ঢাকা, রবিবার, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ১৮ মে ২০২৫, ২০ জিলকদ ১৪৪৬

ফিচার

ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্নে মেসি ফাউন্ডেশন

শেরিফ আল সায়ার | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮:৪৫, সেপ্টেম্বর ৫, ২০১১
ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্নে মেসি ফাউন্ডেশন

বাংলাদেশে পা রাখলো ম্যারাডোনার আর্জেন্টিনা। এখন আর ম্যারাডোনার আর্জেন্টিনা বলে কিছু নেই।

কারণ ম্যারাডোনার জনপ্রিয়তাকে ছাপিয়ে ‘লিওনেল মেসি’ জয়গানে মুখোরিত বাংলাদেশের ফুটবল ভক্তরা।

৫ সেপ্টেম্বর সকাল ১১টায় ঢাকায় পা রাখতেই হাজার হাজার সমর্থক বরণ করে নিয়েছে মেসি ও আর্জেন্টিনাকে।

মেসি আসছে বাংলাদেশে। তাই মেসিকে নিয়ে নানা অজানা গল্প উঠে আসছে। এ গল্পগুলো নিয়ে আলোচনাও হচ্ছে তুমুল। তবে অধিকাংশ আলোচনাতেই থাকছে মেসির পায়ের যাদুশৈলীর কথা।

এতো কিছুর মাঝে আঁড়ালে পড়ে গেছে মেসির মহৎ কিছু উদ্যোগ। ২০১০ সালের ১১ মার্চ থেকে মেসি ইউনিসেফের শান্তিদূত হিসেবে কাজ শুরু করেছেন। এ প্রসঙ্গে মেসি বলেন, জনপ্রিয় হয়ে যাওয়ার সবচে বড় সুবিধা হলো মানুষের জন্য সহজে কিছু করা যায়। আমি অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর সুযোগটি হাতছাড়া করেনি।

এরই মধ্যে মেসি প্রতিষ্ঠা করেছেন সেবামূলক প্রতিষ্ঠান ‘লিও মেসি ফাউন্ডেশন’। এ ফাউন্ডেশনের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান হিসেবে ২০০৭ সালে মেসি গড়ে তোলেন শিশুতোষ আরেক সেবাধর্মী প্রতিষ্ঠান। এখানে অসহায় শিশুদের শিক্ষা ও স্বাস্থ্য বিষয়ে সহযোগিতা করা হয়।

তবে হুট করে নিশ্চয়ই মেসি এটি গড়ে তোলেননি। এ ফাউন্ডেশন গড়ে তোলার পেছনেও একটি গল্প আছে। মেসি খুব ছোট থাকতে হরমনজনিত রোগে আক্রান্ত হন। তখন ব্যয়বহুল চিকিৎসার খরচ তার বাবার পক্ষে চালানো সম্ভব হয়নি। তাই শর্ত সাপেক্ষে মেসিকে বিক্রি করে দেন বার্সিলোনার কাছে। এ গল্প এখন সবারই জানা।

সেই যে ছোটবেলার অনুভূতি। তা কি মেসি ভুলতে পারেন? অর্থের অভাবে যখন অসুস্থ কোনো শিশুর চিকিৎসা বন্ধ হয়ে যায়। তখন সে শিশুটির সবকিছুই রঙহীন হয়ে পড়ে। নির্মম এ অনুভূতির সঙ্গে মেসির পরিচয় আছে। তাই জনপ্রিয়তার তুঙ্গে গিয়েও মেসি কাজ করছেন অসহায় শিশুদের জন্যই।

এ প্রসঙ্গে মেসি বলেন, একবার অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে গেলাম। হাসপাতালে প্রবেশের সঙ্গেই অবাক হয়ে দেখলাম সেখানকার সব শিশুরা আমাকে দেখে হাসছে। অথচ তারা প্রত্যেকে অসুস্থ। কিন্তু আমাকে দেখে তাদের অসুস্থ শরীরের কথা ভুলে গেছে। আমি তখন খুব গভীরভাগে লক্ষ্য করলাম তাদের চোখে স্বপ্ন ভেসে উঠছে। একজন জনপ্রিয় ব্যক্তিকে কাছে পেয়ে তাদের ভেতরে লড়াইয়ের শক্তি তৈরি হচ্ছে। আমি সত্যিই এমনটি অনুভব করছিলাম।

স্বপ্ন ছিল একদিন আমি বিশ্বসেরা ফুটবলার হবো। অসুস্থ হয়েও সে স্বপ্ন পেতে আমাকে যুদ্ধ করে যেতে হয়েছে। এখনও আমি যুদ্ধ করছি। কঠোর পরিশ্রম এবং চেষ্টা একটি মানুষকে যুদ্ধে জয়ী হতে শেখায়। আমার এ ভাবনাটাকেই আমি ভাগাভাগি করে নিতে চেয়েছি অন্যসব শিশুদের সঙ্গে। এ ভাবনা থেকেই ‘লিও মেসি ফাউন্ডেশনের’ সৃষ্টি।

যাদের কাছে এক টুকরো হাসি জীবনের চাওয়া। সেসব অসহায় দরিদ্র শিশুদের পাশে গিয়ে দাঁড়ানোটাই আমার কাছে মহা আনন্দের মনে হয়। আপনি চিন্তা করে দেখুন, একটি শিশু কখন হাসে? একটি শিশু তখনই হাসে যখন সে আশার আলো দেখতে পায়। বেঁচে থাকার, সুস্থ হওয়ার স্বপ্ন দেখতে পায়। আশা-ভরসা এসব অনুভূতি তাকে স্বপ্ন দেখতে শেখায়। আমি সেসব শিশুদের আশা দেখাতে চাই। তাদের মুখের হাসি আমাকে পাগল করে দেয়। মনে হয়, পৃথিবীর সব শান্তি ওই হাসিতেই।

মেসির ‘লিও ফাউন্ডেশন’ দরিদ্র শিশুদের সুস্থ থাকার জন্য সচেতনতা গড়ে তোলে। অসুস্থ শিশুদের আর্থিক সহযোগিতা ও চিকিৎসা প্রদান করে। সঙ্গে ডাক্তারদের শিশুদের ক্যান্সার বিষয়ে দক্ষ করার লক্ষ্যে বৃত্তি দিয়ে পড়াশোনার সুযোগ তৈরি করে দেয়।

যেসব স্থানে স্কুল নেই, সেখানে স্কুল নির্মাণে কাজ করে। ঝুঁকিতে থাকা শিশুদের সহযোগিতা করতেও কাজ করে এ ফাউন্ডেশন। পঙ্গু ও মানসিকভাবে দূর্বল শিশুদের জন্য খেলার মাঠ তৈরি করে। ব্যবস্থা করে খেলার। খেলাধুলার মাধ্যমে শিক্ষার ব্যবস্থাও করে লিও ফাউন্ডেশন।

এ ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে অসংখ্য শিশুদের মাঝে হাসি ফোটান লিওনেল মেসি। মেসি প্রমাণ করে দিলেন, বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয়তার শীর্ষে পৌঁছেও মেসি তার অতীত ভুলে যাননি।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৪৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৫, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।