ঢাকা: ঈদ আনন্দের একটা বড় অংশই হচ্ছে নতুন পোশাক। আর এই পোশাক কেনাকাটা ছাড়া বাঙালির ঈদ যেন অপূর্ণই থেকে যায়।
এবারই প্রথম সংসদ ভবনের সামনের রাস্তায় পহেলা রমজান থেকে শুরু হয়েছে তাঁতবস্ত্র মেলা। বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ডীড বাংলাদেশ এই মেলার আয়োজন করেছে ।
এখানে ৪৩টি প্রতিষ্ঠান মোট ৮৪টি স্টল দিয়েছে।
মানিক মিয়া এভিনিউয়ে গাড়ি পার্কিয়ের সুযোগ থাকায় ক্রেতা বেশ ভালো বলে জানালেন বিক্রেতারা।
বুধবার মেলায় গিয়ে দেখা গেল। মেলায় তাঁতবস্ত্র ছাড়াও সব ধরনের দোকান রয়েছে। খাবারের দোকান ২টি, গৃহস্থালি পণ্যের দোকান ১টি, খেলনা ও কসমেটিকস এর দোকান ১টি এছাড়া শো পিস ও মাটির তৈজস পত্রের দোকান ১টি।
গাজী টেক্সটাইল, চন্দ্রবিন্দ টেক্সটাইল, বিন্দু টেক্সটাইল, জারিন টেক্সটাইল, আপন টেক্সটাইল, টাঙ্গাইল তাঁত ঘর. বাংলাদেশ হ্যান্ডলুম স্টোর ছাড়াও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান অংশ নিয়েছে।
‘দেশী পণ্য কিনে হই ধন্য’ এই সেøাগান সামনে রেখে প্রতি বছরই সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন সংগঠনের উদ্যোগে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে এভাবে তাঁত বস্ত্র মেলার আয়োজন করা হয়।
স্বাচ্ছন্দ্যে দেশী পণ্য কিনতে এসব মেলায় ভিড় করেন ক্রেতারা।
মানিক মিয়া এভিনিউ ছাড়াও তাঁত বস্ত্র মেলা চলছে মতিঝিল টিঅ্যান্ডটি মাঠে, আগারগাঁও বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন মাঠে, শ্যামলী মাঠে, শিশু মেলার বিপরীত দিকের মাঠে এবং শনিরআখড়ার দনিয়া কলেজের সামনের রাস্তার মাঠে।
সব মেলায় পাওয়া যাচ্ছে পাঞ্জাবি, শাড়ি, থ্রি-পিচ, শার্ট, ক্রোকারিজ সামগ্রী, বেড কভার, বেড শিট, কুশন কভারসহ ক্রেতাদের রুচি এবং পছন্দসই পণ্যসামগ্রী।
এসব মেলা চলবে চাঁদ রাত পর্যন্ত। মেলা প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত খোলা।
মেলার প্রতিষ্ঠানগুলো দেশী খাদি ও তাঁতনির্ভর সুতি কাপড় দিয়ে সাজিয়েছে তাদের সম্ভার।
ব্যবসায়ীরা জানালেন, ১০ রমজানের পর থেকে বিক্রি পুরোপুরি জমেছে।
মেলায় রয়েছে দৃষ্টিনন্দন নানা ডিজাইনের তাঁতের তৈরি বেনারশি, কুমিল্লার খাদি, পার্বত্য চট্টগ্রামের পাঞ্জাবি-ফতুয়া-শার্ট ও আকর্ষণীয় থ্রি পিস, নারায়ণগঞ্জের জামদানি, পাবনার শাড়ি ও টাঙ্গাইলের তাঁতের শাড়ি ছাড়াও হস্তশিল্পের নানা কারুকাজ, ছোটদের খেলনা ও পোশাক, মেয়েদের বাহারি গহনা ও কসমেটিক্সসহ অনেক কিছুই।
ঈদের কেনা কাটায় সিল্ক, তাঁত, অন্যান্য মিলের রকমারী পোশাকসহ জুতা স্যান্ডেল, ঝিনুক বার্মিজের অলংকারাদি শিশুদের খেলনা ছাড়াও গৃহিনীদের রান্নার যাবতীয় ইলেকট্রিক সামগ্রী এখানে পাওয়া যাচ্ছে।
তবে সবচেয়ে বেশি আছে পোশাকের স্টল। এখানে মেয়েদের জন্য বাহারী ও রকমারী রং ও ডিজাইনে আছে তাঁতের তৈরি যাবতীয় পোশাক, জামদানি, সেরোয়ানি, জিপসি, কাতান, থ্রি পিস, সানিয়া মির্জা থ্রি-পিস, রিজিওন গোলাপ এবং সূতি জামদানি। এছাড়াও আছে ব্লক, প্রিন্ট বাটিক ও অ্যাম্বুশসহ হাতের কারুকার্য খচিত পোশাক সামগ্রী। মেলা উদ্বোধনীর দিন থেকেই জমে উঠতে শুরু করেছে এই মেলা।
পাড় ও আঁচলে কাজ করা শাড়িগুলো পাওয়া যাচ্ছে ২০০০-৬৫০০ টাকার মধ্যে। হাতের কাজ, চুমকি, পুঁতি ও পাড় লাগানো শাড়িগুলোর দাম পড়বে ৪০০-৫০০০ টাকার মধ্যে।
বিভিন্ন রঙের বুনন ডিজাইন শাড়ির মূল্য ৩২০-১২০০ টাকা, টাঙ্গাইল সিল্কের শাড়ি ১২০০-৬০০০ টাকা, রাজশাহী সিল্ক ৪৫০০-৬০০০ টাকা, মসলিন ও ক্রেপসিল্ক ৪০০০-৬০০০ টাকা, এন্ডি কটনে কাজ করা শাড়ি ৪৫০০-৫৫০ টাকা, খাদি কাপড়ের শাড়ি ১০০০ টাকা, সুতি শাড়ি ৪৭৫ থেকে ২০০০ টাকা।
জামদানি শাড়ি পাওয়া যাচ্ছে ১১০০-১২০০০ টাকার মধ্যে।
মেলার সবচেয়ে বড় স্টল গাজী টেক্সটাইলে এ বছর ঈদের তরুণী ক্রেতাদের রুচি ও চাহিদার কথা মাথায় রেখে অনেক ডিজাইনের থ্রি-পিচ এনেছে।
টিসু কাপড়ের ওপর তারা টিসু কাজের থ্রি-পিচ এনেছে ১ হাজার ৬৫০ টাকায়। সুতি কাপড়ের কম্পিউটার এমব্রয়ডারি কাজের থ্রি-পিচের প্রতিটির দাম ১ হাজার ২৫০ টাকা।
কাতানের ওপর লেইস বসানো থ্রি-পিসগুলো বিক্রি করছে ১ হাজার ২৫০ টাকা। কম্পিউটার এমব্রয়ডারি কাজের ওপর এপ্লিক করা থ্রি-পিচের দাম ১ হাজার ৭৫০ টাকা।
বিক্রেতা মোহাম্মদ সাগর বলেন, ‘গাজী টেক্সটাইল এক দরে বিক্রি করে। তবে এ বছর টিসু কাপড়ের থ্রি-পিচের ক্রেতা বেশি । শনিরআখড়ার দনিয়া কলেজ মাঠের সামনের মাঠে গাজী টেক্সটাইল নামেই আমাদের আরও একটি স্টল আছে। ’
বাংলাদেশ হ্যান্ডলুম কর্নার স্টলে পাওয়া যাচ্ছে টাঙ্গাইলের তাঁতের জামদানি শাড়ি। দাম ১ হাজার টাকা। এছাড়া তাঁতের হাতের কাজের শাড়ি ৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। লুঙ্গি বিক্রি হচ্ছে ২৫০ থেকে ৭৫০ টাকায়।
কলাবাগান এলাকার বাসিন্দা নাজমুল হক তার পুরো পরিবারকে নিয়ে এসেছেন সংসদের সামনের তাঁত মেলায়। তিনি জানান, পুরো পরিবারের কেনাকাটা এখান থেকেই করবেন। কারণ সাধ এবং সাধ্যের মধ্যে জিনিস পাওয়া যাচ্ছে। যদি এ মেলা আগামিতেও থাকে তাহলে মেলা থেকে প্রতি বছর ঈদের কেনাকাটা করবেন। খোলা জায়গায় গাড়ি পার্কিয়ের সুবিধা থাকায় এখানে এসে স্বাচ্ছন্দে কেনাকাটা করছেন বলে তিনি জানান।
বেশিরভাগ স্টল মালিকই জানান, বৃষ্টির কারণে প্রত্যাশিতভাবে মেলা এখনও জমে ওঠেনি। তবে ক্রেতা বাড়ার ব্যাপারে তারা আশাবাদি।
নানা রকম নকশীকাঁথা পাওয়া যাচ্ছে সনি হ্যান্ডিক্রাফটে। দাম ২ হাজার ৮০০ টাকা থেকে সাড়ে ৩ হাজার টাকা।
নারিকেলের তৈরি টেবিল ল্যাম্প পাওয়া যাচ্ছে ১ হাজার থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকায়। এই ল্যাম্পটি তাদের দোকানে বেশি বিক্রি হচ্ছে বলে জানান এই স্টলের বিক্রেতা।
সতরঞ্জি পাওয়া যাচ্ছে ১ হাজার থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকায়। পাওয়া যাচ্ছে জুতাও। এগুলোর দাম ১৫০ থেকে ১ হাজার টাকা পর্যন্ত।
নূর জামদানি উইভিং ফ্যাক্টরির স্টলে পাওয়া যাচ্ছে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের জামদানি শাড়ি ৩ হাজার টাকা থেকে ২০ হাজার টাকায়। তবে ক্রেতারা ৩ হাজার থেকে ৫ হাজার টাকা দামের জামদানি বেশি কিনছে।
এখানে পাঁচল পাঙ্কি কাজের জামদানিটির দাম ২০ হাজার টাকা।
টাঙ্গাইল শাড়ি কুটিরের বিক্রয়কর্মী মো. ফিরোজ বলেন, ‘বৃষ্টির কারণে কয়েক দিন ক্রেতাদের উপস্থিতি কম। ’
ঈদে ঘর সাজাতে নানা রকম শো-পিস ও নিত্যনতুন শিল্পকর্মের সম্ভার নিয়ে বিশাল সম্ভার নিয়ে বসেছে কারুচিত্র।
কারুচিত্রের বিক্রয়কর্মী রুবি আক্তার জানান, বিক্রি ভালোই হচ্ছে। খারাপ আবহাওয়ার কারণে ক্রেতার সংখ্যা কম হলেও সামনের দিনগুলোতে ক্রেতা বাড়বে।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৫৮ ঘণ্টা, আগস্ট ১৭, ২০১১