দেশে অপমৃত্যুর হার বেড়েই চলেছে। চলছে হত্যা, দুর্ঘটনায় প্রানহানি, পানিতে ডুবে অকালমৃত্যু।
কিছুদিন আগেই আমিনবাজারে ছয় তরুণ শিক্ষার্থীকে ডাকাত সন্দেহে পিটিয়ে মেরে ফেলা হলো। কোম্পানিগঞ্জে পুলিশের সহযোগিতায় গণপিটুনিতে প্রাণ দিলো এক টকবগে তরুণ।
সংবাদ মাধ্যমের কল্যাণে এসব মৃত্যু আজকাল নজরে আসে। কিন্তু তারপরও আড়ালে থেকে যায় বহু ঘটনা।
কোনো অপমৃত্যুই মেনে নেওয়ার নয়.. আর টগবগে তরুণ-তরুণীর মৃত্যু কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারেনা। বুকে হাজারও স্বপ্ন, হাজারও না বলা কথা নিয়ে জীবনের পথে এগিয়ে চলা এই তরুণরা অকালে প্রাণ হারালে তা বিশ্বের ক্ষতি। একজন তরুণের মাঝে যে অপার সম্ভাবনা থাকে তা নিমেষে শেষ হয়ে যায় এমন একেকটি অপমৃত্যুতে।
জীবনের সকল সম্ভাবনা নিয়ে সমুদ্রে ডুবে মারা গেলো কণ্ঠশিল্পী আবিদ। সবশেষ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে আত্মহত্যা করলো সুমি। মেধাবী সুমি অনার্সে ফার্স্টক্লাস ফার্স্ট। মাস্টার্স পরীক্ষা দিয়ে তেমনই একটি ফলের প্রত্যাশায় এই সুমির জীবনে রচিত হয়েছিলো কত কী যে স্বপ্ন। কিন্তু সুমি নিজেই সে স্বপ্ন নিজ হাতে মুছে দিয়ে চলে গেছে অন্তন্তের পথে। এ মৃত্যু রোধ করা প্রয়োজন। কীভাবে?
স্বপ্নযাত্রা স্বপ্নের কথা বলে, সম্ভাবনার কথা বলে। তরুণদের এমন মৃত্যু রুখে দিতে হয়তো সবচেয়ে বেশি দরকার সচেতনতা। অপমৃত্যুর গুটি কয় কেসস্টাডি তুলে ধরে সে সচেতনতা জাগ্রত করার আর তরুণদের মধ্যে জীবনের আশা জাগানোর একটি চেষ্টা স্বপ্নযাত্রার। সুমির মৃত্যুর পর এবারের প্রসঙ্গ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়:
মারজিয়া জান্নাত সুমি:

রফিকুল ইসলাম রোটন:

মনোয়ারা খাতুন তারা: ২০১০ সালের ১১ অক্টোবর দুপুরে সাভারের ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের আমিনবাজারের কাছে তুরাগ নদীতে বাস ডুবির ঘটনায় মারা যান মনোয়ারা খাতুন তারা। তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালেয়ের মাইক্রোবায়োলজী বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। ঢাকা থেকে সাভার উদ্দেশ্যে বৈশাখী পরিবহনের একটি যাত্রীবাহী বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে অর্ধশত যাত্রী নিয়ে রাস্তার পাশে তুরাগ নদীতে পড়ে নিমজ্জিত হয়। ওই বাসে থাকা মনোয়ারা খাতুন তারা গুরুতর আহত হয়। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিলে দায়িত্বরত চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। মনোয়ারা খাতুন ২০০৭-০৮ শিক্ষাবর্ষে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজী বিভাগে ভর্তি হয়। তিনি জাবির প্রীতিলতা ছাত্রী হলের আবাসিক ছাত্রী ছিলেন।
সোহান-উল-হাসান: ২০১০ সালের ২৮ জুলাই মঙ্গলবার রাত ১১টার দিকে টেকনাফের নাফ নদীর পাশে শাহ পরীর দ্বীপ থেকে সোহান-উল-হাসানের লাশ উদ্ধার করে টেকনাফ থানা পুলিশ। সোহান জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ সালাম বরকত হলের আবাসিক ছাত্র ও প্রাণিবিদ্যা বিভাগের ৩৩ তম ব্যাচের ছাত্র ছিলেন। তার গ্রামের বাড়ি মেহেরপুর জেলার বড় বাজার। তার পিতার নাম মো: বাবর আলী। দুই ভাই ও এক বোনের মধ্যে সোহান ছিলেন সবার ছোট। সোহানের বিভাগের একাধিক শিক্ষার্থী দাবি করেন, অধিকাংশ সময় সোহান বিষন্ন থাকত। তার হলের কক্ষ থেকে উদ্ধার হওয়া এক ডায়রিতে সোহান দাবি করেছিলেন, ‘সেশন জটে অতিষ্ট হয়ে আমি সুইসাইড করলাম। ’ মৃত্যুর আগেও সোহান তার প্রিয় বন্ধুকে ২৩ তারিখ রাত ১০ টায় ইমেইল করেছিলেন। সেখানে লিখেছিলো ‘মনসুর আমার রুমের লকারটা খুলে দেখো কিছু একটা চমক অপেক্ষা করছে’। মনসুরের ইমেইলটা দেখেছিলো ২৫ তারিখ বিকাল সাড়ে চারটায়। যদি আগে দেখতো তবে প্রিয় বন্ধুকে হয়তো হারাতে হতো না। লকারে চিরকুটে সোহান তার মৃত্যুর বিষয়টি লিখে গেছে।
ফারহা-নাজ-রুহী: ২০১০ সালের ১২ এপ্রিল সোমবার সাভারের ব্যাংক কলোনী এলাকায় ই-২ নং বাসায় বৈদূতিক পাখার সাথে ওড়না পেচিয়ে আত্মহত্যা করে ফারহা-নাজ-রুহী। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের ৩৭ তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন। রুহীর সহপাঠীরা জানায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের ৩২তম ব্যাচের ছাত্র শাখাওয়াত হোসেন নামক এক ছাত্রের সাথের তার সম্পর্ক ছিল। সেই ঘটনা ধরে রুহী ও শাখাওয়াত পূর্বে সাভারের ব্যাংক কলোনী এলাকায় ই-২ নং বাসা স্বামী স্ত্রী পরিচয় দিয়ে ভাড়া নেয়। তবে রুহী সেখানে অনিয়মিত ভাবে যাওয়া আসা করত। শাখাওয়াত ঘনিষ্ট কিছু ছবি তুলে রুহীকে ব্লাকমেইল করা হয়েছিল আর একারনেই সে আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছে বলে দাবী তার সহপাঠী ও পরিবারের। রুহীর বাবা আব্দুল কাদের। সে ফেনী সরকারী কলেজের দর্শন বিভাগের অধ্যাপক ও সভাপতি।
সায়মা সিদ্দিকা শিখা: ২০১০ সালের ২৬ মার্চ ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লার দৌলপুর এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন সায়মা সিদ্দিকা শিখা। সায়মা সিদ্দিকা শিখা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ২০০২-২০০৩ শিক্ষাবর্ষের ছাত্রী ছিলেন। তার বাবা বিসিক চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত সচিব) সিদ্দিকুর রহমান। ঐ সড়ক দুর্ঘটনায় সিদ্দিকুর রহমান দুই মেয়ে শিখা ও সাদিয়া মারা যায়। শিখার মা বেসরকারি সংস্থা জাগরণীর নির্বাহী পরিচালক পারভিন তাহমিনা সিদ্দিক ওই দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হন।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৫১ ঘণ্টা, আগস্ট ১০, ২০১১