তার স্বপ্ন এখন বাস্তবে রূপ পেতে চলেছে, ছেলে মনিরুজ্জামান রাজু ৩৫তম বিসিএসে উত্তীর্ণ হয়েছেন। এখন বুঝি অবসরের সময় এসেছে তার।
শনিবার (০৭ মে) দিনগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে ধানমন্ডি জিগাতলা এলাকায় কথা হয় স্বপ্নবাজ এ রিকশাচালক বাবার সঙ্গে। রাতের ঢাকা দেখার জন্য জিগাতলা থেকে রিকশায় উঠে নেমেছিলাম ধানমন্ডি ছয় নম্বর রোডে।
রিকশা থেকে নামার পর হাস্যোজ্জ্বল মুখে তাকিয়ে বলে, বাবা হামারে (আমারে) আর বেশিদিন রিকশা চালাতে হবে না। তোমগোর মতো ছেলে আমার বিরাট বড় শিক্ষিত হইছে, বড় অফিসার হয়েছে সরকারের।
তার একথা শুনে গল্পটি জানার আগ্রহ জাগে।
নান্দু সরকার জানান, তার বাড়ি গাইবান্ধা জেলার সাদুল্লাপুর উপজেলার মহেশপুর গ্রামে। শহরের মগ বাজারের একটি মেসে থাকেন। প্রতিদিন মেসে থাকা ও খাওয়া খরচ ছাড়াও রিকশার মালিককে দিতে হয় ১শ টাকা। সব খরচ বাদে দৈনিক আয় হয় তিন থেকে ৪শ টাকা। এ দিয়েই চলে ছেলের পড়াশোনার খরচ।
‘ছেলেকে কোনো অভাব বুঝতে দেননি। যখন ছেলে যা চেয়েছে তাই দিয়েছি। নিজে অমানুষিক কষ্ট করেছি। ’
নিজে এক ক্লাসও পড়তে পারেননি। তাই ছেলেকে অনেক বড় শিক্ষিত বানানোর স্বপ্ন তার অনেক আগে থেকেই। অনেক কষ্ট হয় সারাদিন রিকশা চালাতে, কিন্তু যখন শোনেন ছেলে ভালো ফল করছে তখন আনন্দে বুক ভরে যায়, জানান তিনি।
ছেলে মনিরুল ইসলাম রাজু স্থানীয় মোরংবাজার উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি ও আজগর আলী কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। রংপুর ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক কলেজে ভর্তি হয়েও পড়তে পারেনি। ৫ম শ্রেণি ও অষ্টম শ্রেণিতে বৃত্তি, এসএসসিতে জিপিএ-৫ এবং এইচএসসিতেও পান গোল্ডেন জিপিএ-৫।
নিজের প্রচেষ্টাতে ভর্তি হন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বোটানি বিভাগে। সেখানে ১ম বিভাগ নিয়ে শেষ করেন স্নাতক ও স্নাতকোত্তর। বিসিএস পরীক্ষা দিয়ে এখন পুলিশের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা।
নান্দু সরকার বাংলানিউজকে বলেন, হামার (আমার) দায়িত্ব ছিলো ছেলেরে শিক্ষিত করার, করেছি। তার বিনিময়ে ছেলের কাছে কিছু চাইবো না। চাওয়া একটাই, ছেলে বুক ফুলিয়ে এ সমাজে বেঁচে থাকুক।
আরও জানান, এখনও রিকশা চালাই, বাড়িতে ছেলের মা আছে। ছেলেকে পড়াশুনা করাতে গিয়ে বেশি সম্পত্তি করতে না পারলেও বাড়ির জায়গা আর ফসলি জমিতো আছেই। তা দিয়েই চলে যাবে।
ছেলে এখন বলেন, বাবা তোমাকে আর রিকশা চালাতে হবে না। তুমি এখন সুখ করবে। ছেলের কথা অনুযায়ী বাবাও সিদ্বান্ত নিয়েছেন আর রিকশা চালাবেন না।
তবুও এখনও কেন রিকশা চালাচ্ছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ছেলে নতুন চাকরি পাইছে, ক’টা দিন যাক। তারপর ছেড়ে দিব।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৩৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৭, ২০১৭
এসএইচডি/এসএনএস