একটি ট্রেন ঢেকে দেওয়া হলো বিশাল কাপড় দিয়ে। উৎসুক জনতা অপেক্ষা করছে।
ডেভিড কপারফিল্ড জন্মগ্রহণ করেন নিউইয়র্কে ১৯৫৬ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর। জন্মের পর নাগরিক সমস্যায় পড়তে হয় ডেভিডকে। কারণ, বাবা ডেভিড কটকিন ছিলেন রাশিয়ান এবং মা রেবেকা ছিলেন জেরুজালেমের। যদিও পরে এ সমস্যা থেকে ডেভিডের পরিবার বের হয়ে আসে।
ছোটবেলা থেকেই যাদুর প্রতি ডেভিডের অন্যরকম আগ্রহ ছিল। নিউজার্সিতে থাকতে মাত্র ১২ বছর বয়স থেকেই ডেভিড যাদুর উপর শিক্ষাগ্রহণ শুরু করেন। মজার বিষয় ছিল ডেভিড ছিল আমেরিকার ম্যাজিশিয়ান সোসাইটির সর্বকনিষ্ঠ সদস্য। এমনকি মাত্র ১৬ বছর বয়সে সে নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যাজিকের শিক্ষক হয়ে যায়।
বিশ্ববাসীর কাছে এ ব্যক্তিটির পরিচয় ‘রহস্যে ঘেরা মানব’ হিসেবে। এ ম্যাজিশয়ান বলেন, ‘ম্যাজিক যদিও চোখের ধাঁধা কিন্তু তারপরও ম্যাজিক ইজ এন আর্ট। আর্ট অব লাইফ’।
বিভিন্ন সময়ে তার সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছে। কিন্তু ২০০০ সালে সাংবাদিক ডোমিনিকের মুখোমুখি হয়েছিলেন ডেভিড কপারফিল্ড। সে সাক্ষাৎকারের অংশবিশেষ অনুবাদ করে দেওয়া হলো।
বছরে আপনি পাঁচশ’র বেশি স্টেইজ শো করেন। আপনার কি কখনো মনে হয়নি আরেকটু ধীরে এগুনো উচিত।
সত্যি কথা হলো, আমি যা করছি সেটাকে আমি খুব ভালোবেসেই করছি। আর কাজের অধিক চাপ নিয়ে কথা তো! আমি এখনও ক্লান্ত হইনি। যাদুর শৈল্পিক আনন্দে আমিও ঘোরের মধ্যেই দিন কাটাচ্ছি। তবে যেদিন ক্লান্ত হবো সেদিন ভেবে দেখবো।
ঠিক কখন আপনার মধ্যে যাদুর প্রতি আগ্রহ তৈরি হয়?
যাদুর প্রতি জীবনের শুরুতেই আমার ভেতর আগ্রহ তৈরি হয়। সেটা আমার দাদুর সাথে থেকে। দাদু একবার আমাকে তাশের কার্ড দিয়ে যাদু দেখাচ্ছিল। তখন আমার বয়স মাত্র সাত। সে সময় ক্ষুদ্র এ যাদু আমার ভেতরটা নাড়া দেয়। তবে দুঃখের বিষয় হলো, আমি যখন জনপ্রিয় হয়ে উঠি ঠিক তার আগেই আমার দাদু পৃথিবী ছেড়ে চলে যান। কিন্তু প্রতি রাতে ক্লান্ত হয়ে আমি যখন ঘরে ফিরি; তখন আমার যাদুর সমস্ত কৃতিত্ব আমার দাদুকে উৎসর্গ করে দেই।
আমি যতটুকু আপনার সম্পর্কে জানি যে, আপনার ছেলেবেলা অত্যন্ত অসহায়ত্বের মধ্যে দিয়ে গিয়েছে। সমাজিকভাবে নিজেকে উপরের সারিতে নিয়ে আসার জন্যই আপনি যাদু শিল্পে মনোনিবেশ করেছেন। বিষয়টা কি আসলেই সত্যি?
আমি যখন যাদু শিখছি এবং মানুষকে দেখাচ্ছি ঠিক সে মুহূর্তে দেখলাম সবাই আমাকে আলাদা চোখে দেখে। বিষয়টা আমাকে অন্যরকম অনুভূতি এনে দেয়। আর যখন স্কুলে ভর্তি হয়ে অন্য সবাইকে যাদু দেখাই তখন তো দেখি ক্লাসের মেয়েরাও আমার দিকে ভিন্ন দৃষ্টিতে তাকাচ্ছে। কিন্তু এ সব ছোটবেলার অনুভূতি। বড় হয়ে আমি এ শিল্পটার প্রতি মোহ অনুভব করি। আর সমাজিকভাবে নয়; বলতে হয় অর্থনৈতিকভাবে যাদু সত্যিই আমার জীবনের সব কিছু ম্যাজিকের মতো পাল্টে দিয়েছে।
তরুণ ম্যাজিশিয়ানদের প্রতি আপনার কোন পরামর্শ আছে?
জীবনে চর্চার বিকল্প কিছু আমি পাইনি। শুধু যাদু নয়; আমি তরুণদের বলবো, যদি তোমাদের অন্য কোন ক্ষেত্রেও প্রতিভা থাকে। তবে সেই প্রতিভার সঠিক মূল্যায়ন একমাত্র চর্চা দিয়েই সম্ভব। চর্চা ছাড়া কারো সফল হওয়া সম্ভব নয়।
এতো বছরের জীবনে আপনি কোন বিষয়টি নিয়ে সবচেয়ে বেশি গর্ববোধ করেন?
‘প্রজেক্ট ম্যাজিক’ নামে আমার একটি শো আমি করে থাকি। সেখান থেকে বিপুল পরিমাণ ফান্ড কালেক্ট হয়। সে ফান্ডের সমস্ত অর্থ দিয়ে বর্তমানে ৩০ টি দেশে প্রায় ১০০০ হাসপাতালে স্ট্রোক রোগীদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। হয়তো খুব সীমিত আকারে হচ্ছে। কিন্তু তারপরও কিছু রোগী সুস্থতা লাভ করছেন। এ বিষয়টি আমাকে গর্বিত করে। মনে হয়, এ পৃথিবীর জন্য অন্তত একটি কাজ করে যেতে পারলাম।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৩৫ ঘণ্টা, আগস্ট ২৩, ২০১১