পাতালে অবস্থিত জাদুঘরটির অন্যতম বৈশিষ্ট্য এর স্থাপত্যশৈলী। মাটির নিচে বিশাল এলাকাজুড়ে ফাঁকা জায়গা।
পুরো জায়গাজুড়েই সাজিয়ে রাখা মুঘল আমল থেকে মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ের ছবি। ১৪৪টি প্যানেলে বাঙালি ও বাংলাদেশি জাতিসত্তার স্বাধীনতার ইতিহাস আলোকচিত্রের মাধ্যমে উপস্থাপন করা হয়েছে এখানে। যা জানান দেবে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সম্পর্কে।
আলোকচিত্রের মধ্যে রয়েছে মুঘল আমল থেকে শুরু করে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত বিভিন্ন নিদর্শনের ছবি। রয়েছে ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর ভাষণ ও ১৬ ডিসেম্বরে পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণের বিশাল আকৃতির দু’টি ছবিসহ মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডারদের ছবিও।
পাকিস্তান সেনাবাহিনীর পূর্বাঞ্চলের কমান্ডার লে. জেনারেল আমীর আবদুল্লাহ খান নিয়াজী যে টেবিলের ওপর আত্মসমর্পণের দলিলে স্বাক্ষর করেছিলেন, আছে তার অনুকৃতি। বিভিন্ন বিদেশি পত্রিকায় বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে প্রকাশিত প্রতিবেদনের কপি, স্বাধীনতার স্বপক্ষে বহির্বিশ্বে প্রকাশিত বিভিন্ন প্রতিবেদন ও পুস্তিকার ছবিও ঠাঁই পেয়েছে এখানে। এসব আলোকচিত্রকে ৩টি অংশে বিভক্ত করেছে স্বাধীনতা জাদুঘর। প্রথম অংশে রয়েছে বাংলা ভাষার উৎপত্তি, বাংলার উৎপত্তি ও স্বাধীনতার জন্য বিভিন্ন সময়কার আন্দোলন। এটি শেষ হয়েছে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণের ছবি দিয়ে।
দ্বিতীয় অংশটি একটি অন্ধকার কুঠুরি। দু’পাশের কালো দেয়ালে টাঙানো একাত্তরের ভয়াবহ দিনগুলোর ছবি। এই কুঠুরির নাম দেওয়া হয়েছে ‘কালো অধ্যায়’। একাত্তরের ভয়াবহতা, নির্যাতন ও হত্যাযজ্ঞ তুলে ধরা হয়েছে এ অংশে।
তৃতীয় অংশটি লড়াই, সংগ্রাম ও বিজয়ের। প্রথম অংশের আদলে এখানে স্থান পেয়েছে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ, অপারেশন, আন্তর্জাতিক সাড়া ইত্যাদি। এটি শেষ হয়েছে বাঙালির বিজয় অর্জনের ছবির মধ্য দিয়ে। জাদুঘরের মাঝখানে রয়েছে একটি ফোয়ারা। এটি নেমে এসেছে মাটির উপরিভাগ থেকে। স্বাধীনতা যুদ্ধে লাখো শহীদের মায়ের অশ্রুকেই যেন নির্দেশ করে এটি। কর্তব্যরতরা জানালেন এটা ‘অশ্রুঝরা’। কারণ এটাকে তুলে ধরা হয়েছে গণহত্যার সময় নিহতদের পরিবারের চোখের জলের প্রতীকী হিসেবে।
রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যান পেরিয়ে কিছুটা পথ গেলে এক দৃঢ় আলোক স্তম্ভের আলো চোখে পড়ে সন্ধ্যা-রাতে। সেই স্তম্ভের নিচেই স্বাধীনতা জাদুঘরের অবস্থান।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সম্পর্কে জানতে স্বাধীনতা জাদুঘর হতে পারে যে কারো গন্তব্য। স্বাধীন বাংলাদেশের রক্তাক্ত জন্ম-ইতিহাসের সাক্ষীগুলো তরুণ প্রজন্মের কাছে তুলে ধরছে এ জাদুঘর। মানুষকে বলছে স্বাধীনতার কথা। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও এর পেছনের গল্পগুলো সম্পর্কে জাদুঘরটি সম্যক ধারণা দিতে পারে ছোট বড় সবাইকে।
এ জাদুঘরের আরো একটি নজরকাড়া দিক হলো টেরাকোটা বা পোড়া মাটির ফলকের কাজ। জাদুঘরের প্রবেশদ্বারে বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের প্রায় সম্পূর্ণ চিত্র তুলে ধরা হয়েছে টেরাকোটার মধ্য দিয়ে। গ্রামবাংলার চিরায়ত রূপসহ পর্যায়ক্রমে স্থান পেয়েছে বিভিন্ন আন্দোলনের চিত্র।
জাদুঘরটির দায়িত্বে থাকা জাতীয় জাদুঘরের কর্মকর্তা গোলাম কাওসার বাংলানিউজকে জানান, মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানাতে নতুন প্রজন্মের কাছে বৃহৎ ভূমিকা রাখছে এ জাদুঘরটি। পাশাপাশি এটি আরও সমৃদ্ধ করতে ভারত থেকে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত বেশকিছু নিদর্শন আনার প্রক্রিয়া চলছে। শনি থেকে বুধবার সকাল ৯টা থেকে বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত খোলা থাকবে জাদুঘরের দরজা। প্রবেশ মূল্য ২০ টাকা। সাপ্তাহিক বন্ধ বৃহস্পতিবার। সরকারি ছুটির দিনগুলোতে জাদুঘরটি বন্ধ থাকে। এছাড়া শুক্র ও শনিবার স্বাধীনতা জাদুঘরের মিলনায়তনে বিনা টিকিটে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র দেখানো হয় বলে বাংলানিউজকে জানান জাদুঘরে কর্তব্যরত আইয়ূর আহমেদ।
বাংলাদেশ সময়: ১০৪৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ১০, ২০১৭
এইচএমএস/এএ