ঢাকা, রবিবার, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ১৮ মে ২০২৫, ২০ জিলকদ ১৪৪৬

ফিচার

আমেরিকা হবে মোটকুদের দেশ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯:১৩, আগস্ট ২৮, ২০১১
আমেরিকা হবে মোটকুদের দেশ

যুক্তরাষ্ট্রের মানুষ যে হারে মোটা হচ্ছে, এই ধারা অব্যাহত থাকলে ২০৩০ সালের মধ্যে অর্ধেক মার্কিনি স্থূলকায় হয়ে যাবে। ওই সময়ের মধ্যে স্থুলস্বাস্থ্য সমস্যায় আক্রান্ত নারী-পুরুষের সংখ্যা ১৬ কোটি ৪ লাখ ছাড়িয়ে যাবে।

অর্থাৎ আমেরিকা পরিণত হবে মোটা মানুষের দেশে।

সম্প্রতি একদল স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ এই সতর্কবাণী শুনিয়েছেন।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ছোঁয়াচে নয়, এমন রোগ সৃষ্টির প্রথম ও সবচেয়ে বড় কারণ ধরা হয় তামাক ও তামাকজাত দ্রব্য সেবনকে। কিন্তু খুব শিগগির তামাকের জায়গা দখল করবে স্থূলতা। এই সমস্যার কারণে আগামী দুই দশকে ৭৮ লাখ মানুষের নতুন করে ডায়াবেটিস, ৬৮ লাখ মানুষের হৃদরোগ ও স্ট্রোক এবং ৫ লাখ ৩৯ হাজার মার্কিনির ক্যান্সার রোগ হবে বলে ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন তারা।

নিউইয়র্কে কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মেইলম্যান স্কুল অব পাবলিক হেলথে ক্লেয়ার ওয়াং পরিচালিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের ৩২ শতাংশ পুরুষ ও ৩৫ শতাংশ নারী বর্তমানে স্থূলস্বাস্থ্যের অধিকারী।

স্থূলতা নিয়ে পরিচালিত ওই গবেষণা প্রতিবেদনটি চারটি আলাদা ধারাবাহিক নিবন্ধে ‘দ্য ল্যানসেট’ সাময়িকীতে প্রকাশ করা হয়েছে।

গবেষণায় বলা হয়েছে, বিশ্বের নেতৃস্থানীয় অর্থনীতির দেশগুলোর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের মানুষ সবচেয়ে বেশি স্থূল। আর এ সমস্যা দিন দিন ব্যাপক আকার ধারণ করছে।

স্থূলস্বাস্থ্য সমস্যার দিক দিয়ে ব্রিটেনের মানুষও রয়েছে বেশ ঝুঁকির মধ্যে। ২০৩০ সালের মধ্যে ব্রিটিশদের মধ্যে ৪১ থেকে ৪৮ শতাংশ পুরুষ ও ৩৫ থেকে ৪৩ শতাংশ নারী স্থূলস্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগবেন। বর্তমানে এই হার নারী-পুরুষ মিলিয়ে ২৬ শতাংশ।

এ স্থূলতার কারণে ৬ লাখ ৬৮ হাজার ব্রিটিশ ডায়াবেটিস, ৪ লাখ ৬১ হাজার ব্রিটিশ হৃদরোগ এবং ১ লাখ ৩০ হাজার ব্রিটিশ ক্যান্সারে আক্রান্ত হবেন বলে সতর্ক করেছেন বিশেষজ্ঞরা।

এই স্থূলতার সবচেয়ে বড় কারণ হিসেবে তারা মাত্রাতিরিক্ত খাবার গ্রহণ ও অপর্যাপ্ত কায়িক পরিশ্রমকে দায়ী করেছেন।

পৃথিবীর বেশির ভাগ দেশেই স্থ‍ূলতা এখন একটি উদীয়মান সমস্যা। এই সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করলে স্বাস্থ্য ও স্বাস্থ্য সুরক্ষা খাতে রাষ্ট্রীয় ব্যয় অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।

স্থূলতার কারণে হৃদরোগ, স্ট্রোক, ডায়াবেটিস, বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সার, উচ্চ রক্তচাপ, উচ্চ কোলেস্টেরলসহ নানাবিধ স্বাস্থ্যসমস্যা দেখা দেয়।

ওয়াং ও তার সহকর্মীরা সতর্ক করে বলেছেন, শুধু স্থূলতা সামাল দিতে যুক্তরাষ্ট্রকে স্বাস্থ্যখাতের বরাদ্দকৃত অর্থের ২ দশমিক ৬ শতাংশ অতিরিক্ত খরচ করতে হবে, যার পরিমাণ দাঁড়াবে প্রতি বছর ৬ হাজার ৬০০ কোটি ডলার। অপর দিকে ব্রিটেন সরকারকে খরচ খরতে হবে অতিরিক্ত ২০০ কোটি ডলার যা স্বাস্থ্যখাতের বরাদ্দের অতিরিক্ত ২ শতাংশ।

এদিকে এশিয়ার চীন ও জাপানও রয়েছে একই ধরনের ঝুঁকির মধ্যে। এই দু দেশে প্রতি ২০ জনে একজন নারী স্থূলকায়। নেদারল্যান্ডে ১০ জনে একজন, অস্ট্রেলিয়াতে ৪ জনে একজন এবং টোংগাতে প্রতি ১০ জনে ৭ জন নারীই স্থূলস্বাস্থ্যের অধিকারী।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাব মতে, সারা বিশ্বে দেড়শ কোটি প‍ূর্ণবয়স্ক লোক অতিরিক্ত ওজন ও ৫০ কোটি লোক স্থূলকায় স্বাস্থ্যের অধিকারী। শিশুদের মধ্যে ১৭ কোটি মাত্রাতিরিক্ত ওজন অথবা স্থুলতার সমস্যায় ভুগছে। অনেক দেশেই স্থূলতার পেছনে স্বাস্থ্য সুরক্ষাখাতে বরাদ্দের ২ থেকে ৬ শতাংশ অর্থ ব্যয় হয়।

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চিপস, উপাদেয় খাবার, অতিরিক্ত ক্যালরিযুক্ত খাবার, খাদ্য সরবরাহ ও বাজারজাতকরণে অভিনবত্ব এবং অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি মানুষের ভোগপ্রবণতা বাড়িয়ে দিচ্ছে। আর এ কারণেই স্থুলতা এখন প্রায় মহামারী আকার ধারণ করছে।

হার্ভার্ড স্কুল অব পাবলিক হেলথের অধ্যাপক স্টিভেন গর্টমেকার ওই চারটির একটি নিবন্ধে এই স্থুলতার সমস্যা মোকাবিলায় কিছু পরামর্শ তুলে ধরেছেন। তিনি লিখেছেন, স্থূলতা মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়ার আগেই সরকারগুলোকে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে হবে। এই ব্যবস্থার মধ্যে অস্বাস্থ্যকর (বিশেষ করে চিনিযুক্ত খাবার) খাবার ও পানীয়র ওপর কর বাড়ানো এবং শিশুদের জন্য খাবার ও পানীয়ের বিজ্ঞাপনে বিধিনিষেধ আরোপ করার সুপারিশ করেছেন তিনি।

বাংলাদেশ সময় ১৯০৪ ঘণ্টা, আগস্ট ২৯, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।