ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ফিচার

প্রতিবন্ধকতা ডিঙিয়ে আকাশ ছুঁতে চান সালমা

জাহিদুর রহমান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩৫৯ ঘণ্টা, মে ২৪, ২০১৭
প্রতিবন্ধকতা ডিঙিয়ে আকাশ ছুঁতে চান সালমা আকাশ ছুঁতে চান সালমা

ঢাকা: নিজের দৈহিক উচ্চতার চাইতে লাখো গুণ বেশি উচ্চতা তার স্বপ্নের। সেটা আকাশ ছোঁয়ার।

আজন্মই সমাজের বঞ্চনা, অবহেলা আর লাঞ্ছনা থেকে সাহসকুড়োনি মেয়েটিই সালমা আক্তার (২২)। উচ্চতা মাত্র তিন ফুট হলে কী হবে! সমাজের অবহেলাকে বুড়ো আঙ‍ুল দেখিয়ে আলোর পথে এগিয়ে যাচ্ছেন তিনি।

বিএ (ডিগ্রি) পড়ছেন সাভার কলেজে। অর্থনীতি নিয়ে ফাইনাল ইয়ারে।

খর্বাকৃতির হলেও স্বপ্নটা তার আকাশ ছোঁয়ার। জীবদ্দশায় এমন কিছু করে যেতে চান, যেনো মানুষ তাকে মনে রাখে। কর্মের মধ্যেই অনেকের কাছে স্মরণীয় হয়েই থাকতে চান তিনি।

লেখাপড়া শেষ করে নিজের মতো শারীরিক প্রতিবন্ধীদের কল্যাণ ও জীবনমান উন্নয়নে কাজ করতে চান সালমা।

সাভারের বিরুলিয়া ইউনিয়নের বাগ্মীবাড়ী গ্রামের মোহাম্মদ আলীর মেয়ে সালমা। পাঁচ বোন ও দুই ভাইয়ের সংসারে সবার ছোট সালমা। বাবা স্থানীয় একটি মসজিদে ইমামতির কাজ করেন।

পরিবারের সবার ছোট হলেও দৃশ্যত যেনো ছোটই রয়ে গেছেন সালমা। সবাই স্বাভাবিকভাবে বেড়ে উঠলেও প্রকৃতি তার বেলাতেই যেনো কৃপণ।

আকাশ ছুঁতে চান সালমা

জন্মের পর থেকেই দেখছেন সমাজের অবহেলা আর বঞ্চনা। খর্বাকৃতি বলে সবাই ক্ষেপাতো, তাচ্ছিল্য করতো। এসবে হতাশা ভর করে নিজেকে আরও খাটো করে দিতো।

তবে একটা সময় পড়াশোনার মধ্যেই জীবনের মানে খুঁজলেন সালমা। দিন যায়, বয়স বাড়ে। পাল্লা দিয়ে বাড়ে তার জ্ঞান লাভের আগ্রহ।

স্থানীয় কালিয়াকৈর দারুল মোকাররম আলীম মাদ্রাসা থেকে আলিম পাশ করে ভর্তি হলেন সাভার কলেজে। তবে সমাজের বঞ্চনা আর অবজ্ঞা পিছু ছাড়েনি এতোটুকুও।

“ঘর থেকে কলেজে যাওয়ার উদ্দেশে বের হলে আমাকে নিয়ে পাড়ায় হাসাহাসি করে। যেনো আমি জোকার! বলে, ‘ওই দ্যাখ ‘বাউনটা’ ( বামন) পড়তে যায়! কেমনে হাঁইট্যা যায়’। রিকশায় উঠতে গেলে টিটকারি দিতেও পিছ পা হয় না রিকশা চালকদের অনেকে। বলে, ‘এতো পিচ্চি মাইয়া একা রিকশায় উঠবা কেমনে’!”

বলেই হাসাহাসি করে। আগে খুবই কষ্ট পেতাম। সহ্য করতে করতে এখন গা সওয়া হয়ে গেছে এসব পরিস্থিতি। বরং এমন তাচ্ছিল্য থেকেই প্রেরণা খুঁজি। নিজেকে বলি, সালমা তোমাকে বহু দূর যেতে হবে, চলাফেরায় নিত্যকার অভিজ্ঞতা নিয়ে বাংলানিউজকে এমনটিই বলছিলেন সালমা।

বলে চলেন, তবে প্রশান্তি খুঁজে পাই কলেজে গিয়ে। সেখানে টিচার থেকে কলেজের সহপাঠী, সিনিয়র-জুনিয়র— সবাই আমাকে সম্মান করেন। বেঁচে থাকার মানে খুঁজে পাই এখানে।

খর্বাকৃতি হওয়ার যতোটা, এর চেয়ে সালমার বেশি কষ্ট এলাকার কথিত প্রভাবশালীদের অত্যাচার নিয়ে। জোর-জবরদস্তি করে হুমকি-ধামকি দিয়ে তার পরিবারের নয় শতাংশ জমি দখল করে রয়েছেন এলাকার এক সন্ত্রাসী। বাড়ির নারকেল গাছ কেটে জমি দখল করে জোর করে সেখানে বাউন্ডারি নির্মাণ করলেও প্রতিকার যেনো নেই কারও কাছে।

‘বেঁটে’ বলে কেউ শোনে না তার অভিযোগ। পাত্তাই দিতে চায় না এই বঞ্চনাকে, আক্ষেপ সালমার।

ভবিষ্যতে প্রতিবন্ধীদের কল্যাণেই কাজ করতে চান সালমা। পড়াশোনার পাশাপাশি রাজফুলবাড়িয়া এলাকায় শাপলা প্রতিবন্ধী সংগঠনে স্বেচ্ছাসেবী হিসেবেও কাজ করছেন তিনি।

আকাশ ছুঁতে চান সালমা

দরিদ্র পরিবার থেকে উঠে আসা সালমা প্রতিকূলতা জয় করে আরও এগিয়ে যেতে চান।

তার অসীম কৃতজ্ঞতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার কন্যা প্রখ্যাত অটিজম বিশেষজ্ঞ সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের প্রতি। ‘ইশ! তাদের মতো সবাই যদি মানবিক গুণাবলী সম্পন্ন হতো। আমাদের প্রতি সামান্য সংবেদনশীল হতো, তবে কতোই না সুন্দর হতো আমাদের পৃথিবী’।

তাই তারাই আমার আদর্শ। বলতে পারেন, বেঁচে থাকার প্রেরণা— এভাবেই নিজের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন সালমা।

বর্তমানে মাসে সরকারি প্রতিবন্ধী ভাতা ছয়'শ টাকা দিয়েই চলে সালমার পড়াশোনার খরচ।

সামাজিক মাধ্যমেও সক্রিয় সালমা। নিজেকে তুলে ধরতে চান পৃথিবীর কাছে। আপনিও সালমাকে এগিয়ে নিতে সাহায্য করতে পারেন। সরাসরি যোগাযোগ করতে পারেন +8801747475719 নম্বরে। বা আপনার আইডিয়া নিয়ে যুক্ত হতে পারেন সালমার সঙ্গে ফেসবুকে https://www.facebook.com/profile.php?id=100009887744920।  

সালমার বিশ্বাস, কোনো প্রতিবন্ধকতাই আর থামিয়ে রাখতে পারবে না। তাকে আকাশ ছোঁয়ার স্বপ্ন যে তাড়া করে বেড়ায় সারাক্ষণ।

বাংলাদেশ সময়: ১০০৩ ঘণ্টা, মে ২৪, ২০১৭
এসএনএস
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।