ঢাকা, রবিবার, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ১৮ মে ২০২৫, ২০ জিলকদ ১৪৪৬

ফিচার

আবর্জনার ভিতর জীবন

শেখ নাসির হোসেন, আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬:৫২, আগস্ট ২৮, ২০১১
আবর্জনার ভিতর জীবন

রাজধানী শব্দটা মনে আসলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে দালানকোঠা আর দীর্ঘ সড়কের দৃশ্যপট। হাজারো লাল-নীল বাতি আর অগুনতি মানুষের পদচারনায় মুখরিত রাজধানী।

তবু সব রাজধানীই কি এক রকম। ঝা তকতকে রাজধানীর বুকেই গজিয়ে ওঠে কতনা ভাবতে না পারা ঘটনা।

মোজাম্বিকের রাজধানী মাপুতো তেমনই একটি শহর। এই শহরের একটা অঞ্চলজুড়ে শুধু আর্বজনা আর আবর্জনা। আর এই আবর্জনার মাঝেই বেঁচে আছে কিছু মানুষ। আবর্জনাই তাদের জীবিকা নির্বাহের একমাত্র অনুষঙ্গ।

সম্প্রতি পর্তুগিজ আলোকচিত্রী হোসে ফেরেইরা মোজাম্বিক শহরের বিমানবন্দরের নিকটবর্তী হুলেন আবর্জনাক্ষেত্র পরিদর্শন করেন। তার তোলা ছবিতে ফুটে উঠেছে আবর্জনা ভরা শহরে বসবাসরত কিছু মানুষের জীবনের কঠিন আর নির্মম বাস্তবতা।

ফেরেইরা বলেন, সেখানকার যে বিষয়টি আমাকে উদ্বুদ্ধ করেছে তা হলো, এত কষ্টের মধ্যেও সেখানে কিছু ‘ভাল মানুষ’ আছে, যা আগে আমি কখনও দেখিনি। সেখানকার মানুষের মধ্যে আমি যে শান্তি ও একে অপরের প্রতি সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক  এবং আতিথিয়েতার গুণ দেখেছি, তা পৃথিবীর অনেক এলাকার মানুষের মধ্যে পাইনি।  

তিনি আরও বলেন, আমি সেখানে ‘আবাসহীন’ এবং ‘আবর্জনা সংগ্রাহক’ এই দুই শ্রেণীর মানুষের দেখা পেয়েছি। অনেকেই সেখানকার আবর্জনার ওপর নির্ভর করে বেঁচে থাকেন, কেউ আবার আবর্জনার ভেতর খাবার খোঁজেন, কেউবা খোঁজেন পুনঃব্যবহারযোগ্য জিনিসপত্র।

এগুলো সংগ্রহ করে তারা বিভিন্ন কারখানায় বিক্রি করে যে টাকা পায় তা বেঁচে থাকার জন্য যথেষ্ট নয় কিন্তু তারপরেও বয়ে চলে তাদের জীবন। কেউ বলতে পারে না সেখানে কত মানুষ বসবাস করে। তবে বিভিন্ন প্রতিবেদন অনুযায়ী দেখা যায় সেখানে প্রায় ৭০০ ছিন্নমূল মানুষ বাস করে।

পুরো আবর্জনা ক্ষেত্রটির আয়তন ১৭ হেক্টর (এক লাখ ৭০ হাজার বর্গ মিটার)। এটি মাপুতো শহরের আবর্জনা ফেলার একমাত্র সরকারি জায়গা। শহরটিতে প্রায় ১০ লাখের বেশি মানুষের বসবাস।


ফেরেইরার তোলা ছবিতে দেখা যাচ্ছে শহর থেকে আসা আবর্জনাভর্তি একটি ট্রাকের পেছনে কয়েকজন মানুষ ছুটছে।

ট্রাক থেকে আবর্জনা ফেলার সঙ্গে সঙ্গে তারা আবর্জনার ওপর লাফ দেয়। সেখানে খাবার, পুনঃব্যবহারযোগ্য জিনিস, মরা জীবজন্তু এমনকি সদ্য জন্মগ্রহণ করা মৃত শিশুও পাওয়া যায়।

‘আমার পক্ষে এই নিদারুণ বাস্তবতা দেখে ছবি তোলা সহজ ছিল না। আমার হাতের ক্যামেরা আমার কাছেই অনেক ভারি ঠেকছিল। যে দৃশ্যটি আমাকে সবচেয়ে বেশি কষ্ট দিয়েছে তা হলো, ওখানে দেখলাম দুজন মহিলা একটি মৃত কুকুরের পঁচা গলা মাথা গোগ্রাসে খাচ্ছিল। ’ বললেন তিনি।

এভাবেও মানুষ বেঁচে থাকতে পারে? বলে উন্নত বিশ্বের দিকে প্রশ্ন ছুড়ে দেন আলোকচিত্রী ফেরেইরা ।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৪৩ ঘণ্টা, আগস্ট ২৭, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।