কলিন পাওয়েল বিশ্বের কাছে একটি পরিচিত নাম। ইরাক যুদ্ধে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশকে সর্মথন দিয়ে যিনি বিশ্ববাসীর কাছে সমালোচিত হয়েছেন।
পাওয়েল ১৯৩৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে জন্মগ্রহণ করেন। পড়াশোনা শুরু করেন নিউইয়র্ক সিটি পাবলিক স্কুলে। পরে ১৯৫৪ সালে মোরিস হাই স্কুল থেকে গ্র্যাজুয়েট হন। আশ্চর্য বিষয় ছিল, পাওয়েল তখনও নিজের জীবনের লক্ষ্য ঠিক করেননি। পাওয়েল যখন সিটি কলেজ অব নিউইয়র্ক থেকে জিয়োগ্রাফিতে পড়ছেন ঠিক সে মুহূর্তে তিনি সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। ১৯৫৮ সালে তিনি কমিশন লাভ করেন।
পাওয়েল ভিয়েতনাম যুদ্ধেও একটি ইউনিটের নেতৃত্বে ছিলেন। সফলতার সাথে তিনি ক্যারিয়ার অতিবাহিত করলেও সর্বশেষ ইরাক যুদ্ধে সমালোচনায় পড়ে তিনি তারা সারা জীবনের অর্জন হারিয়ে ফেলেন।
সমালোচনা এড়াতে একপর্যায়ে তিনি বুশের বিরুদ্ধেও কথা বলেন। এবং সমর্থন জানান বারাক ওবামাকে।
স্ট্যানফোর্ডে প্রায় ৪৫০০ মানুষের সামনে পাওয়েল নেতৃত্ব বা দলনেতার দায়িত্ব নিয়ে খুব চমৎকার একটি ভাষণ দিয়েছিলেন। বলা হয়, নেতৃত্ব নিয়ে নির্দেশনামূলক ভাষণগুলোর মধ্যে এ ভাষণই সেরা।
স্বপ্নযাত্রার পাঠকদের জন্য কলিন পাওয়েলের দেওয়া ভাষণটি অনুবাদ করেছেন ফারজানা রুম্পা।
------------------------------------------------------------
এসো আজ কথা বলি একজন দলনেতার দায়িত্ব নিয়ে।
তোমরা ভাবতে পারো, দলনেতাদের কি এমন করার থাকতে পারে!
আমি সে বিষয়েই কথা বলতে চাচ্ছি। আমার মতে, নেতাদের উচিত অবশ্যই তার দলের লোকদের এমন একটি পরিবেশ উপহার দেওয়া, যে পরিবেশে সবাই কাজ করতে পারবে নিশ্চিন্তে এবং আনন্দে।
এখন প্রশ্ন হতে পারে, এতো কিছু মাথায় রেখে কাজ করা কী করে সম্ভব?
ঠিক এ জায়গাতেই আমি সাহায্য করতে পারি। আমার কিছু বাস্তব অভিজ্ঞতা এবং পর্যবেক্ষণ দিয়ে তোমাদের বোঝতে পারি।
১.
পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশনে প্রায়ই দলনেতারা বলেন, ‘উদ্দেশ্য এবং গন্তব্যের স্বচ্ছ ধারণা থাকা জরুরী। প্রতিষ্ঠানের উদ্দেশ্য সাধনে কাজ করো’- ইত্যাদি ইত্যাদি।
গন্তব্য বা মিশনÑ এই শব্দগুলো কিন্তু শুনতে খুব ভালো লাগে। দেখতেও বেশ ভালো লাগে। তবে বাস্তবে এ শব্দগুলোর প্রয়োগ অতটা সহজ নয়।
নেতারা যদি বলে, ‘আমার উদ্দেশ্যকে সফল করো’। আমি মনে করি এই নীতির চেয়ে ‘উদ্দেশ্য সামনে রেখে চলো’ স্লোগানটি বেশি কার্যকর হবে। কারণ, অন্যের উদ্দেশ্য কিংবা লক্ষ্য অর্জনে দলের লোকেরা যতটা মনোযোগী হয়; তার চেয়েও বেশী মনোযোগী হবে যদি সেখানে কিঞ্চিৎ পরিমানেও নিজের উদ্দেশ্য কিংবা লক্ষ্য থাকে।
তাই যখন কোন প্রতিষ্ঠানের দলনেতা হিসেবে তুমি নির্বাচিত হবে; হোক সেই প্রতিষ্ঠান মাত্র তিনজনের বা ত্রিশ লক্ষ মানুষের, তাদের মাঝে একটি বীজ ঢুকিয়ে দেওয়া জরুরী। একটি নীতি, ‘এখানে শুধু লাভ- লোকসানের হিসেব করতে আসিনি, এসেছি এই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে নিজেদের কর্মজীবনে নতুন মাত্রা যোগ করতে, এসেছি অভিজ্ঞতার নিত্য নতুন গল্প লিখতে। ’
উন্নত সমাজ হোক আর সফল প্রতিষ্ঠানই হোক, একজন সফল দলনেতা সবসময় একটি বিষয়ের উপরেই জোর বেশী দেয়। সেটা হলো, কোন মানুষই তুচ্ছ নয়। বরং এক একজন কর্মী এক একটি প্রতিষ্ঠান, এক একটি ভিন্ন নীতি। এদের একক সাফল্যই প্রতিষ্ঠানের উন্নতির ভিতে এক একটি শক্ত বুনোট।
২.
দ্বিতীয়টি হলো তোমার কমান্ডে যারা কাজ করছে তাদের বিষয়ে নজর দাও। যারা তোমাকে অনুসরণ করছে। যে দল তোমাকে সসম্মানে দলনেতার আসনে বসিয়েছে- তাদের সম্মান করো। নিজের মতো করে তাদের দক্ষ করে তোলো। কারণ এরাই তোমার নির্দেশনায় ঝাঁপিয়ে পড়বে যে কোন কাজে।
তাদের তৈরি করার জন্য যা কিছু প্রয়োজন; তার সবকিছুই তাদের কাছে পৌঁছে দাও। যে সব হাতিয়ার তাদেরকে গড়ে তুলবে আত্মবিশ্বাসী করে। সেটা হতে পারে কম্পিউটার; আবার হতে পারে ক্ষুদ্র কোন স্ক্রু ড্রাইভার। তাতে কী! বিশাল দৈর্ঘ্যরে সমুদ্র সৈকত জয় করার আত্মবিশ্বাস জাগাতে ছোট্ট একমুঠো বালিকণাও কখনো কখনো যথেষ্ঠ।
একজন সত্যিকারের নেতা তার অনুসারীদের কখনো নিজের উপর বিশ্বাস হারাতে দেয় না।
তুমি শুধু অনুসারীদের মৌখিক উপদেশ দিবে না। তুমি সবসময় তার পাশে থাকবে। তার কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে হাঁটবে। তার অপরাধে যদি তুমি একবার চোখ রাঙিয়ে কথা বলো, তবে অবশ্যই ভালো কাজের জন্য অন্তত দশবার পিঠ চাপড়ানোটাও তোমার দায়িত্বের মধ্যে পড়ে।
কেউ যদি কোন কাজে ব্যর্থ হয় তাকে কাজ থেকে অব্যাহতি দেওয়ার মানসিক শক্তি তোমার থাকতে হবে। ব্যর্থ কর্মীদের সঙ্গ তোমার ব্যর্থতার কারণ হতে পারে।
তোমাকে পরিস্থিতি সামাল দিতে হবে অবস্থা বুঝে। যাকে বলে অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা! কারণ দলনেতা হওয়ার জন্য তোমাকে সবার আগে যেতে হবে কর্মীদের মনের সেই স্থানে, যে স্থানে থাকলে সবাই তোমাকে চোখ বুঁজে বিশ্বাস করবে । তাদের বুঝতে দিতে হবে যে, তুমি তাদের পাশে আছো। তারা আছে তোমার জগতজুড়ে। তাদের সাফল্যই তোমার সাফল্য। অতএব একসাথে এগিয়ে যাও সাফল্যের পথে, অবিরাম।
বাংলাদেশ সময়: ১৬২৫ ঘণ্টা, আগস্ট ২০, ২০১১