ঢাকা, রবিবার, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ১৮ মে ২০২৫, ২০ জিলকদ ১৪৪৬

ফিচার

গুলশান বনানীতে ঈদের বিলাসবহুল কেনাকাটা

মনোয়ারুল ইসলাম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫:৫৪, আগস্ট ২৪, ২০১১
গুলশান বনানীতে ঈদের বিলাসবহুল কেনাকাটা

ঢাকা: রাজধানীর অভিজাত এলাকা গুলশান ও বনানীর বিভিন্ন দোকানে জমে উঠেছে ঈদের কেনাকাটা। এ এলাকার বেশিরভাগ ক্রেতাই বিত্তবান।

আর তাদের জন্য লাখ লাখ টাকা মূল্যের পোশাক তোলা হয়েছে অভিজাত মার্কেটগুলোতে।

রাজনীতিবিদ, মন্ত্রী, এমপি, শিল্পপতি, ব্যবসায়ী, মিডিয়ার তারকা, সরকারি-বেসরকারি উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাদের পরিবার পরিজন গাড়ি হাঁকিয়ে শপিংমলে আসছেন। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত প্রতিটি মার্কেটে ক্রেতাকে আনন্দ দিতে বাজানো হচ্ছে আধুনিক সঙ্গীত। আর ফ্যাশনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে দোকানে সাজানো হয়েছে আধুনিক রুচির দামী পোশাকের পসরা।

নামকরা ব্র্যান্ডের জুতা এবং দেশের বিখ্যাত সব ফ্যাশন ডিজাইনারদের তৈরি পোশাক পাওয়া যাচ্ছে এ এলাকার বিভিন্ন দোকানে। আর এসব পোশাকে রয়েছে দেশীয় ঐতিহ্যের মিশেল।

কয়েকটি মার্কেট সরজমিন ঘুরে দেখা যায়, শাড়ি, পাঞ্জাবি, মেয়েদের পোশাকের দোকান এবং নতুন কাপড়ের সঙ্গে মিলিয়ে জুতা, এক্সেসরিজ ও কসমেটিকসের দোকানগুলোতেই তুলনামূলক ভিড় বেশি। দোকানীরা জানায়, এ ধরনের পণ্যই বেশি বিক্রি হচ্ছে।

গুলশান-বনানীর বিভিন্ন শপিংমলের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এক্সক্লুসিভ সব ধরনের টি-শার্ট, পাঞ্জাবি, শার্ট, থ্রি পিস, শাড়ি, লেহেঙ্গা আনা হয়েছে বিদেশ থেকে। প্রত্যেকটি একপিস করে আনা হয়েছে। দেশের কোথাও এসব পোশাকের দ্বিতীয় কপি পাওয়া যাবে না।

গুলশান শপার্সওয়ার্ল্ড, নাভানা টাওয়ার, মনিক্যাপিটাল সেন্টার, পিংক সিটি, বস্নুজা স্টিচ সাজানো হয়েছে লাখ লাখ টাকা মূল্যের পোশাকে। সেখানে একটি শার্ট সর্বনিম্ন বিক্রি হচ্ছে আড়াই হাজার টাকায় এবং সর্বোচ্চ ৩১ হাজার টাকা দামেরও শার্ট মিলছে।

বড় ফ্যাশন হাউসগুলোর মধ্যে জারা ফ্যাশন, ভাসাবি, শপার্সওয়ার্ল্ডসহ বিভিন্ন হাউসে ভারতীয় কাপড়ের প্রাধান্য বেশি।

বনানীর চেয়ে গুলশানে শপিংমল অনেক বেশি। তাই বনানীর চেয়ে গুলশানে ভীড়টাও বেশি। বনানীর বাসিন্দারাও গুলশানে এসে শপিং করছেন।

গৃহবধূদের পছন্দের তালিকায় গুলশানের ‘টাঙ্গাইল শাড়ি কুটির’ এর খ্যাতি বহুদিনের। দোকানের ব্যবস্থাপক মো. বায়েজিদ জানান, ঈদে নিজস্ব কারিগর দিয়ে ক্রেতাদের জন্য তারা নিয়ে এসেছেন বিভিন্ন ধরনের শাড়ি। এর মধ্যে রয়েছে অ্যান্ডি ও হাফ সিল্কের ভেজিটেবল ডাইয়ের শাড়ি। দাম ১৬০০ থেকে ৫ হাজার ৫০ টাকা। এছাড়া ডেমরায় নিজস্ব কারিগরের হাতে তৈরি এক্সক্লুসিভ ডিজাইনের জামদানি শাড়ি মিলছে ৪১ হাজার থেকে সর্বোচ্চ ৭০ হাজার টাকায়। সিল্কের তৈরি ছেলেদের পাঞ্জাবিও এখানে পাওয়া যায়।

গুলশান-বনানী সংযোগ সড়কের পাশে রয়েছে নানা রকমের কাপড়ের দোকান। বনানীর ডেসিডেল-এর রূপায়ণ গোল্ডেন এজ শাখার ইনচার্জ রেহেনা জানান, ১ হাজার ৫০০ টাকার সুতি শাড়ি থেকে শুরু করে দেড় লাখ টাকার বিয়ের শাড়ি আমরা বিক্রি করি। বেচা-কেনা ভালো হচ্ছে। বিক্রির তালিকায় সালোয়ার-কামিজ এবং শাড়িই বেশি।

উত্তরা থেকে লেক্সাস গাড়ি নিয়ে শাতিলা ইসলাম তার পরিবার নিয়ে এসেছেন গুলশানের নাবিলা শপিং সেন্টারে। তিনি বলেন, ‘গুলশানে সবচেয়ে দামি জিনিস পাওয়া যায়। আমরা সারাবছরই গুলশানে কেনাকাটা করি। ’
 
গুলশানের ইকবাল সেন্টারের বলাকা জুয়েলার্সের সেলসম্যান কৃষ্ণ কান্ত ঘোষ জানান, আমাদের এখানে সর্বনিম্ন ৮ হাজার টাকায় আংটি পাওয়া যাচ্ছে। সর্বোচ্চ ৬ লাখ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে কানের দুল। তবে অর্ডার ছাড়া আমরা এক্সক্লুসিভ কিছু তৈরি করার সাহস পাচ্ছি না। ২৫ হাজার থেকে দেড় লাখ টাকার গহনাই বেশি বানিয়ে রেখেছি।

গুলশান-১ এর প্লাডিয়াম মার্কেট ও বনানীর কাকলী শপিং সেন্টারে সানমুন নিয়ে এসেছে ফেব্রিক্স ট্রপিকেল, উলেন দিয়ে বিভিন্ন পোশাক।

গুলশান-বনানীর বিভিন্ন রোড়ে আছে দেশি বুটিক শপ কে ক্রাফট, সাজ ফ্যাশন, রং, বিবিয়ানা, দেশাল, নগরদোলা, অন্যমেলা, সাদাকালো, বাংলার মেলা, অন্যরকম, জয়নব, কীত্তনখোলা, ট্রেন্ডস, মাচমোরের পাশাপাশি আছে রেমন্ডসহ বিদেশি বিভিন্ন ব্র্যান্ডের বিক্রয়কেন্দ্র। এর বাইরেও বনানী ও গুলশানে অন্যান্য ফাশন হাউসগুলোর মধ্যে ক্যাটস আই, দর্জিবাড়ি, কুমুদিনী হ্যান্ডি ক্রাফট, লুবনান, আড়ং ও মায়াসি। এসব প্রতিষ্ঠান ঈদ উপলক্ষে এনেছে আকর্ষণীয় সব পোশাক।

দেশি বুটিকগুলোতে সুতি শাড়ির দাম গড়পড়তা ৭৫০ টাকা থেকে চার হাজার টাকা, সিল্ক-মসলিন ৯০০ থেকে ৩০ হাজার টাকা। থ্রিপিস ৭৫০ টাকা থেকে ২০ হাজারের মধ্যে। পাঞ্জাবি ৫৫০ টাকা থেকে ১০ হাজার টাকা। ট্রেন্ডসের ব্যবস্থাপক মাহিন জানালেন, শার্ট ৬৫০ থেকে সাড়ে আট হাজার টাকা। প্যান্ট জিন্স ৯৫ থেকে এক হাজার ২৫০ টাকা, ফরমাল এক হাজার ৫০ থেকে দুই হাজার ৫০০ টাকা।

গুলশানের অভিজাত শপিংমলগুলোর বাহারি সাজসজ্জা আর কারুকার্যখচিত বৈচিত্র্যময় পোশাকসামগ্রী যে কারোই নজর কাড়ে। নিম্নবিত্ত তথা গরিব মানুষ ওইসব মলে প্রবেশ করারও সাহস পায় না। কিন্তু এসব মলে বিকিকিনি চলছে দেদার।

এসব এলাকার ক্রেতাদেও কাছে দাম কোনো সমস্যাই নয়, পছন্দটাই আসল। নগদে, ক্রেডিট কার্ডে ধনাঢ্য ক্রেতাদের আভিজাত্য আর ‘লেটেস্ট’ ফ্যাশনের এসব পণ্য বিক্রি হতে দেখা গেছে।

গুলশান ১ নম্বর সার্কেলে ১৪ নম্বর সড়কের ৭ নম্বর বাড়িতে অবস্থিত জারা ফ্যাশনমল। এখানে রয়েছে বিদেশি দামি শাড়ি, পাঞ্জাবি, সালোয়ার, থ্রিপিস, শার্ট, শেরওয়ানি, ট্রাউজার, শিশুদের পোশাক, জুতো, জুয়েলারিসহ যাবতীয় পণ্য।

শপিংমলটির পরিচালক আমির হোসেন জানান, তারা ভারত, পাকিস্তান, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়াসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নামি ব্র্যান্ডের পণ্যসম্ভার এক জায়গায় করেছেন। তাদের প্রতিটি পণ্যই অত্যন্ত মানসম্মত, রুচিশীল ও আভিজাত্যপূর্ণ। তাদের বিশাল কর্মীবাহিনী দেশ-বিদেশ ঘুরে এসব পণ্য সংগ্রহ করেছেন।

গুলশানের ১৪ নম্বর সড়কে ৯ নম্বর বাড়িতে ঐতিহ্যবাহী অভিজাত শপিংমল নাভিলা। নাভিলার কাস্টমার রিলেশন্স ম্যানেজার সৈয়দা নার্গিস জাহান জানান, শিশু থেকে শুরু করে সব বয়সীর পোশাক পাওয়া যাচ্ছে তাদের দোকানে। অনেক তারকারা আসছেন এখানে কেনাকাটা করতে।

তিনি বলেন, ‘তিন-চার হাজার টাকা থেকে শুরু করে দু’আড়াই লাখ টাকা দামের শাড়িও রয়েছে তাদের সংগ্রহে। কটন, বুটিক, এক্সক্লুসিভ, জার্কান স্টোনের কাজ করা শাড়ি বেশ চলছে। সেলাই করা ও সেলাই ছাড়া সালোয়ার-কামিজ, গোল্ডপ্লেটেড গহনা, এক্সক্লুসিভ পাঞ্জাবি, শেরওয়ানি, শার্ট, বাচ্চাদের পোশাকসহ হরেকরকম বাহারি পণ্য রয়েছে তাদের সংগ্রহে।

গুলশানের ১ নম্বরে ক্রেতারা দামি জিনিস কিনতে যাচ্ছেন শপার্সওয়ার্ল্ডে। উচ্চবিত্ত ক্রেতাদের আভিজাত্যের দিকে খেয়াল রেখেই এখানে পণ্যের দাম প্রায় আকাশচুম্বী। মিলছে বিলাসী সব পণ্য, যার দাম শুনে আক্ষরিক অর্থেই চোখ ছানাবড়া হওয়ার জোগাড় হয়! এই মলটির কর্তৃপক্ষ বেশ লুকোচুরিই করছে বলা চলে।

তারা কেউ দাম সম্পর্কে কোনো কথা বলছেন না। তাদের একটাই বক্তব্য এতে করে অফিস থেকে ঝামেলা করে। তাই তারা কোনো তথ্য দিতে অপারগতা প্রকাশ করেছে। এমনকি ছবি তুলতেও নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তাদের বক্তব্য হলো- মিডিয়ায় তথ্য দিলে ট্যাক্স অফিস থেকে ঝামেলা করে।

গুলশান এভিনিউয়ের রূপায়ণ গোল্ডেন এজে ক্রেতার সমাগম যথেষ্ট। পোশাকের দোকান ইটারনিটির স্বত্বাধিকারী সাব্বির মাহামুদ বললেন, তাদের এখানে শাড়ির দাম ১৫ থেকে ৩৫ হাজার এবং থ্রিপিস নয় হাজার থেকে ২৫ হাজার।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৪৯ ঘণ্টা, আগস্ট ২৪, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।