ঢাকা, রবিবার, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ১৮ মে ২০২৫, ২০ জিলকদ ১৪৪৬

ফিচার

স্বদেশেই সাত্তারের বিশ্বভ্রমণের স্বপ্ন চুরি

শরিফুল ইসলাম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১:০৮, আগস্ট ৭, ২০১১
স্বদেশেই সাত্তারের বিশ্বভ্রমণের স্বপ্ন চুরি

একটি দুরন্ত স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে গাড়ি চালিয়ে বিশ্বভ্রমণের নেশায় বেরিয়ে পড়েছিলেন কানাডা অভিবাসী বাংলাদেশী আবদুস সাত্তার। তিনিই গাড়ি চালিয়ে বিশ্বভ্রমণে বের হওয়া প্রথম বাঙালি তথা প্রথম এশিয়ান।



নিজেকে জানার পাশাপাশি বিশ্বকে জানা, পরিবেশ রক্ষা আর বিশ্বব্যাপী ডায়াবেটিক সচেতনতার জন্য এই যাত্রায় বেরিয়েছিলেন তিনি। পাশে নিয়েছিলেন কানাডিয়ান বন্ধু স্যাল বয় আর দীর্ঘ দিনের সাথি মিতসুবিশি আউটল্যান্ডার ২০০৬ মডেলের গাড়িটি।

পেশায় হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা সাত্তার উল্লেখযোগ্য কোনো স্পন্সর ছাড়াই নিজ উদ্যোগে ২০০৯ সালের ২ আগস্ট কানাডার টরন্টো থেকে বিশ্বযাত্রা শুরু করেন। কানাডা, আমেরিকা, ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, জার্মানি, পোল্যান্ড, অস্ট্রিয়া, ইউক্রেন, রুমানিয়া, বুলগেরিয়া, তুরস্ক, ইরানসহ ২২টি দেশ ভ্রমণ শেষে উপস্থিত হন পাকিস্তানে।

পাকিস্তান থেকে সমুদ্রপথে গাড়িটি বাংলাদেশের উদ্দেশ্যে তুলে দিয়ে আকাশপথে ২০১০ সালের ৬ মে বাংলাদেশে আসেন আবদুস সাত্তার। গাড়িটি বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বন্দর কাস্টমসে পৌঁছায় ২০১০ সালের ২৯ মে।
    
তুরস্কে পুলিশবেশী ডাকাতের কবলে সর্বস্ব খোয়ালেও আবদুস সাত্তারের প্রকৃত বিপত্তি শুরু হয় বাংলাদেশে গাড়ি খালাস করতে গিয়ে। বিভিন্ন টেবিল আর বিভিন্ন দরজা ঘুরে কমলাপুর কাস্টমস অফিসে যোগায়োগ করলে বলা হয়, প্রধান আমদানি নিয়ন্ত্রকের অনুমোদন লাগবে।

প্রধান আমদানি নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় থেকে বলা হয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমতি লাগবে লাগবে। অনুমতি নিয়ে চট্টগ্রাম কাস্টমসে গেলে তারা বলেন এটা আপনাদের জন্য প্রযোজ্য নয়। এই নিয়ম প্রকৃত বিদেশীদের (সাদা চামড়া) জন্য। আপনারা দূতাবাসের মাধ্যমে এনবিআর থেকে বিশেষ অনুমোদন জোগাড় করুন।

দূতাবাসে যোগাযোগ করা হলে বলা হয়, কানাডিয়ান পাসপোর্ট ব্যবহার করলেও জাতিগতভাবে তুমি একজন বাংলাদেশী। তোমার সমস্যা তুমি নিজের মতো করে সমাধান করো।

এনবিআরে যোগাযোগ করা হলে সেখান থেকে বলা হয়, এভাবে অনেকেই বিদেশ থেকে গাড়ি এনে বাংলাদেশে বিক্রি করে চলে যায়। বাংলাদেশে এই গাড়ি ব্যবহার করতে হলে আপনাকে গাড়ির সমপরিমাণ (৯৪ লাখ ৫৮ হাজার) টাকার ব্যাংক গ্যারান্টি দিতে হবে।

ক্লান্ত-বিপর্যস্ত সাত্তার খুব বেদনার সঙ্গে জানালেন, তুরস্কে সর্বস্ব খুইয়ে আসায় এত টাকা আমার পক্ষে জমা দেওয়া সম্ভব নয়। তাই গাড়ি ছাড় করানোর দুশ্চিন্তায় গত ১৫ মাসে আমি ১৫ পাউন্ড ওজন হারিয়েছি। প্রথমেই যদি আমাকে বলে দেওয়া হতো বাংলাদেশে সিডিপি (কান্ট্রি ড্রাইভ পাসওয়ে) ছাড়া ভ্রমণ করা সম্ভব নয়, তবে আমি অন্য কোনো দেশে চলে যেতাম। এমনকি এতদিনে পৃথিবীর অর্ধেক ঘুরে ফেলতে পারতাম।

এভাবে নিজের সর্বশেষ অবস্থা বাংলানিউজের কাছে তুলে ধরে আবদুস সাত্তার আরো বললেন, ‘ইতিমধ্যে পোর্টরেন্ট ৭ লাখ ৩১ হাজার টাকা এবং অন্যান্য খরচ প্রায় ৩ লাখসহ মোট ১০ লাখ টাকা ড্যামারেজ ধরা হয়েছে। আগামী ১৫ আগস্টের মধ্যে এই টাকা জমা না দেওয়া হলে গাড়ি নাকি নিলামে তোলা হবে। তাই এই মুহূর্তে এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে প্রধানমন্ত্রীসহ সব উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার কাছে আবেদন জানাচ্ছি, প্লিজ আপনারা আমার সমস্যার সমাধানে এগিয়ে আসুন। ’

মুক্তিযুদ্ধের সময় ৮ নম্বর সেক্টরে যুদ্ধ করা যশোরের এই বীর মুক্তিযোদ্ধা নিজের দুঃখের কথা বলতে গিয়ে বলেন, ‘একাত্তরে জান বাজি রেখে যেমন যুদ্ধ করেছি, তেমনি বিশ্বভ্রমণে বের হয়ে লালসবুজের পতাকা মাথায় তুলে বিশ্বের পথে পথে বাংলাদেশের প্রচার করেছি। অথচ নিজের দেশে এসে আমাকে সেই লালসবুজ পতাকা মাথা থেকে নামিয়ে ফেলতে হবে, এটা ছিল আমার কল্পনারও বাইরে। এরচে বড় ব্যথা আমার কাছে আর কিছু নেই। ’

নিজের স্বপ্নভঙ্গের দুঃখের কথা তুলে ধরে তিনি আরো বলেন, ‘আমার স্বপ্ন ছিলো ২-৩ বছরের মধ্যে বিশ্বভ্রমণ শেষে গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ডস রেকর্ডসে নাম লেখানো। সেই লক্ষ্যে আমি ২৩টি দেশের ৮৫ থেকে ৯০ হাজার কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়েছি। গিনেস কর্তৃপক্ষের নিয়ম অনুসারে ভ্রমণে একাধিক গাড়ি ব্যবহার করা যায় না। তাই জন্মভূমি তোমার মাটিতেই আমার স্বপ্ন আজ চুরি হতে বসেছে। গাড়ি না পেলে এই স্বপ্ন আর কখনই পূরণ হবে না। ’

বাংলাদেশ স্থানীয় সময় ২২৫৫ ঘণ্টা, আগস্ট ৭, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।