সারা জীবন বই পড়ে জেনে এসেছি তেল, গ্যাস, পানি, কয়লা আর বাতাস ও সৌরশক্তিই বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রধান উপাদান। কিন্তু এগুলো ছাড়াও বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যায়! অসম্ভব।
টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলার বহুরিয়া ইউনিয়নের চান্দুলিয়া গ্রামের ছোরত আলী ও ফুলখাতুন বেগমের সন্তান শরীফুল ইসলাম। ছয় ভাই আর তিন বোনের মধ্যে তিনি অষ্টম। স্কুলজীবন থেকে বিজ্ঞানের প্রতি ভালোবাসা থেকে বিকল্প জ্বালানি নিয়ে চিন্তাভাবনা শুরু। ২০০৭ সালে দশম শ্রেণীতে পড়ার সময়ে প্রাথমিক ধারণা এবং ২০০৯ সালের জানুয়ারি মাসে বিকল্প জ্বালানি উদ্ভাবনের জন্য একটা যন্ত্রের মডেল উদ্ভাবন। নিজের নাম অনুসারে তিনি যন্ত্রটির নাম দিয়েছেন ‘শরীফুয়েল্লেস এনার্জি’।
নিজের উদ্ভাবিত যন্ত্রের প্রচার ও সবাইকে বিষয়টি অবহিত করতে দুরুদুরু বুকে ৯ জুলাই ২০১১ জাতীয় প্রেসক্লাবে হাজির হন শরীফ। সঙ্গে বন্ধু ও খালাত ভাই। হাতেগোনা কয়েকজন সাংবাদিকের অব্যাহত প্রশ্নে শুরুতেই অসহায় আত্মসমর্পণ সদ্য গ্রাম থেকে উঠে আসা শরীফের। তারপরও জোরালো কণ্ঠে তার দাবি, আমি চ্যালেঞ্জ জানিয়ে বলতে পারি আমার যন্ত্র সম্পূর্ণ সঠিক।
অনুষ্ঠান শেষে কথা হচ্ছিল শরীফুলের সাথে তার আবিষ্কৃত যন্ত্রটি নিয়ে। বাংলানিউজকে তিনি বলেন, ‘পরীক্ষামূলকভাবে আমি তেল, গ্যাস, পানি, কয়লা, বাতাস বা সৌরশক্তি ছাড়াই বিদ্যুৎ উৎপাদনের কার্যক্রম চালাই এবং আমার উদ্ভাবিত যন্ত্র দিয়ে ৩.৫ কিলোওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনে সক্ষম হই। আমি আরো গবেষণা চলিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছি যে, আমার উদ্ভাবিত ইঞ্জিনের জ্বালানি উৎপাদন ক্ষমতা হবে অফুরন্ত ও শক্তিশালী। ’
তিনি আরো বলেন, ‘শুরুতে আমার উদ্ভাবিত যন্ত্রের উৎপাদনক্ষমতা কম ছিল। প্রতিদিন আমি এ যন্ত্রের শক্তি বৃদ্ধির চেষ্টা চালাচ্ছি। এখন আমার উদ্ভাবিত যন্ত্রের শক্তি সম্পর্কে সংশয় ছাড়াই বলতে পারি যে, এর শক্তি অফুরন্ত। শুধু তাই নয়, আমি বিজ্ঞানী ও বিশেষজ্ঞদের প্রতি চ্যালেঞ্জ জানিয়ে বলতে পারি আমার এ যন্ত্রের শক্তি সম্পর্কে কেউ দ্বিমত পোষণ করতে পারবেন না। ’
যন্ত্রের শক্তি সম্পর্কে উদাহরণ দিতে গিয়ে তিনি বলেন, আমার উদ্ভাবিত এ যন্ত্র দিয়ে আমার পরিবারের বিদ্যুতের চাহিদা মিটিয়ে আমি পাশের বাসায় সরবরাহ করেছি। এই যন্ত্রে এখন যে পরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে তা দিয়ে ২০টি ফ্যান ও ১০০টি ১০০ ওয়াটের লাইট জ্বালানো সম্ভব।
তবে যন্ত্রটি তিনি কী কী উপাদান দিয়ে তৈরি করেছেন এবং এটি কীভাবে কাজ করে এ সম্পর্কে কোনো কিছুই বলতে নারাজ শরীফ। তার শঙ্কা, এতে করে তার অনেক দিনের সাধনার অর্জন চুরি হয়ে যেতে পারে।
সরকারের কাছে সহায়তা প্রত্যাশা করে তিনি বলেন, সরকার যদি আমাকে আর্থিক ও কারিগরি সহায়তা দেয় তবে আমি যন্ত্রটিকে আধুনিক করে এমন পর্যায়ে নিয়ে যাব যে স্থানীয় পর্যায়ে বিদ্যুতের চাহিদা মিটিয়ে আরো উদ্বৃত্ত থাকবে। সারা দেশে এরকম শত শত যন্ত্র ছড়িয়ে দিতে পারলে আমদানি নয়, বরং সরকার বিদ্যুৎ রপ্তানি করতে পারবে।
তিনি আরো বলেন, ‘শুধু বিদ্যুৎ আবিষ্কার নয়, আমি এ যন্ত্রটিকে এমনভাবে তৈরি করেছি যে, কোনো ধরনের জ্বালানি ছাড়া গাড়িতেও এটি ব্যবহার করা যাবে। আমার দরকার পর্যাপ্ত সহায়তা। ’
এই যন্ত্র আবিষ্কারে কার বেশি অনুপ্রেরণা ও সহায়তা ছিল এমন প্রশ্নের জবাবে বলেন, যন্ত্র আবিষ্কারের পেছনে আমার আড়াই লাখ টাকা খরচ হয়েছে। টাকা সংগ্রহ করতে গিয়ে আমাদের ধানি জমি বন্ধক রাখতে হয়েছে। তারপরও কেউ সহায়তা করেননি। তবে স্থানীয় পত্রিকায় যন্ত্র আবিষ্কারের প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়ার পর টাঙ্গাইল ৭ আসনের সাংসদ একাব্বর হোসেন ১ টন চাল পুরস্কার দিয়েছিলেন।
তিনি আরো বলেন, ‘আমাদের তৎকালীন ইউএনও জান্নাত রেহানা তার প্রকৌশলী ভাইকে নিয়ে এসেছিলেন আমার যন্ত্রটি কীভাবে কাজ করে জানতে। আমি তাদের বলিনি। ’
বিশেষজ্ঞদের মতামত ছাড়া আবিষ্কারের স্বীকৃতি আসবে না বলে জানালে শরীফ বলেন, ‘আমি গরিব মানুষ। আমার পেছনে কোনো সহায়তা নেই। যে কেউ এসে এই ফর্মুলাটা জেনে নিয়ে নিজের আবিষ্কার বলে জাহির করবেন। তাই আমি চাই সরকারই এগিয়ে আসুক এবং আমার নামেই যন্ত্রটির প্রসার হোক। সরকার এগিয়ে এলে আমি নিজেই সবার সামনে এই যন্ত্রের ফর্মুলা প্রকাশ করবো। ’
বাংলাদেশ সময় ২২০০ ঘণ্টা, আগস্ট ১৮, ২০১১