ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ফিচার

বরেন্দ্র জাদুঘরে নষ্ট হচ্ছে অমূল্য প্রত্নসম্পদ

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৫০৯ ঘণ্টা, আগস্ট ২৩, ২০১৭
বরেন্দ্র জাদুঘরে নষ্ট হচ্ছে অমূল্য প্রত্নসম্পদ বরেন্দ্র জাদুঘরের বারান্দায় অরক্ষিত প্রত্নসম্পদ। ছবি: নুর আলম হিমেল

রাজশাহীর বরেন্দ্র জাদুঘর ঘুরে: বাংলাদেশের সব চেয়ে প্রাচীন প্রত্নসম্পদ সংগ্রহশালা রাজশাহীর বরেন্দ্র জাদুঘরে জায়গার অভাবে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে অমূল্য প্রত্নসম্পদ।

রাজশাহী শহরে অবস্থিত বরেন্দ্র জাদুঘর ঘুরে দেখা যায়, জাদুঘরের মাঝখানের উন্মুক্ত জায়গা ও বারান্দায় শত শত বছরের বিভিন্ন প্রস্তর মূর্তি, শিবলিঙ্গ ও অমূল্য প্রত্নসম্পদ রাখা হয়েছে। সেগুলো পানিতে ভিজে, রোদে পুড়ে ও ধুলার আস্তরণ পড়ে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

যে কোন সময়ে এসব অমূল্য প্রত্নসম্পদ চুরি হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।  

এছাড়া শত শত বছরের পুস্তিকা গবেষণার অভাবে বস্তাবন্দি করে রাখা হয়েছে বলে জানান বরেন্দ্র জাদুঘরের এক কর্মকর্তা। একই সঙ্গে তিনি এসব পুস্তিকার পাঠ উদ্ধার ও আমল ভাগ করার জোর দাবি জানান।

বরেন্দ্র জাদুঘরের খোলা চত্বরে অরক্ষিত প্রত্নসম্পদ।  ছবি: নুর আলম হিমেলবাংলাদেশের সব চেয়ে প্রাচীন ও প্রথম প্রত্নতাত্ত্বিক এই জাদুঘর বাংলার ব-দ্বীপ অঞ্চলের প্রত্নতাত্ত্বিক কোষাগার হিসেবে পরিচিত। পাল ও সেন আমলের প্রতিমা ভাস্কর্যের জন্য জাদুঘরটির খ্যাতি সারা বিশ্বে। খ্রিস্টপূর্ব ২৫০০ অব্দ থেকে ১৯০০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত সময়কালের বহুবিধ প্রত্ননিদর্শন এ জাদুঘরে সংগৃহিত রয়েছে। প্রত্ন নিদর্শনগুলো প্রধানত প্রস্তর, স্বর্ণ, রৌপ্য, তাম্র, পিতল, ব্রোঞ্জ, লৌহ, কাষ্ঠ, মৃন্ময় ইত্যাদি দ্বারা নির্মিত।

জাদুঘরে মৌর্য, গুপ্ত, পাল, সেন, সুলতানি ও মুঘল আমলের অমূল্য সব প্রত্ন নিদর্শন রয়েছে। এগুলোর মধ্যে কিছু কিনে আনা হয়েছে, আবার অনেকে স্বেচ্ছায় দান করেছেন। ১৪টি গ্যালারিতে এগুলো সাজিয়ে রাখা হয়েছে। এখানে মহাস্থানগড়, পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহার, ময়নামতির অনেক অমূল্য প্রত্নসম্পদ সংগৃহীত রয়েছে।

জাদুঘরের বৌদ্ধ গ্যালারিতে পঞ্চম শতাব্দীর একটি বেলে পাথরের মূর্তি রয়েছে। এ ধরনের মূর্তি বাংলাদেশ চারটি রয়েছে। তার মধ্যে বরেন্দ্র জাদুঘরে দুটি। বাকি দু’টির একটি কুমিল্লা জাদুঘর ও অপরটি চট্টগ্রাম জাদুঘরে রয়েছে। এখানে ৩য় ও ৫ম শতাব্দীর হিন্দু দেব-দেবীর মূর্তি রয়েছে।

বরেন্দ্র জাদুঘরের বারান্দায় অরক্ষিত প্রত্নসম্পদ।  ছবি: নুর আলম হিমেলজাদুঘরে বিভিন্ন যুগের প্রায় ৬ হাজার মুদ্রা রয়েছে। স্বর্ণমুদ্রা রয়েছে ৩৮টি। মুদ্রাগুলোর মধ্যে সব চেয়ে প্রাচীন স্বর্ণমুদ্রাটি মৌর্য আমলের।  

জাদুঘরের অন্যতম আকষর্ণীয় এক প্রত্নবস্তু হল চার হাজার রছর আগের মঞ্জুরী স্বর্ণ মূর্তি। যা নিরাপত্তার কারণে জাদুঘরের অভ্যন্তরে গোপন জায়গায় রাখা হয়েছে।

জাদুঘরের গ্রন্থাগারে দুষ্পাপ্য গ্রন্থ, জার্নাল ও সাময়িকী রয়েছে। ১৯১০ সালে জাদুঘরটি প্রতিষ্ঠিত হওয়ার সময় অক্ষয় কুমার মৈত্রের নেতৃত্বে বাংলাদেশের ইতিহাসকে ৮ খণ্ডে লেখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তারমধ্যে দুটি খণ্ড বের করতে পারেন তারা। একটি  হল গৌড় রাজমালা, আরেকটি গৌড় লেখমালা। এ দুটি গ্রন্থের মূল কপি জাদুঘরের গ্রন্থাগারে রাখা আছে।  

বরেন্দ্র জাদুঘরের বারান্দায় অরক্ষিত প্রত্নসম্পদ।  ছবি: নুর আলম হিমেলজাদুঘরে হাতে লেখা ৬ হাজার পুঁথি রয়েছে। তার মধ্যে বৌদ্ধ ধর্মের অষ্টম শতাব্দীর অমূল্য পুঁথি/গ্রন্থ প্রজ্ঞা পারমিতার মূল কপি রয়েছে এখানে- যা উপমহাদেশে আর কোথাও নেই। তাই কলকাতা. দিল্লি, চীন, জাপান থেকে শত শত লোক এই গ্রন্থটি দেখতে আসে। কারণ এটি অষ্টম শতাব্দীর হাতে লেখা। এতে রঙিন ছবি সংযুক্ত রয়েছে। যা অতুলনীয়। ভারত সরকারের সহযোগিতায় জাদুঘরের তিন তলায় ৬ হাজার পুঁথি রাখার ব্যবস্থা করা হচ্ছে বলে জানা গেছে।  

ইতিহাসের ছাত্র সাদ্দাম হোসেন সাজিদ বাংলানিউজকে বলেন, প্রত্নসম্পদ রাখার জায়গা নেই! জায়গায় অভাবে শত শত বছরের এ সব অমূল্য প্রত্নসম্পদ নষ্ট হচ্ছে ভাবতেই অবাক লাগে। এ বিষয়ে প্রত্নতাত্ত্বিক অধিদপ্তরের আশু উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন। তাছাড়া গবেষণার মাধ্যমে বস্তাবন্দি পুঁথিগুলোর পাঠ উদ্ধার করা গেলে অনেক ইতিহাস সম্পর্কে অচেনা তথ্য আমরা জানতে পারবো।

বরেন্দ্র জাদুঘরের বারান্দায় অরক্ষিত প্রত্নসম্পদ।  ছবি: নুর আলম হিমেলবরেন্দ্র জাদুঘরের উপ-রেজিস্ট্রার সফিকুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন,  জাদুঘরের ভেতরে প্রত্নসম্পদ রাখার মতো পর্যাপ্ত জায়গা না থাকায় প্রত্নসম্পদগুলো জাদুঘরের বারান্দায় রাখা হয়েছে। এই উন্মুক্ত জায়গা থেকে যে কোনো সময় এসব মূল্যবান সম্পদ চুরি হয়ে যেতে পারে। জাদুঘরে তেমন নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেই। নেই প্রশিক্ষিত কর্মকর্তা-কর্মচারীও।

তিনি আরো বলেন,  যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত সরকারের সহযোগিতায় জাদুঘরের কিছুটা সংস্কার করা হলেও তা পর্যাপ্ত নয়। জাদুঘরের পাশে পর্যাপ্ত জায়গা আছে, কিন্তু বিল্ডিং নেই। এ বিষয়ে সরকার উদ্যোগী হলে এখানে রক্ষিত প্রত্নসম্পদ বিশ্বের দরবারে বাংলাদেশকে নতুন করে পরিচয় করাতে সক্ষম হবে।  

বাংলাদেশ সময়: ১১১০ ঘণ্টা, আগস্ট ২৩, ২০১৭
জেডএম/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।