ঢাকা, রবিবার, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ১৮ মে ২০২৫, ২০ জিলকদ ১৪৪৬

ফিচার

আজিজ সুপার মার্কেটে ঈদের কেনাকাটা

মনোয়ারুল ইসলাম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬:২৯, আগস্ট ১৫, ২০১১
আজিজ সুপার মার্কেটে ঈদের কেনাকাটা

ঢাকা: এক সময়ের জনপ্রিয় ও দুর্লভ সব বই কেনাবেচার স্থান আজিজ সুপার মার্কেট এখন দেশীয় পোশাকের সম্ভার হিসেবে অনেক বেশি পরিচিত হয়ে উঠেছে।

শিল্প ও সংস্কৃতি কর্মীদের প্রিয় আড্ডার এ জায়গাটিতে এখন হাজার হাজার সাধারণ ক্রেতা-বিক্রেতা জড়ো হয় প্রতিদিন।

তবে আজিজ সুপার মার্কেটের মূল সুর তাতে পাল্টে যায়নি বরং সৃষ্টিশীল চিন্তার নতুন নতুন প্রকাশ ঘটছে প্রতিনিয়ত।

দেশীয় সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের নানা উপাদান ব্যবহার করে আজিজের ফ্যাশন হাউজগুলো ভরে ওঠে বাংলার বিচিত্র রঙে। যার ফলে পোশাকে শতভাগ বাঙালিয়ানা ফুটিয়ে তোলার কৃতিত্ব বলতে গেলে আজিজেরই।

নব্বইয়ের দশকে বইয়ের মার্কেট হিসেবে যাত্রা শুরু করে অল্প সময়েই তা জনপ্রিয়তা পেয়েছিল দেশের পাঠকদের কাছে। সময়ের পরিবর্তনের দাবি নিয়ে বইয়ের পাশাপাশি সেখানে এখন গড়ে উঠেছে প্রায় ২০০ পোশাকের দোকান।

ঈদ উপলক্ষে ফ্যাশন সচেতন ও দেশপ্রেমিক মানুষের কেনাকাটার জন্য এখন প্রথম পছন্দের স্থান আজিজ মার্কেট। এ মার্কেটের উল্লেখযোগ্য দিক হলো, এখানকার ক্রেতারা যেনম তরুণ-তরুণী শিক্ষার্থী তেননি বিক্রেতারাও সাধারণত বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় বিশেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী।

এ মার্কেটের ঐতিহ্য বলতে সৃজনশীলতাকেই বোঝায়। সে ধারাবাহিকতা বজায় রেখে এবারের ঈদেও দেশীয় কাপড় ও দেশজ ঐতিহ্যনির্ভর বিচিত্র পোশাক নিয়ে এসেছে আজিজের বুটিক শপগুলো।

আজিজের অন্যান্য উল্লেখযোগ্য পোশাক প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে- নিত্যউপহার, স্বপ্নবাজ, বাংলার মেলা, লোকজ, মেঘ, প্রচ্ছদ, গোকুল, বরণ, নহলী, সুঁইসুতা, ঐশী, বৃত্ত, নন্দন কুটির, আতশী, ফাতিহা, টেক্কা, বাংলার রং, ১৯৭১, তারা মার্কা, বাঙ্গাল, নক্ষত্র, মেঠোপথ, ক্যানভাস, বসন, সারাবেলা, চরকি, ষড়ঋতু, ব্যতিক্রম, ফেরিঅলা, বান্নি, যোগী, কে ক্রাফট, রঙ, সাদাকালো, বিবিয়ানা, নক্ষত্র, আইডিয়াস, সেভেন, ইজি, কানন, দেশাল, গাঁওগেরাম, মেঠোপথ, ফোর ডাইমেনশন, পৌষ, প্রজাপতি, টোটেম, আবরু প্রভৃতি।

আপনি পছন্দের রং, নকশা এবং সাইজের টি-শার্ট কিনে নিতে পারেন এখান থেকে। আর এ টি-শার্টগুলোর দাম পড়বে ১৭০ থেকে ৩৯০ টাকার মধ্যে।

ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, তারা আজিজ মার্কেটে আসেন কম দামে ব্যতিক্রমী পোশাকের টানে। পোশাকের ডিজাইনগুলোই তাদের বেশি আকর্ষণ করে।

রাজধানীর শাহবাগের এ মার্কেটটিতে কেনাকাটার ধুম লেগেছে। প্রতিটি ফ্যাশন হাউজের রয়েছে নিজস্ব ডিজাইনের দেশীয় কাপড় দিয়ে তৈরি পোশাক। যেমন ফতুঞ্জি। এটি একটি নতুন ধরনের পোশাকের নাম। ফতুয়া আর পাঞ্জাবি মিলিয়ে তৈরি করা হয় ফতুঞ্জি।

পোশাকটির বিক্রেতা মার্কেটের `তারা মার্কা` নামের প্রতিষ্ঠানটি। ফতুঞ্জি ক্রেতাদের কাছে এতোটাই জনপ্রিয় হয়েছে যে, এর প্রথম চালানের সব পোশাক বিক্রি হয়ে গেছে বলে জানালেন তারা মার্কার স্বত্বাধিকারী শিল্পী অভিজিৎ চৌধুরী।

তিনি বললেন, ‘ফ্যাশনে মানুষ পরিবর্তন চায়। সেই ফতুয়া সেই পাঞ্জাবি আর কত! আমরা নতুনত্বে বিশ্বাস করি। পোশাকটি খুবই জনপ্রিয়তা পেয়েছে। ` পোশাকটি তারা মার্কার প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলার শোরুমে পাওয়া যাবে বলে তিনি জানালেন।

কথায় কথায় তিনি তারা মার্কার পোশাকগুলোর দাম জানালেন। ফতুঞ্জি ৭০০ থেকে এক হাজার, টপস ৫০০ থেকে এক হাজার, পাঞ্জাবি ৬০০ থেকে দুই হাজার, টি-শার্ট ১৫০ থেকে ৩০০, ফতুয়া ৪০০ থেকে ৬০০, ধুতি ৫৫০ ও বেপারি শার্ট ৫০০ টাকা।

অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলো দেশী খাদি ও তাঁতনির্ভর সুতি কাপড় দিয়ে সাজিয়েছে তাদের সম্ভার। তাই আজিজের শোরুমগুলো থেকে ফুটপাত সর্বত্রই এখন ঈদের কেনাকাটার ব্যবস্তা। দোকানিরা জানান, ক্রেতাদের এখানে আসতেই হয়, কারণ এখানে সাধ্যের মধ্যে ব্যতিক্রমী পোশাক পাওয়া যায়।

ঈদ ঘিরে ক্রেতাদের পোশাক কেনার ব্যবস্তায় ১০ রমজানের পর থেকে মার্কেট পুরো জমে উঠেছে। এখানে নারী ক্রেতাদেরও ভীড় দেখা যায়। দেশীয় ঐতিহ্যে পাড় ও আঁচলে কাজ করা শাড়িগুলো এখানে ২৫০০ থেকে ৬৫০০ টাকার মধ্যে পাওয়া যায়। হাতের কাজ, চুমকি, পুঁতি ও পাড় লাগানো শাড়িগুলো পাওয়া যায় ৫০০ থেকে ৫০০০ টাকার মধ্যে।

বিভিন্ন রঙের বুনন ডিজাইনের শাড়ির মূল্য ৩৫০ থেকে ১২০০ টাকা, টাঙ্গাইল সিল্ক ১৭০০ থেকে ৬০০০ টাকা, রাজশাহী সিল্ক ৪৫০০ থেকে ৬০০০ টাকা, মসলিন ও ক্রেপসিল্ক ৪০০০ থেকে ৬০০০ টাকা, এন্ডি কটনে কাজ করা শাড়ি ৪৫০০ থেকে ৫৫০ টাকা, খাদি কাপড়ের শাড়ি ১০০০ টাকা, সুতি শাড়ি ৫৭৫ থেকে ২০০০ টাকা।

জামদানি শাড়ি পাওয়া যাবে ১৫০০ থেকে ১৬৫০০ টাকার মধ্যে। এছাড়া গজ কাপড় কিনে পছন্দমতো হাতের, এম্ব্রয়ডারি বা কারচুপির কাজ করিয়ে নিচ্ছেন অনেকেই।

এ মার্কেটে নিত্যউপহারের শোরুম আছে চারটি। এর ইনচার্জ নুসরাত জাহান রঞ্জু। তিনি বললেন, ‘রমজানের প্রথম থেকেই মার্কেটে ক্রেতা বাড়তে শুরু করেছে। প্রথম দিকে তারা পোশাক দেখত, পছন্দ করত, এখন কিনতে শুরু করেছে। ’

তিনি জানালেন, এবার ঈদ উপলক্ষে নতুন এসেছে বাচ্চা মেয়েদের টপস। এর মূল্য ৩৪০ থেকে ৪৫০ টাকা। এ ছাড়া অন্যান্য পণ্যের মধ্যে বড়দের টপস ৪৫০ থেকে ৫৫০, থ্রি পিস এক হাজার থেকে এক হাজার ৩৫০, পাঞ্জাবি ৬৫০ থেকে ৮৫০, শার্ট ৪০০ থেকে ৫৫০, টি-শার্ট ১৩০ থেকে ২০০, শাড়ি এক হাজার ৫০ থেকে দুই হাজার ৫০০, ফতুয়া ৩৮০ থেকে ৪৫০ ও চাঁদর ৪৫০ থেকে ৭৫০ টাকা। তিনি বললেন, টি-শার্ট, শাড়ি, পাঞ্জাবি ও ফতুয়াই তার দোকানে বেশি বিক্রি হচ্ছে।


সালোয়ার-কামিজের ক্ষেত্রেও আজিজের দেশি বুটিক শিল্পের সৃজনশীলতা উল্লেখ করার মতো। ভারতীয় সালোয়ার-কামিজের পাশাপাশি দেশি ডিজাইনারদের ড্রেসগুলো বাজারে প্রতিযোগিতা করে যাচ্ছে। সালোয়ার কামিজে বৈচিত্র্য আনতে ডিজাইনারদের চেষ্টার শেষ নেই। সালোয়ারের ক্ষেত্রে চুড়িদার, পাটিওয়ালা সালোয়ারের চাহিদা এবার বেশি। কামিজে এম্ব্রয়ডারি ও লেসের কাজ বেশি চোখে পড়ে।

নন-স্টিচ এসব পোশাক বিক্রি করা হচ্ছে ১৫০০-২০০০ টাকায়। রয়েছে বিশাল, শীতল, মিম, ফার্স্টলেডি ইত্যাদি ইন্ডিয়ান ব্র্যান্ডের পোশাক। সালোয়ার-কামিজের ক্ষেত্রেও  তরুণীরা সুতির পোশাককে প্রাধান্য দিচ্ছেন। সুতির ওপর এম্ব্রয়ডারির কাজ করা, চুমকি বসানো, স্প্রে, ব্লকসহ বিভিন্ন ধরনের কাজ রয়েছে।

সালোয়ার-কামিজ ৭০০ থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত বেচাকেনা হচ্ছে। সালোয়ার-কামিজের দেশি ব্র্যান্ড হিসাবে রাখি, চৈতী, বর্ষার ড্যান্ডি ইত্যাদি জনপ্রিয়। দাম পড়বে ১৫০০ থেকে ৪০০০ টাকা পর্যন্ত। বুটিক হাউসের সালোয়ার-কামিজের দাম পড়বে ৮৫০ থেকে ৮০০০ টাকার মধ্যে।

ঈদ উৎসবে ছেলেদের প্রথম পছন্দ পাঞ্জাবি। আজিজে বিদেশি পাঞ্জাবির চেয়ে অনেক উন্নতমানের পাঞ্জাবি তৈরি হচ্ছে। এখানে সিল্কের পাঞ্জাবির পাশাপাশি রয়েছে সুতি, খাদি, সিল্ক এবং তাঁতের কাপড়ের পাঞ্জাবি। হাতের কাজ, কারচুপি, স্প্রে, এম্ব্রয়ডারি ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের কাজ রয়েছে এসব পাঞ্জাবিতে।

এসব পাঞ্জাবির সঙ্গে রয়েছে চুড়িদার আর উত্তরীয়। এখানে পাবেন ৪৫০ থেকে ৪০০০ টাকায়। এর মধ্যে সাদা সুতি পাঞ্জাবি ৬৫০ থেকে ৭৫০ টাকা, রঙিন সুতি হাতের কাজের পাঞ্জাবি ৭৫০-৮৫০ টাকা, সিল্কের এক্সক্লুসিভ পাঞ্জাবি ১৮০০ থেকে ৪০০০ টাকা, শর্ট পাঞ্জাবি ৫৫০ থেকে ১৫০০ টাকা, প্লেন পাঞ্জাবি ৪৫০ থেকে ৮৫০ টাকা দাম পড়বে।

ঈদে শিশুদের আনন্দটাই প্রধান। যেসব পরিবারে শিশু রয়েছে তারা প্রথমেই চিন্তা করেন শিশুর পোশাকের কথা। শিশুদের পোশাকে সুতি, জর্জেট ও সিল্কের কাপড়ের ওপর রয়েছে বিভিন্ন কাজ, ব্লক, এম্ব্রয়ডারি আর হাতের কাজ। কাজভেদে পোশাকগুলো ৫০০ থেকে ৪০০০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। বাচ্চাদের কাপড়ের নাম করা দোকানগুলোর মধ্যে নদী, নন্দন, শীতল, মিনিমার্ট, বেবি স্মাইল ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। তাছাড়া প্রায় প্রতিটি বুটিক হাউসে বাচ্চাদের কাপড়ের সেকশন রয়েছে।

বাচ্চা ছেলেদের জন্য বাজারে এসেছে ধুতি, পাঞ্জাবি ও শেরওয়ানি। আরো রয়েছে গেঞ্জি সেট, শর্ট শার্ট ও পাঞ্জাবি সেট। ৫০০ থেকে ৩০০০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে সেটগুলো।

পোশাক ছাড়াও প্রিয়জনকে দেওয়ার মতো অনেক কিছু রয়েছে আজিজে। বই যেকোনো সময়েরই শ্রেষ্ঠ উপহার। ঈদেও তাই প্রিয় মানুষের জন্য কিনতে পারেন রবীন্দ্ররচনাবলী, নজরুলের বই, শরৎচন্দ্র, ডক্টর লুতফর রহমান, ডেল কার্নেগি বা হুমায়ূন আহমেদের মতো জনপ্রিয় আরও অনেকের বই। তাছাড়া দিতে পারেন যেকোনো পছন্দের পত্রিকার ঈদসংখ্যা বা রান্নাসংখ্যা।

ব্রেসলেট, কানের দুল, ঘড়ি, টাই, কলম, লকেট, মগ, শোপিস, ফটোফ্রেম বা সুগন্ধির যেকোনোটাই হতে পারে সেরা উপহার। গৃহস্থালি দরকারি জিনিস বা তৈজসপত্রও থাকতে পারে এই তালিকায়।

প্রিয়জনের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় ঈদের আনন্দে ভিন্নমাত্রা এনে দেয়। সেক্ষেত্রে পরস্পর কার্ড আদান-প্রদানও বেশ জনপ্রিয়। এগুলো কিনতে দাম পড়বে ২০ থেকে ৮০ টাকার মধ্যে।

তমা ও তুলি দু`বোন আজিজে এসেছেন সালোয়ার-কামিজ কিনতে। সে সঙ্গে কিনবেন মাটির অথবা মেটালের গহনা। এসবও পাওয়া যাবে আজিজে। তারা বললেন, ‘আজিজে আমাদের প্রয়োজনীয় সব জিনিসই পাব তাই অন্য মার্কেট থেকে আজিজে এসেছি। ’

ফ্যাশন হাউস রঙের ডিজাইনার বিপ্লব সাহা বলেন, ঈদকে বর্ণিল রঙে রাঙাতে এ ঈদে রঙের আয়োজনে থাকছে উজ্জ্বল সব রঙের পোশাক।

প্রতিবছরই ঈদ আয়োজনে পোশাকের নকশায় বিশেষ কোনো মোটিফ ব্যবহার করে থাকে ফ্যাশন হাউস সাদাকালো। আর তাই এবারের ঈদে ফুলের মোটিফের নকশায় রাঙানো হয়েছে সাদাকালোর পোশাক, জানালেন সাদাকালোর ডিজাইনার তাহসীনা শাহিন।

দেশীয়ার ডিজাইনার মোসলেমা খাতুন জানালেন, ঈদ আয়োজনে তাদের এখানে থাকছে দেশীয় মোটিফ যেমন কলকা, ফুল, পাখি এসবের নকশা করা মেয়েদের ফতুয়া।

কৃষ্ণকলিতে রয়েছে নানা ডিজাইনের রঙিন ফতুয়া ও টি-শার্ট। এখানের টি-শার্টে বিখ্যাত ব্যক্তিদের ব্যবহৃত নানা উপাদানকে প্রাধান্য দিয়ে ডিজাইন করা হয়।

সাধ, সাধ্য, শখ, স্বপ্ন সবই পূরণ হতে পারে আজিজের কেনাকাটায়।

বাংলাদেশ সময়: ১৬২০ঘণ্টা, আগস্ট ১৫, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।