রাশিদ খান প্রকৌশল বিভাগের ছাত্র হয়েও শুরু করেন ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট ফার্ম ‘ক্রিয়েটো’। অক্লান্ত পরিশ্রম এবং অধ্যাবসায়ে মাত্র ৫ বছরে সফলতার শীর্ষে চলে এসেছেন তিনি।
কাজের নেশায় ডুবে থাকা রাশিদ খানের সাথে তাঁর ক্যারিয়ার ভাবনা এবং ক্রিয়েটো নিয়ে কথা বলেছেন স্বপ্নযাত্রার বিভাগীয় সম্পাদক শেরিফ আল সায়ার।
----------------------------------------
একদম কলেজ জীবন থেকেই আগ্রহ ছিল ছবি আঁকায়। রঙের মাঝেই তিনি নিজের স্বপ্নগুলোকে খুঁজে পেতেন। সেই রঙের স্বপ্নকে সত্যি করতে গিয়ে শুরু করেন ‘ক্রিয়েটো’। মানুষটির নাম রাশিদ খান। হাসি মুখে তিনি বলেন, ‘ক্রিয়েটো থেকে আমরা ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট, স্টেইজ ডিজাইন, বিয়ের অনুষ্ঠান আয়োজনসহ ক্রিয়েটিভ সব কিছুই করি। ’
পড়াশোনা করেছেন ঝিনাইদহ ক্যাডেট কলেজ থেকে। তারপর বিশ্ববিদ্যালয় জীবন ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটিতে। বিষয় ছিল কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং। আমিও হাসি মুখে প্রশ্ন করি, কম্পিউটার নিয়ে পড়াশোনা করে কেন এ ধরনের পেশাকে বেছে নিলেন? উত্তরে রাশিদ বলেন, ‘ছবি আঁকা ছিল আমার নেশা। কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় সব জায়গা যে কোন অনুষ্ঠানে আমি পেইন্টিং করতাম। এমনকি স্টেইজ ডিজাইনিং-এরও কাজ করতাম। তাই নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাস ছিল। একদম নেশা হয়ে গিয়েছিল। পড়াশোনা শেষ করে সিদ্ধান্ত নিলাম, নেশাকে পেশা হিসেবে নিলে মন্দ হবে না। ’
নেশাকে পেশা হিসেবে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিশ্চয়ই সহজ ছিল না। সেটাই জানতে চাইলাম রাশিদের কাছে। তিনি বললেন, অবশ্যই সহজ ছিল না। কাজের মধ্যে সারাটা সময় আমাকে ডুবে থাকতে হয়েছে। ২০০৫ সালে সাহস করে আমি একা ক্রিয়েটো শুরু করি। শুরু থেকেই ছোট-খাটো কাজ পেতে থাকি। হঠাৎ করেই সে বছর ‘সিটিসেল চ্যানেল আই মিউজিক্যাল এ্যাওয়ার্ড’ অনুষ্ঠানের স্টেইজ ডিজাইনিং-এ কাজ করার জন্য ডাক পাই। বিষয়টা যেমন রিক্সি ছিল সেই সাথে ছিল চ্যালেঞ্জিংও। সে সময়টাতে সারারাত জেগে জেগে ভাবতাম কিভাবে স্টেইজ সুন্দর করে তৈরি করা যায়। যাইহোক কাজটা ভালো মতই হলো। আমাদের কাজে মুগ্ধ হয়ে আয়োজকরা আমাদের ‘লাক্স চ্যানেল আই পারফর্মমেন্স এ্যাওয়ার্ড’ অনুষ্ঠানেরও সেট ডিজাইনের কাজ দেন।
এতো আড্ডার মাঝে তিনি তাঁর ছবি আঁকার প্রসঙ্গ বার বার টেনে আনেন। বলেন, ‘আমি ছবি আঁকতে খুব ভালোবাসি। কিন্তু এখন কাজের ফাঁকে ফাঁকে একটা ছবি ৭ দিন ধরে আঁকতে হয়। কিন্তু আগে একটা ঘোর ছিল। সেই ঘোরের মধ্যেই ছবি এঁকে ফেলতাম। এখন একটা ছবি শেষ হলে মনে হয় জীবনের সব ক্লান্তি যেন দূর হয়ে গেল। ’
আমি ঘুরে ফিরে পড়াশোনার প্রসঙ্গে যাই। আবার বলি, মাঝে মাঝে নিজের শিক্ষার বিষয় কম্পিউটার সায়েন্স নিয়ে কি ভাবেন না? প্রশ্ন শুনেই তিনি হেসে দেন। হাসতে হাসতে বলেন, আমার কোন কাজ টেকনোলজি ছাড়া হয় না। আমি স্টেইজ হাতে আকার আগে সিমুলেশন করে দেখি। কোড দিয়ে সমস্ত হিসাব কিতাব তৈরি করে নেই। এলাইনমেন্টগুলো কি হবে, কেমন হলে সুন্দর হবে; এ সব বিষয়গুলোর জন্য অংক প্রয়োজন। সেটাও করে নেই। তাই আমার কখনও মনে হয়নি আমি আমার বিষয়ের বাইরে কোন কাজ করছি। বরং আমি বলব, ক্রিয়েটিভ কাজটাকে আমি ভিন্ন মাত্রা দিয়েছি।
রাশিদের ক্রিয়েটো ২০০৫ থেকে এখন ২০১১ সাল পর্যন্ত সফলতার সাথে এগিয়ে চলছে। তাদের ক্লায়েন্ট লিস্টের মধ্যে আছে: গ্রামীণফোন, সিটিসেল, ইউনিলিভার সহ আরও বড় বড় প্রতিষ্ঠান।
তবে রাশিদের মতে, তার ভিন্নতা হলো ক্রিয়েটো ক্লিক। যেখান থেকে ডিজিটাল এ্যাকটিভেশন করা হয়। এ বছর ভালোবাসা দিবসে ‘ক্লোজআপ কাছে আসার গল্প’ প্রতিযোগিতার ডিজিটাল প্রচারের সমস্ত কাজ করেন রাশিদের ক্রিয়েটো। ভবিষ্যতে এ ধরনের কাজে তিনি আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। কারণ, ইন্টারেকটিভ কমিউনিকেশনের যুগে এ ধরনের প্রচারণা মানুষকে ভিন্ন স্বাদ দিবে বলে আশা করেন রাশিদ।
সম্প্রতি তিনি কাজ শুরু করেছেন মাছরাঙা টেলিভিশনের ‘হাউজফুল’ অনুষ্ঠানে। ক্রিয়েটো’র কনসেপ্ট প্ল্যানিং, ক্রিয়েটিভ ডিরেকশনে মাছরাঙা টেলিভিশনে খুব তাড়াতাড়ি প্রচার হতে যাচ্ছে চলচ্চিত্র নির্ভর কুইজ-ভিত্তিক রিয়েলিটি শো ‘হাউজফুল’।
রাশিদ জানান, তিনি নতুনদের আইডিয়া নিয়ে কাজ করতে আগ্রহী। নতুনদের ভাবনার সাথে মিশে তিনি জানতে চান, বর্তমান প্রজন্ম কি বিষয়গুলো নিয়ে ভাবে। এ বিষয়ে তিনি বলেন, আমার হাউজে দেখবেন সবাই তরুণ। সবাই কাজ পাগল। কারণ আমি মনে করি তরুণরাই পাল্টে দিতে পারে পৃথিবী।
আপনার মতো সফল হতে হলে কি করতে হবে? এমন প্রশ্ন করলে রাশিদ অবাক হয়ে বলেন, ‘আমি সফল হলাম কোথায়? পথ চলছি। তবে হ্যাঁ, অনেক কিছু পার করে এসেছি। শেষ পাঁচটা বছর অনেক কষ্ট করেছি। দিনরাত পরিশ্রম করেছি। তাই পরিশ্রমের কোন বিকল্প নেই। ’
যারা বিজ্ঞাপন নিয়ে কাজ করতে চায় তাদের জন্য কোন পরামর্শ চাইলে রাশিদ খান এক বাক্যে বলেন, সবার উচিত চিন্তা নিয়ে চিন্তা করা।
বাংলাদেশ সময়: ১৬০৮ ঘণ্টা, আগস্ট ১৬, ২০১১