ঢাকা, রবিবার, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ১৮ মে ২০২৫, ২০ জিলকদ ১৪৪৬

ফিচার

ঈদ কার্ড ও ঈদ উপহার

মনোয়ারুল ইসলাম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫:০০, আগস্ট ১৯, ২০১১
ঈদ কার্ড ও ঈদ উপহার

ঢাকা: উপহার পেতে কার না ভালো লাগে! আর তা যদি হয় ঈদের, তবে তো কথাই নেই। ঈদ মানেই খুশি।

আর খুশির দিনে প্রিয়জন, বন্ধু, অফিসের সহকর্মী, ব্যবসায়িক অংশীদার ও অন্যান্য শুভাকাক্সক্ষীর জন্য শুভকামনা জানিয়ে বার্তা পাঠানোর রেওয়াজও সেই চিরকালীন।

বিশেষ করে তরুণ-তরুণী ও উঠতি বয়সীদের কাছে ঈদ কার্ড হলো হৃদয় বিনিময়ের বড় উপাুয। যদিও বর্তমানে আধুনিক প্রযুক্তির কল্যাণে ঈদ কার্ডেও লেগেছে মন্দাভাব। তবে একেবাড়ে ফুরিয়ে যায়নি। বরং সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে ঈদ কার্ডে লেগেছে নতুনত্বের ছোঁয়া।

ঈদ উপহার ভাবতেই মনটা খুশিতে ভরে যায়। শুধু পাওয়ার মধ্যেই আনন্দ সীমাবদ্ধ থাকে না। যখন কাউকে উপহার দেয়া হয় তখন তার খুশি নিজের আনন্দকে দ্বিগুণ বাড়িয়ে দেয় এবং নিজের মধ্যে একটা আত্মতৃপ্তি আসে। খেয়াল রাখতে হবে যাকে উপহারটি দিচ্ছেন সেটা যেন তার প্রয়োজনের সময় কাজে লাগে। কম দামের মধ্যেও সুন্দর রুচিশীল উপহার কেনা যেতে পারে। উপহার ছোট্ট না বড় সেটা বড় কথা নয়। উপহার নির্বাচনের সময় আপনাকে খেয়াল রাখতে হবে, তাতে যেন আন্তরিকতার ছোঁয়া থাকে।

ঈদকে সামনে রেখে ঈদ কার্ডের দোকানেও এখন উপচেপড়া ভিড়। অন্যান্য বছরেরর মতো এবারও ঈদ উপলক্ষে নানা ধরনের ঈদ কার্ড বের হয়েছে।

দেশি-বিদেশি রকমারি ডিজাইনের ঈদ কার্ডে ছেয়ে গেছে দোকানগুলো। এসব কার্ড খুললেই শুভেচ্ছার বাণী ভেসে ওঠে। বাংলা ও ইংরেজীতে রেখা হাজার ছকের মনের না বলা অনুভূতিই প্রকাশ করা হয়েছে এসব ঈদ কার্ডে।

বাজারে সর্বনি¤œ ২ টাকা থেকে শুরু করে আড়াই হাজার টাকার কার্ডও আছে। তবে ৫০ টাকা থেকে ৩০০ টাকা দামের মধ্যে কার্ডের বিক্রি বেশি।

দেশের সব প্রোডাক্ট হাউসই এবার কমবেশি ঈদ কার্ড বাজারে ছেড়েছে। আর এসব হাউসের কার্ড বিক্রি হচ্ছে এখন সারাদেশে।

বিশেষ করে পাড়া-মহল্লা জুড়ে এবং ফুটপাথে অস্থায়ী কার্ডের দোকানে দেদার বিক্রি হচ্ছে ঈদ কার্ড। বর্তমান যুগে এর প্রধান ক্রেতাও এই শিশু ও উঠতি বয়সীরা।

রয়েছে নজরকাড়া ডিজাইনের বাহারি রঙের ও কারুকার্যেও ঈদ কার্ড। ডাইক্যাট, অ্যাম্বুশ, জরি লাগানো, পলিপ্যাক করা নানা ধরনের কার্ড আছে। হাতে কাজ করা পাথর বসানো কারুকাজ খচিত ঈদ কার্ডও আছে।

পাইকারি বিক্রেতারা জানিয়েছেন, ঈদ বেশি বাকি নেই। তবু প্রতিদিনই লাখ লাখ পিস ঈদ কার্ড পাইকারি হারে বিক্রি হচ্ছে।

দেশে স্বনামধন্য প্রোডাক্ট হাউসগুলোর মধ্যে আইডিয়াল প্রোডাক্টস, আজাদ প্রোডাক্টস, কার্টুন প্রোডাক্টস, গোল্ডেন প্রোডাক্টস, হাবিব প্রোডাক্টস, হল মার্ক ও আর্চিস গ্যালারি উল্লেখযোগ্য। মূলত এসব কোম্পানিই বাজারে ঈদ কার্ড সরবরাহ করে থাকে।

ঈদ উপলক্ষে উপহারের বিপণিবিতানগুলো সেজেছে নানা রঙে। প্রিয়জনের জন্য মনের মতো উপহার কিনতে অনেকেই এর মধ্যে ভিড় জমিয়েছে সেখানে।

পোশাকের বাইরেও ঘর সাজানোর টুকিটাকি জিনিস শোপিস, পটারি, ল্যাম্প, ফুলদানি, চুড়ি, দুল, মালা, আংটি, ব্রেসলেট, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য, ব্যাগ, কলমদানি, কার্ড হোল্ডার, বই, সিডি যে কোনোটিই পারেন উপহার হিসেবে।


উপহার হিসেবে বইয়ের কোনো বিকল্প নেই। তাই উপহার হিসেবে নির্বাচন করতে পারেন বইও।

ছোটদের ক্ষেত্রে বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী, কার্টুন, হাসির বইয়ের পাশাপাশি সাধারণ জ্ঞান বা শিক্ষামূলক বই দিতে পারেন।

বই সবার জন্য একটি চমৎকার উপহার। তাই বন্ধুবান্ধবকেও দিতে পারেন বই। ভালো কোনো উপন্যাস বা কবিতার বই নির্বাচন করুন।

যারা ঘর সাজাতে পছন্দ করে, তাদের শোপিস উপহার দিতে পারেন। ফুলদানি, পটারি, টবে ক্যাকটাস থেকে শুরু করে উইন্ড চাইম, ল্যাম্পস্ট্যান্ডস বেছে নিতে পারেন তাদের জন্য।

অথবা উপহার হিসেবে নির্বাচন করুন এমন জিনিস, যেটা ঘরের সৌন্দর্য বাড়ানোর পাশাপাশি কাজেও লাগবে। যেমন কলমদানি, ম্যাগাজিন বাক্স প্রভৃতি।

মায়েদের উপহারও তাদের পছন্দ অনুসারে দিন। বাঁশের ও কাঠের ট্রে অথবা মাটির সুদৃশ্য কাপ, বাটি, মগ, গ্লাস, প্লেট পাওয়া যাচ্ছে, তাও দিতে পারেন। এ ছাড়া উপহার হিসেবে দিতে পারেন হাতব্যাগ, আয়না বা গয়নার বাক্স।

বাবাকে এমন কিছু উপহার দিন, যেটা কাজে লাগবে। বাবার চশমা, মোবাইল ফোনসেট, কলম, আর অফিসের কাগজপত্র সহজে আঁটবে, এমন ঝোলা ব্যাগ দিতে পারেন।

শিশুদের খেলনা, পুতুল, বল দেওয়ার পাশাপাশি দিতে পারেন চকলেট বাক্সও।

মেয়েবন্ধুকে দিতে পারেন গয়না। সে ক্ষেত্রে কৌশলে তার ঈদের পোশাকের রংটা জেনে এর সঙ্গে মিলিয়ে দিতে পারেন চুড়ি, কানের দুল, বালা, ব্রেসলেট অথবা বড় মালা।

গান শুনতে আমরা সবাই ভালোবাসি। ঈদ উপলক্ষে বাজারে অনেক নতুন গানের সিডি বের হয়েছে। আপনার প্রিয় মানুষকে তার পছন্দমতো গানের সিডি উপহার দিতে পারেন। এ ছাড়া যারা একটু বয়স্ক, তারা পুরোনো দিনের গানের সিডি পেলে খুশিই হবেন।

উপহার হিসেবে দিতে পারেন প্রসাধনীও। ক্রিম, শ্যাম্পু, সাবান থেকে শুরু করে বডি স্প্রেসহ বিভিন্ন রকম সুগন্ধি নির্বাচন করে নিতে পারেন পছন্দমতো।

কারুকার্যময় মগও দিতে পারেন উপহার হিসেবে, যা শোপিস হিসেবেও ব্যবহার করা যাবে। ছোটদের ক্ষেত্রে মিউজিকসহ মগও দিতে পারেন।

উপহার হিসেবে ফুলের জুড়ি নেই। তাই ঈদের দিন সকালে কাছের প্রিয়জনকে দিতে পারেন একগুচ্ছ তাজা ফুলও।

বিভিন্ন দামের মধ্যে উপহার পাবেন বিপণিবিতানগুলোতে।

আপনার বাজেট অনুযায়ী বেছে নিতে পারেন শোপিস (ছোট) ৫০-২৫০ টাকা, শোপিস (বড়) ২৫০-৫৫০, ল্যাম্প ২০০-৩৫০, আয়না ১৩০-২৮০, ফুলদানি ৩০০-৩৫০, টিস্যুর বাক্স ২৫০-৪৫০, ওয়াল ম্যাট ১৭০-৩৫০, তাজা গাছসহ শোপিস ১৬০-৩০০, দাবা বোর্ড ৫৫০-৮৫০, মাটির বাটি ৩০-১০০, মগ ৬০-৮০, গ্লাস ৮০-১০০, প্লেট ২০০-২৫০০, কাঠের ট্রে ৩০০-৫০০, কাঠের টি সেট ৩৫০-৪৫০, ব্যাগ ১২০-৪৫০, হাতব্যাগ ৫০-১০০, কাঠের বালা ৮০-১০০, চুড়ি ৫০-৮০, কানের দুল ৪০-২০০, মালা ১৫০-২৫০, চুড়ির আলনা ৮০-১২০, ছবির ফ্রেম ২০০-৪০০, কলমদানি ৮০-১৫০, চাবির রিং ৫০-৮০, বই ৫০-৩৫০, গানের সিডি ৬০-৮০ ও প্রসাধনী ১০০-৫৫০ টাকা।

আড়ং, যাত্রার ধানমন্ডি, বনানী শাখাসহ আজিজ সুপার মার্কেটের আইডিয়াস ক্রাফটস, ভার্টিকেল, শেপ অ্যান্ড ফর্ম, বসুন্ধরা সিটির ক্রিয়েশন, শোকেস ও নকশি বাংলায় পাবেন আপনার পছন্দের উপহার। এ ছাড়া আর্চিস, হলমার্কসে পাবেন উপহার সামগ্রী। নীলক্ষেতেও আসতে পারেন। গানের সিডি খুঁজতে যেতে পারেন বসুন্ধরা সিটির ষষ্ঠ তলায়।

বসুন্ধরার লেবেল-৪, বস্নক-এ শপ-৩০-এ পাবেন হস্তশিল্পের ব্যতিক্রমী উপহার। গাউছিয়া, পীর ইয়ামেনী, গুলশান এ্যাভিনিউ, রাইফেল স্কয়ার, মৌচাক মার্কেটে পাওয়া যাবে।

মোহাম্মদপুরে কুমিলস্না কেইন ফার্নিচার সেন্টার, ২৪/২ রিং মোহাম্মদপুর, ঢাকা, এই ঠিকানায় সারাসরি গিয়ে বিচিত্র ও ব্যতিক্রমী শো-পিস পাবেন।

এবারও ঈদ উপলক্ষে নানা ধরনের ঈদকার্ড বেরিয়েছে। এর মধ্যে আজাদ প্রডাক্টস এনেছে হাজার টাকা দামের স্টোন বসানো ঈদ কার্ড। এসেছে ‘রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশীর ঈদ’ গানের সুর থাকা কার্ডও।

নিউমার্কেটে আর্চিসের মূল শাখায় একটি ঈদ কার্ডের বোতামে টিপ দিয়ে শোনা গেল গান।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নাসির প্রিয়জনের জন্য বিভিন্ন উপহার কিনছিলেন। ঈদ কার্ড না কেনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কার্ড কেনার ঝামেলা ও খরচের মধ্যে যেতে ভালো লাগে না।   ইন্টারনেটে ফ্রি ঈদকার্ড পাঠানোর সুযোগ আছে। মোবাইলেও যখন-তখন শুভেচ্ছাবার্তা পাঠাতে পারছি।

কার্ড তৈরি ও বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠান আইডিয়াল প্রডাক্টসের ব্যবস্থাপক এহতেশামুল হক বলেন, মোবাইল ও ইন্টারনেটের যুগে ঈদ কার্ডে শুভেচ্ছা জানানোর আগের সেই রমরমা অবস্থা আর নেই। তবে এখনো অনেকে প্রিয়জনকে শুভেচ্ছা জানাতে ঈদ কার্ডই বেছে নিচ্ছেন।

তিনি বলেন, ঈদ উপলক্ষে আইডিয়াল প্রডাক্টস এবার হাতে আঁকা স্কেচকার্ড; ফুল, মসজিদ, মিনারের ছবি দিয়ে তৈরি কার্ড; বাচ্চাদের জন্য টম ও জেরি; প্রজাপতিসহ বিভিন্ন আকর্ষণীয় জিনিস ও আকৃতির কার্ড বাজারে এনেছে।

আজাদ প্রডাক্টস এবার ঈদ উপলক্ষে অ্যামবুশ, এক্সপোর্ট লেমিনেশন, বটপাতা ও পাটখড়ি দিয়ে তৈরি কার্ড, হৃদয় আকৃতির বিভিন্ন কার্ড বাজারে এনেছে। এর মধ্যে কিছু মিউজিক্যাল কার্ডও আছে। দুই টাকা থেকে শুরু হয়েছে কার্ডের দাম ২২০০ টাকা পর্যন্ত আছে।

বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান তার গ্রাহক ও শুভাকাক্সক্ষীদের ঈদকার্ড পাঠিয়ে শুভেচ্ছা জানাচ্ছে। বিষয়টি অনেকটা রেওয়াজে পরিণত হয়েছে

পাইকারি দামে ঈদ কার্ড কিনতে চাইলে যেতে হবে ঢাকার পুরানা পল্টনে। এখানে ঈদ কার্ড বিক্রি করে এমন দোকানের সংখ্যা ৫০টির বেশি। এখানকার বড় শোরুমগুলোর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে পুরানা পল্টন ছাড়াও তাঁদের ঢাকা এবং ঢাকার বাইরে শাখা আছে।

আজাদ প্রোডাক্টসের বিক্রয়কর্মী কাজী রেজাউল ইসলাম রেজা বলেন, পুরানা পল্টন ছাড়াও গুলশান ও বাংলাবাজারে শোরুম আছে।

আইডিয়াল প্রোডাক্টসের শাখা ব্যবস্থাপক নজরুল ইসলাম খান জানান, ঢাকায় তাঁদের শোরুম আছে বনানী, উত্তরা, বাংলাবাজারে আর ঢাকার বাইরে চট্টগ্রাম, সিলেট, নারায়ণগঞ্জ, রাজশাহী, বগুড়ায়।

ফয়সাল প্রোডাক্টসের শাখা ব্যবস্থাপক সৈয়দ রানা ইমাম বলেন, `পুরানা পল্টনেই আমাদের চারটি শোরুম। এ ছাড়া বাংলাবাজার, চকবাজার এবং ঢাকার বাইরে সিলেট, চট্টগ্রাম ছাড়াও দেশের বিভিন্ন জায়গায় শাখা আছে। `

মদিনা প্রোডাক্টসের শাখা ব্যবস্থাপক শামীম আল মামুন জানান, পুরানা পল্টন ছাড়াও বাংলাবাজার ও চট্টগ্রামে শাখা আছে।

আর অর্ডার দিলে তাঁরা এস এ পরিবহন কিংবা যে কোন কুরিয়ারেও কার্ড পাঠান, তবে তা চার্জ দিয়ে তুলে নিতে হয়।

বাংলাদেশ সময় ১৪৫০ ঘন্টা, আগস্ট ১৯. ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।