সারা পৃথিবী থেকে হাজার হাজার পর্যটক আসেন এই শহরে ঘুরতে। গত কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশের রিকশা পর্যটকদের বেশ আকৃষ্ট করেছে। তবে এই রিকশা দেখতে হুবহু বাংলাদেশের রিকশার মত নয়। বেশ মডার্ন রিকশা!! লন্ডন ঘুরতে আসা পর্যটকরা বেশ আগ্রহ নিয়ে এই রিকশা করে ঘুরে বেড়ান। ফলে লন্ডনে রিকশার আধিপত্য দিন দিন বাড়ছে।

‘ব্ল্যাক ক্যাব’-এর চালকরা সম্প্রতি অভিযোগ করেছেন, রিকশার কারণে শহরে গাড়ি চালানো অনেক বিপজ্জনক হয়ে দেখা দিচ্ছে। কারণ এই রিকশাচালকরা অনেক বেপরোয়াভাবে চলাচল করছে, তারা ট্র্যাফিক সিগনাল মানছে না। এখানে-সেখানে রিকশা দাঁড় করিয়ে যানজট তৈরি করছে। এছাড়া তারা অভিযোগ করেছে এসব রিকশা একদমই নিরাপদ নয়, যাত্রীদের জন্য এটি খুবই বিপজ্জনক।

অপরদিকে রিকশা অপারেটরদের পক্ষ থেকে প্রতিবাদ জানিয়ে বলা হয়েছে, আসলে ট্যাক্সি ড্রাইভাররা প্রতিযোগিতার ভয়ে এসব অভিযোগ করছে। অল্প দূরত্বের পথ স্বল্প খরচে পর্যটকেরা রিকশার মাধ্যমে চলাচল করতে পারছেন, যেখানে সেই পরিমাণ দূরত্বের জন্য ট্যাক্সি ড্রাইভাররা তিন থেকে চার গুণ ভাড়া বেশি দাবি করে থাকে।

পশ্চিম লন্ডনের ওয়েস্টমিন্সটার সিটি কাউন্সিল এ সংক্রান্ত একটি নীতিমালা তৈরি করার চিন্তাভাবনা করছে। যাত্রীদের সুবিধার্থে তাদের পরিবহন নিরাপত্তা নিশ্চিত করা ও একটি নিয়মতান্ত্রিক ভাড়া আদায় পদ্ধতি প্রচলন করার জন্য এই নীতিমালা তৈরি করা হবে।

সিটি কাউন্সিল আশা করছে, আগামী বছর অলিম্পিক উপলক্ষে এই রিকশার পরিমাণ আরও বাড়বে। যাত্রীরা নগদ অর্থে ভাড়া পরিশোধ করে বিধায় এই রিকশাচালকরা তেমনভাবে স্থানীয় কাউন্সিলকে ট্যাক্স দেয় না। এতে প্রতি বছর বেশ একটা বড় অঙ্কের ট্যাক্স ফাঁকি দেয়া হচ্ছে বলে সিটি কাউন্সিল মনে করছে। ২০১২-এর লন্ডন অলিম্পিক উপলক্ষে অনেকেই নগদ অর্থ কামাবার এই সুযোগ নিয়ে শহরে রিকশার পরিমাণ বাড়িয়ে দেবে বলে কাউন্সিল এখনই এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নেবার চিন্তা করছে।

অপরদিকে ব্ল্যাক ট্যাক্সিক্যাবগুলো যাত্রীদের কাছ থেকে নিয়মতান্ত্রিকভাবে ভাড়া আদায় করে বলে কাউন্সিল এদের কাছ থেকে যথাযথ ট্যাক্স পেয়ে থাকে।

ওয়েস্টমিন্সটার সিটি কাউন্সিল জানিয়েছে, বর্তমানে সেন্ট্রাল ও পশ্চিম লন্ডনে প্রায় ৬০০ রিকশা (পেডি-ক্যাব) চলাচল করছে, বেশির ভাগ চলছে শহরের সোহো এবং কভেন্ট গার্ডেন এলাকায়। এসব রিকশার কোনো লাইসেন্স নেই। এমন কি এগুলো রাস্তায় চলাচলের উপযোগী কিনা এ ব্যাপারে কোনো তথ্য সিটি কাউন্সিলের কাছে নেই।

ক্যাব ড্রাইভারদের সংগঠন দ্য ন্যাশনাল ইউনিয়ন অব রেল, মেরিটাইম অ্যান্ড ট্রান্সপোর্ট ওয়ার্কার্সের (আরএমটি) নেতা বব ক্রো ‘ট্রান্সপোর্ট ফর লন্ডন’কে এই ব্যাপারে দ্রুত পদক্ষেপ নেবার জন্য আহবান জানিয়েছে। তিনি শঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, জনসাধারণের কোনো ধারণাই নেই যে, তারা কতটুকু জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এসব রিকশায় চলাচল করছেন।

১৮ মাস ধরে লন্ডনে রিকশা চালাচ্ছেন ৩০ বছর বয়সী কলম্বিয়ান অস্কার বোরগাস। তিনি জানান, সাবধানতার সাথে রিকশা চালালে এটা আসলে কোনো ব্যাপার না। এই রিকশা খুবই নিরাপদ এবং পর্যটকদের জন্য খুবই আনন্দদায়ক। তবে হ্যাঁ এটা ঠিক, সব রিকশা ড্রাইভার ভালো না, ঠিক তেমনি সব ক্যাব ড্রাইভারও ভালো না। অনেক ক্যাব ড্রাইভার আছে যারা খুবই বেপরোয়াভাবে ট্যাক্সি চালায়।

ট্রান্সপোর্ট ফর লন্ডন সূত্র জানিয়েছে, তাদের কাছে এই মুহূর্তে এসব রিকশার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার ব্যাপারে আইনগত কোনো অধিকার নেই। তবে তারা স্থানীয় কাউন্সিল এবং সরকারের সাথে এ সংক্রান্ত নীতিমালা তৈরিতে কাজ করছে।

লন্ডনে রিকশা চালাতে এই মুহূর্তে কোনো ধরনের লাইসেন্সের প্রয়োজন পড়ে না। কারণ এই পরিবহন ব্যবস্থার মাধ্যমে অর্থ উপার্জন করার ব্যাপারটি সরকার বা পরিবহন কর্তৃপক্ষগুলো কখনও চিন্তা করেনি। পর্যটকদের আকৃষ্ট করার জন্য এতদিন রিকশা ব্যাবহার করা হতো। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে সেন্ট্রাল লন্ডনে এসব রিকশার পরিমাণ বেড়ে যাবার কারণে যানজট বৃদ্ধি পেয়েছে এবং রিকশার কারণে বেশ কিছু দুর্ঘটনা ঘটার কারণে ব্রিটিশ ট্রান্সপোর্ট অথরিটি লোকাল কাউন্সিলকে এ ব্যাপারে সতর্ক করলে বিষয়টি আলোচনায় উঠে আসে।    

বাংলাদেশ স্থানীয় সময় ২১০৫ ঘণ্টা, আগস্ট ৬, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।