ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ফিচার

বিচ্ছেদ ঠেকাতে ‘বৈবাহিক কারাগার’

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১১৫ ঘণ্টা, জুলাই ২২, ২০১৭
বিচ্ছেদ ঠেকাতে ‘বৈবাহিক কারাগার’ বৈবাহিক কারাগার

ঢাকা: এই একুশ শতকের যুগেও গ্রামটির প্রধান বাহন ঘোড়ার গাড়ি। কৃষিপণ্য বাণিজ্য এবং ঘোড়ার গাড়ির মাধ্যমেই এখনও বাসিন্দারা জীবিকা নির্বাহ করে। আর এই গ্রামটিই এর ‘বৈবাহিক কারাগার’র জন্য বিখ্যাত হয়েছে বিশ্বদরবারে। ইউনেস্কোর বিশ্ব সপ্তাচর্যের তালিকায়ও রয়েছে বৈবাহিক কারাগার।

গ্রামের নাম ট্রান্সলেভনিয়া, ভৌগলিক অবস্থান রোমানিয়ার কেন্দ্রীয় অংশে। এ গ্রামের ঘরগুলো ঘেঁষেই মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে রয়েছে পনেরশো শতাব্দীতে তৈরি একটি গির্জা।

এই গির্জাতেই আটকে রাখা হতো নব বিবাহিত দম্পতিদের। যেনো পরবর্তীতে বিয়ে বিচ্ছেদের ঘটনা না ঘটে। এ জন্যই গির্জাটি ‘বৈবাহিক কারাগার’ নামে পরিচিত।

গির্জার ভেতরে, একদম ভিত্তিস্থলের দেয়াল ঘেঁষে রয়েছে ছোট্ট একটি ঘর। যা আদতে একটি ছোট রান্নাঘরের সমান। আর এই ঘরটিতেই নব বিবাহিত দম্পতিদের আটকে রাখা হতো কমপক্ষে ছয় সপ্তাহের জন্য। এবং আশা করা হতো, এই সময়ের মধ্যে তারা তাদের সমস্যাগুলোকে চিহ্নিত করতে পারবে, যা তাদের বিয়ে বিচ্ছেদ থেকে দূরে রাখবে এবং দাম্পত্য জীবনকে করে তুলবে আরও সুখের।
বৈবাহিক কারাগার‘বৈবাহিক কারাগার’ একটু দুঃস্বপ্নের মতো শোনালেও এটি বেশ কার্যকর ছিলো। ৩শ বছরের মধ্যে কারাগারে অবস্থান করা দম্পতিদের ভেতর বিয়ে বিচ্ছেদ হয়েছে মাত্র একটি। এজন্য স্থানীয় জনগণসহ গির্জার বর্তমান পুরোহিত একে ‘সুখী ভবন’ বলে আখ্যা দিয়ে এর প্রতি ধন্যবাদ জানান।

বর্তমানে এই ছোট এবং অন্ধকার কারাগারটি শুধু দু’টি পুতুলসহ টিকে রয়েছে একটি জাদুঘর হয়ে। অল্প উচ্চতা এবং পুরু দেয়ালের কক্ষটিতে রয়েছে একটি টেবিল ও চেয়ার, একটি ছোট্ট বাক্স এবং একটি বিছানা। সব মিলিয়ে এটি ছোট্ট একটি শিশুর ঘর বৈ কিছু নয়।

দম্পতিরা এইটুকু জায়গার মধ্যেই তাদের নতুন সংসার সাজিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করতো। মাত্র একটি বালিশ, একটি কম্বল এবং চেয়ার-টেবিলও দু’জনকে ভাগ করে ব্যবহার করতে হতো। সেসময় ধর্মীয় রীতিনীতির মাধ্যমে সমাজ পরিচালিত হতো বলেই এই ব্যবস্থা ছিলো মনে করা হয়।
বৈবাহিক কারাগারধারণা করা হয়, সেসময়ে ব্যভিচারের পরিমাণ অত্যন্ত বেড়ে গেলে নারী ও শিশুকে সুরক্ষিত করার উদ্দেশ্য থেকেও কারাগারটি ব্যবহার করা হতো।  

আরও নিয়ম ছিলো, যদি বিয়ে বিচ্ছেদ ঘটে তবে স্বামী প্রাক্তন স্ত্রীকে তার আয়ের অর্ধেক দেবে। তবে স্বামী যদি পুনরায় বিয়ে করে এবং দ্বিতীয় স্ত্রীকেও তালাক দেয়, তবে তাকে কিছুই দিতে হবে না।

ইতিহাসের পাতা উল্টে দেখা যায়, ১২শ শতাব্দীতে ট্রান্সলেভনিয়ার বাসিন্দাদের ফ্রান্স, বেলজিয়াম, লুক্সেমবার্গ ও জার্মান প্রভৃতি দেশের আক্রমণের হাত থেকে বাঁচানোর উদ্দেশ্যে স্যাক্সোন নামে একটি অঞ্চল গড়ে ওঠে। এরপর ধীরে ধীরে অঞ্চলটি অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হয়। ১৫১০ খ্রিস্টাব্দে এর জনসংখ্যা দাড়ায় পাঁচ হাজারে। এর ফলে ধীরে ধীরে শহরটি একটি গুরুত্বপূর্ণ শহর এবং সাংস্কৃতিক কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত হয়। সেসময়ই গড়ে ওঠে গির্জাটি।
বৈবাহিক কারাগারগির্জার নয়টি পার্শ্ববর্তী দূর্গ এবং রাতে টাওয়ারগুলোতে জ্বলে ওঠে মনকাড়া বর্ণিল আলো। এটি প্রথম দিকে স্যাক্সনবাসীর নিরাপত্তা এবং পূজার একটি কেন্দ্রীয় জায়গা হিসেবে বিবেচিত হতো। গির্জাটি প্রায় ১১ মিটার উঁচু।  

এছাড়া কৃষিকাজকে ভিত্তি করে গির্জার আশেপাশে গড়ে ওঠে গ্রাম। আর এখানেই জীবনের বাকি দিনগুলো দম্পতিরা পার করতেন একসঙ্গে। কারা প্রকোষ্ঠে থাকার ফলে পারস্পরিক প্রেমবোধ ছাড়াও পরবর্তীতে একসঙ্গে পথ চলা এবং কাজ করার ক্ষেত্রে সহনশীলতা ও শিক্ষা অর্জন করতেন তারা।  

যা বর্তমান সময়েও খুব উপযোগী বলে মনে করেন গির্জার বর্তমান পরিচালক।  

কারণ, আমাদের জন্য কী গুরুত্বপূর্ণ এবং আমরা আমাদের সঙ্গে কী সংযুক্ত করতে পারি তা খুঁজে বের করতে হয় আমাদেরই, বলেন তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ০৬১৫ ঘণ্টা, জুলাই ১৫, ২০১৭
এসএনএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।