ঢাকা, রবিবার, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ১৮ মে ২০২৫, ২০ জিলকদ ১৪৪৬

ফিচার

সাফল্য কথায় ‘আমার দেশ আমার গ্রাম’

শেরিফ আল সায়ার | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬:৩০, অক্টোবর ৩, ২০১১
সাফল্য কথায় ‘আমার দেশ আমার গ্রাম’

গল্পের শুরু ২০০৬ সালে লন্ডনে। আতাউর রহমান ও সাদিকা হাসান সেজুতি সহ আরও কয়েকজন বন্ধু মিলে লন্ডনে শুরু করে ই-কর্মাস নির্ভর একটি প্রতিষ্ঠান।

নাম দেওয়া হয় ‘ফিউচার সলিউশন ফর বিজনেস’। সেখানে সফলতার সাথে ব্যবসাকে দাঁড় করিয়ে ফেলেন। ইন্টারনেট ব্যবহার করে তারা পণ্য বেচা-কেনার কাজ শুরু করেন। খুব কম সময়ে সাফল্য পান।  

কিন্তু হঠাৎ দেশের জন্য কিছু করার আগ্রহ দেখা দেয়। বিদেশে বসে বসে টাকা উপার্জনের চেয়ে দেশের জন্য কিছু করার আকাঙ্খাই মুখ্য হয়ে ওঠে। যেমন কথা, তেমন কাজ। দেশে ফিরে আসলেন। তারপরের গল্পটি ‘এলেন দেখলেন জয় করলেন’ এর মতোই। আতাউর-সাদিকার নেওয়া ই-কমার্সভিত্তিক ‘আমার দেশ আমার গ্রাম’ প্রকল্প কেবল সাফল্য পেয়েই ক্ষান্ত হয়নি। পেয়েছে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিও। জাতিসংঘের যুব পুরস্কার পেয়েছে এই ‘আমার দেশ আমার গ্রাম’ প্রকল্প।

সেখানেও প্রতিযোগিতা কম ছিলো না। বিশ্বের ৯৯টি দেশের ৭০০ টি প্রকল্প জমা পড়েছিল। সেখান থেকে ১৯টি প্রকল্পের মধ্যে গত ২৯ সেপ্টেম্বর এ ‘আমার দেশ আমার গ্রাম’ কে রানারআপ ঘোষণা করা হয় ‘পাওয়ার টু ওমেন’ বিভাগের আওতায়।  

৭টি উপজেলায় সফলভাবে এ প্রকল্পটি বাংলাদেশে ই-কমার্সের মাধ্যমে যে কোন পণ্য ন্যায্য মূল্যে বেচা-কেনা করে সফলতার মুখ দেখেছে বলেই এ অর্জন সম্ভব হয়েছে। আতাউর-সাদিকার জানালেন তাদের সাফল্যের পথে হেটে চলার কথা।  

বললেন, ‘বাংলাদেশে এসে দেখি সবকিছুই শহর নির্ভর। তাই শহরের বাইরে কিছু করার তাগিদ অনুভব করলাম। কি করবো? চিন্তা করতেই সেই পুরানো প্রকল্পটিই এদেশে চালু করার সিদ্ধান্ত নেই। কিন্তু ই-কর্মাস শুরু করার জন্য শুধু শহরে বসে থাকলে হবে না। গোটা দেশে চালাতে হবে অভিযান। লন্ডনের প্রতিষ্ঠানটির নাম দিয়েই দেশে ২০০৯ সালে শুরু করলাম ই-কর্মাস প্রকল্প। ’  

শুরু করেন চারজন মিলে। এরা হচ্ছেন- নরুল রহমান খান, সাদিকা হাসান সেজুতি, আতাউর রহমান এবং শরীফুন হাসান। তথ্য-প্রযুক্তি নির্ভর যে কোনো কাজ শুরু করার আগে প্রয়োজন সুবিধামত জায়গা এবং কম্পিউটার। নিজের পয়সা দিয়েই মংলায় পরীক্ষামূলকভাবে ই-সেন্টার শুরু করেন। ওয়েব সাইটের নাম দেন ( www.amardesheshop.com )। জানান  সেজুতি।

তবে এক্ষেত্রে প্রয়োজন স্থানীয় মানুষের সহযোগিতা ও অংশগ্রহণ। সেটা নিশ্চিত করতে সবাই একসঙ্গে কাজও শুরু করেন। কাজগুলোকে ভাগ করে নেন। পাশাপাশি স্থানীয় কিছু তরুণদের কম্পিউটার প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। যাতে করে তারাই ইন্টারনেটের মাধ্যমে বেচা-কেনা করতে পারে।

প্রকল্পটির অন্যতম সাদিকা হাসান সেজুতি বলেন, ‘শুরুতে একটু ভয় ছিল। কিন্তু স্থানীয় মানুষগুলো আগ্রহ নিয়েই আমাদের পাশে এসে দাঁড়ায়; তাই খুব একটা বেগ পেতে হয়নি। ’ তিনি আরও জানান, ‘আমরা খেয়াল করলাম- মংলার অধিকাংশ নারীরাই নকশীকাঁথা সেলাই করে। আমরা তখন নকশীকাঁথার ছবি তুলে একটা দাম নির্ধারণ করে ওয়েবসাইটে তুলে দেই। দামের ক্ষেত্রে বেশকিছু বিষয় যোগ হয়; যেমন, গ্রাহকের সুন্দরবন সার্ভিসের মাধ্যমে পাঠালে সেটার দাম ধরা হয় এবং মূল দামের ১৫% অর্থ বেশি নেওয়া হয়। কারণ, সেখানে বসে যেসব ছেলে-মেয়েরা কাজগুলো করবে তাদের জন্য সম্মানি থাকে। এতে করে কিন্তু স্থানীয় পর্যায়ে কর্মসংস্থানও তৈরি হচ্ছে। ’  Amar Desh

পরীক্ষামূলক প্রকল্পটির সফলতা পেতে খুব বেশি দেরি হয়নি। মংলা উপজেলার মানুষজন উৎসাহিত হয়েই অংশ নেয়। তারা দেখতে পায় পণ্যের অর্থ তাদের কাছে সঠিকভাবেই পৌঁছাচ্ছে। যা আগে ছিল কল্পনারও বাইরে। এগুলো জানায় সেজুতি।

এভাবেই প্রকল্পটি বেড়ে ওঠে। নরসিংদী উপজেলায় কৃষকের সবজি কেনা-বেচার কাজটি পরীক্ষামূলকভাবে দেখেন। সেটাও সফল হয়। এভাবেই বর্তমানে বাংলাদেশের ৭টি উপজেলায় ‘আমার দেশ আমার গ্রাম’ প্রকল্পটির ই-শপ চালু হয়েছে। এসব ই-শপগুলো চলছে স্থানীয়দের সহায়তায়। এমনকি ই-শপের জন্য যে জায়গা প্রয়োজন হয়; সেটাও স্থানীয়রা দিয়েছেন।

ওয়ার্ল্ড সামিট ইয়ুথ এ্যাওয়ার্ড :

পৃথিবীতে যারা ই-কনটেন্ট নিয়ে কাজ করে; তারাই মূলত এ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতে পারে। বিশেষ করে ইন্টারনেট ও মোবাইল ফোনের মাধ্যমে নিজের দেশকে বদলে দেওয়ার চেষ্টা যারা করে; তাদের দিকেই নজর থাকে ওয়ার্ল্ড সামিট কমিউনিটির বিচারকদের।

জাতিসংঘ সদস্যদেশগুলোর কাছ থেকে বিভিন্ন বিভাগে প্রকল্প চাওয়া হয়। যেমন, দরিদ্র মানুষের সহযোগিতা করতে পারে এমন প্রকল্প, শিক্ষা ক্ষাতে, লিঙ্গ বৈষম্য দূরীকরণ, শিশুদের সহযোগিতা ইত্যাদি।

নিজের দেশের উন্নতিতে অবদান রাখছে এমনসব প্রকল্পগুলোর মধ্য থেকেই গত ২৯ সেপ্টেম্বর ঘোষণা করা হয় ‘আমার দেশ আমার গ্রাম’ প্রকল্পটি রানারআপ হয়েছে।

প্রকল্পটির উদ্যোক্তাদের অন্যতম সাদিকা হাসান সেজুতি জানায়, ‘এ পুরস্কার আমাদের কাজটাকে স্বীকৃতি দিলো। আমরা ভবিষ্যতে বাংলাদেশের ৪৮০টি উপজেলায় প্রকল্পটি কার্যকর করার স্বপ্ন দেখছি। এতে করে, পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে থাকবে। সেই সাথে কৃষকরাও তাদের ন্যায্য মূল্য পাবে। তারাও দেখতে পাবে বাজারে তাদের পণ্য কত দামে বিক্রি হচ্ছে। মোট কথা ‘স্বচ্ছতা’ থাকবে। ’  

তিনি আরও জানান, বাংলাদেশের সব জায়গায় পৌঁছাতে হলে প্রয়োজন স্থানীয়দের সরাসরি অংশগ্রহণ। সরকারের সহযোগিতা ছাড়া তো সম্ভব না। তাই স্থানীয় এমপি , চেয়ারম্যানেরও সহযোগিতা প্রয়োজন। কেউ যদি আমাদের সাথে একসঙ্গে কাজ করতে চায়; তাহলে আমাদের এ উদ্যোগটি আরও বেগবান হবে। খুব তাড়াতাড়ি আমরা বাংলাদেশে ইন্টারনেটের একটা বাজার তৈরি করে ফেলতে পারবো।

আগমী ১০-১৩ নভেম্বর অস্ট্রিয়াতে এ পুরস্কার তাদের হাতে তুলে দেওয়া হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৩৮ ঘণ্টা, ৩ অক্টোবর, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।