ঢাকা, রবিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ফিচার

ধামরাইয়ে হাঁস পালনে সফল হাবিবুল্লাহ

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১৫২ ঘণ্টা, মে ৩, ২০১৭
ধামরাইয়ে হাঁস পালনে সফল হাবিবুল্লাহ হাঁস পালনে সফল হাবিবুল্লাহ

ধামরাই: কওমি মাদ্রাসায় দাওরা হাদিস লেখাপড়া করার পর দীর্ঘদিন বেকার ছিলেন মো. হাবিবুল্লাহ। বেকারত্বের অভিশাপ দূর করতে নয় মাস আগে ইন্টারনেটে একটি প্রতিবেদন দেখে সিদ্ধান্ত নেন হাঁস পালনের।

কিন্তু হাঁসের খামার করতে তো জমি দরকার; তাদের তো জমি নেই! ছেলের পরিকল্পনা শুনে তার বাবা সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন। এককালীন ১২ হাজার টাকায় একই এলাকার আব্দুর রহিম নামে এক ব্যক্তির কাছ থেকে ৩০ শতাংশ জমি ও ১০ শতাংশ জমির ওপর কাটা একটি পুকুর এক বছরের জন্য ছেলেকে লিজ নিয়ে দেন তিনি।

 

১২ হাজারের মধ্যে জমির ভাড়া বাবদ বছরে পাঁচ হাজার ও পুকুরের জন্য সাত হাজার টাকা। পরে স্থানীয় এক এনজিও থেকে ৫০ হাজার টাকা ঋণ নেন হাবিবুল্লাহ। ভাড়া জমিতে ঘর তৈরি করে দেশি, খাকি, কেম্বেল ও জেনডিং চার জাতের এক হাজার হাঁসের বাচ্চা ওঠান।
 
এর মধ্যে হাঁসা (পুরুষ) ৫৭৫টি এবং হাঁসি (মেয়ে) ৪২৫টি হওয়ায় আবার হতাশ হয়ে পড়েন তিনি। একে হাঁসির সংখ্যা কম, তার ওপর নিয়ম অনুযায়ী জন্মের পাঁচ মাস পর থেকে ডিম দেয়ার কথা থাকলেও হাঁসগুলো ডিম দিচ্ছিল না। এতে হতাশ হলেও হাল ছাড়েননি তিনি। হাঁসের জন্য খাবার প্রস্তুত করছেন হাবিবুল্লাহ

পরে নওগাঁর জুয়েল নামে এক হাঁসের খামারির পরামর্শ অনুযায়ী মিশ্র করে খাবার খাওয়াতে শুরু করেন। এর ১৫ দিন পর থেকে হাঁসগুলো ডিম দেয়া শুরু করে।

কিন্তু তাতেও একশ’ ভাগ সফল হননি হাবিবুল্লাহ। খোঁজ-খবর নিয়ে যান নওগাঁ আঞ্চলিক হাঁস প্রজনন কেন্দ্রে। সেখানে দায়িত্বে থাকা আব্দুল হামিদের পরামর্শ অনুযায়ী গম, চাল, তেলের খৈল, সয়াবিনের খৈল, শুটকি মাছের গুড়া, লবণ, পানা, ভিটামিন ও মিনারেল মিশিয়ে খাওয়াতে শুরু করেন। এরপর আর ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে, শতভাগ সফলতা পেয়েছেন।  

হাবিবুল্লাহ বাংলানিউজকে বলেন, বর্তমানে আমার খামারে ৪২৫টি হাঁসি রয়েছে। এর মধ্যে প্রতিদিন প্রায় ৪০০টি ডিম দেয়। এতে প্রতি মাসে আয় হয় ৯০-৯৫ হাজার টাকা। আর মোট ব্যয় হয় ৪৫-৪৭ হাজার টাকা। মাসে ৪৫-৫০ হাজার টাকা লাভ থাকে। প্রতিটি হাঁস বছরে ২৮০-৩০০টি ডিম দেয়। পানিতে হাঁসের বিচরণসরকারের প্রতি সব উপজেলায় হাঁস-মুরগি পালন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র করার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, মুরগির চেয়ে হাঁসের খাদ্যের দাম কম, রোগ বালাইও তুলনামূলক কম। প্রতিমাসে মুরগিকে রোগ দমনের ভ্যাক্সিন দিতে হয়। কিন্তু হাঁসকে দিতে হয় চার মাসে একবার। তাই মুরগির চেয়ে হাঁস পালনে লাভ বেশি। তার সাফল্য দেখে এলাকার বেকার যুবকরা হাঁস পালনে ঝুঁকছেন।  

উপযুক্ত প্রশিক্ষণ ও সহজ শর্তে ঋণ পেলে বেকার সমস্যা অনেকটা সমাধান হবে বলে মনে করেন হাবিবুল্লাহ।

ধামরাই উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. সাইদুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, হাবিবুল্লাহ নামে একজন হাঁস পালন করছেন জানতে পেরে আমরা তার খামার পরিদর্শন করি। হাঁসের ভ্যাক্সিন দেয়ার নিয়মসহ বিভিন্ন পরামর্শ তাকে দিয়েছি। এছাড়া কোনো অসুবিধা হলে আমাদের উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তারা সমাধান করছেন।

বাংলাদেশ সময়: ০৭৫২ ঘণ্টা, মে ০৩, ২০১৭
আরবি/এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।