গাইবান্ধা: অনাথ শিশুদের জন্য গাইবান্ধায় অজ পাড়াগাঁয়ে অনাথ একাডেমি গড়ে তুলে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন স্থানীয় শিক্ষক ইমদাদুল হক মিঠু। সরকারি কোনও সাহায্য-সহযোগিতা ছাড়াই জেলার সাদুল্যাপুর উপজেলার ভাতগ্রাম বিরাহীমপুর গ্রামে সমাজের অবহেলিত আর সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের এ আশ্রয়স্থলটি প্রতিষ্ঠা করেছেন তিনি।
এখানে বিনামূল্যে অনাথ শিশুদের আবাসিক ব্যবস্থাসহ প্রথম থেকে দশম শ্রেণী পর্যন্ত পাঠদানের ব্যবস্থা আছে। যদিও এসএসসি পাশের পর উচ্চ শিক্ষা গ্রহণের কোনও নিশ্চয়তা নেই এসব অনাথ শিশুদের। তবে নিয়মিত ভাল ফলাফলের ধারাবাহিকতায় উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করে স্বপ্ন পূরণের নীলাকাশে ডানা মেলতে দৃঢ়প্রতীজ্ঞ এখানে আশ্রয় পাওয়া অনাথসহ প্রতিবন্ধী এবং সুবিধাবঞ্চিত শিশুরা।
এলাকা ঘুরে জানা যায়, ২০০৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হলেও একাডেমির আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু ২০০৭ সালে। ইমদাদুলের উদ্যোগে গড়ে ওঠা অনাথ শিশুদের এ প্রতিষ্ঠানে এখন ১৫জন অনাথ, একজন প্রতিবন্ধি, ৫৮ জন সুবিধা বঞ্চিতসহ ৪ শতাধিক ছাত্রছাত্রী লেখাপড়া করছে।
দশম শ্রেণীর ছাত্র পিতৃহারা নিলু মিয়া (১৫) বলে, ‘আমার ইচ্ছা বড় হয়ে আমার মতো গরীব ছাত্রদের সহযোগিতা করা। আমার মতো কষ্ট করে যাতে তাদের লেখাপড়া করতে না হয়। ’
নবম শ্রেণীর ছাত্র লালমিয়া (১৪) জানায়, ডাক্তার হয়ে সে মানুষের সেবা করতে চায়।
অষ্টম শ্রেণীর অনাথ ছাত্রী রোকসানা(১৩) বলে, ‘আমার স্বপ্ন ইঞ্জিনিয়ার হবো। টাকা উপার্জন করে গরীব-দুঃখী মানুষকে সাহায্য করব। ’
একাডেমির প্রতিষ্ঠাতা ইমদাদুল হক মিঠু বাংলানিউজকে বলেন, ‘প্রায় ১২ লাখ টাকা ব্যয়ে ৩২ শতক জমির ওপর একাডেমির অবকাঠামো গড়ে তোলা হয়। প্রথমে নিজের সঞ্চিত ৫ লাখ টাকা দিয়ে এ কাজ শুরু করি। ’
পরে স্থানীয় সামজসেবী আতবজান বেগম ১৫ শতক জমিদান করেন। এখন ৩২ শতক জমির ওপর পাঁচ কক্ষের দু’টি আধা-পাকা ঘরে চলছে শিক্ষাদান কার্যক্রম।
এখানে অনাথ ও সুবিধা বঞ্চিতদের পাশাপাশি সচ্ছল পরিবারের সন্তানদেরও পড়াশোনার ব্যবস্থা আছে। সচ্ছল পরিবারের ছাত্রছাত্রীদের বেতনের টাকা দিয়ে অনাথ শিশুদের আবাসিক খরচ, একাডেমিক ব্যয় এবং শিক্ষকদের বেতন-ভাতা দেওয়া হয়। শিক্ষকদের আন্তরিকতায় গত সাত বছরে এই একাডেমি থেকে অনাথ ও সুবিধা বঞ্চিত শিশুসহ প্রায় ৪০ জন শিক্ষার্থী বৃত্তি পেয়েছে।
বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণীর ছাত্রী আসমা খাতুন (১৪) বলে, ‘এ একাডেমির কারণেই আমাদের মতো দরিদ্র পরিবারের সন্তানরা লেখাপড়া করতে পারছে। ’
মোক্তাদির মিয়া (১৪) বলে, ‘শুধু শ্রেণীকক্ষেই নয়, স্যাররা রাতেও আবাসিক ব্যবস্থায় আমাদের পড়াশুনা দেখিয়ে দেন। ’
একাডেমির সহকারী শিক্ষক রবিউল ইসলাম সোহাগ বলেন, ‘ভালো লেখাপড়ার কারণে একাডেমিতে ভর্তির ব্যাপারে শিক্ষার্থীদের আগ্রহ বাড়ছে।
স্থানীয় সমাজসেবী আবুল হাসান ফেরদৌস বলেন, ‘সরকারি কোনও সাহায্য সহযোগীতা ছাড়াই ব্যক্তিগত উদ্যোগে সুবিধা বঞ্চিত, অসহায় শিশুদের জন্য এরকম একটি একাডেমি প্রতিষ্ঠা বিরল দৃষ্টান্ত। ’
প্রতিষ্ঠাতা ইমদাদুল হক মিঠু বলেন, ‘অনাথ-সুবিধা বঞ্চিত, অসহায় শিশুদের লেখাপড়া শিখিয়ে নিজের পায়ে দাঁড় করাবার স্বপ্ন আমার। ভবিষ্যতে শুধুমাত্র অনাথ ও সুবিধা বঞ্চিত শিশুদের বিদ্যালয় হিসেবে অনাথ একাডেমিকে দাঁড় করাবো। ’
বাংলাদেশ সময়: ১৪২০ ঘণ্টা, আগস্ট ১১, ২০১১