দেশের উপকারে আসতে পারে এমন বিষয়কেই নিজের গবেষণার অংশ হিসেবে বেছে নিয়েছেন সাইফুদ্দিন খালিদ। ডেনমার্কে পিএইচডি করতে গিয়েও দেশের প্রতি ভালোবাসার কমতি নেই খালিদের।
এসব বিষয় বলতে গিয়ে খালেদ বলেন, ‘শিক্ষা ছাড়া কোন জাতি কখনো উন্নতি করতে পারেনি। পারবে বলেও মনে হয় না। তাই সু-শিক্ষাকে কীভাবে সর্বস্তরে পৌঁছে দেওয়া যায় সে চিন্তাই আমাদের সবার করা উচিত। ’
খালিদের গবেষণার বিষয় হলো- ‘আইসিটি ইন এডুকেশন; টেকনিক্যাল ভোকেশনাল, এডুকেশনাল ইনস্টিটিউট সেন্টারড ডিফিউশন অব ইনোভেশন ইন রুরাল বাংলাদেশ’। নিজের বিষয়ের নাম বলেই তিনি হাসেন। বলেন, ‘নামটা খুব বড়। ’ এরপর নিজেই ব্যাখ্যা দেন।
‘গ্রামের শিক্ষক, শিক্ষার্থীর প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাকে কিভাবে তথ্য প্রযুক্তি ও যোগাযোগের মাধ্যমে আরো মানসম্মত করা যায় সেটাই বের করা। ঠিক কীভাবে পড়ালে কিংবা ঠিক কোন স্টাইলে এগুলে আমাদের গ্রামের শিক্ষা ব্যবস্থা উন্নত হবে সেটাই বের করা আমার গবেষণার বিষয়। ’ জানালেন খালিদ।
আমি তাঁকে প্রশ্ন করি, গ্রামের শিক্ষা ব্যবস্থাকেই কেন বেছে নিলেন? খুব সাবলীল উত্তর দেন খালিদ। বলেন, ‘পিএইচডি করতে যাওয়ার আগে আমি গ্রামে গিয়ে একজন সংসদ সদস্যের সঙ্গে একটি প্রজেক্টে কাজ করি। তখন আমি দেখলাম, গ্রামের শিক্ষার মান ভয়াবহ! একজন শিক্ষকও একটি ইংরেজি শব্দ সঠিকভাবে উচ্চারণ করতে পারেন না। বিষয়টি আমাকে ভাবায়। তারপর আমি কাজ করতে গিয়ে আরেকটি জিনিস লক্ষ্য করলাম। সেটা হলো, গ্রামের লোকগুলো সুবিধাবঞ্চিত। আমরা শহরে বসে যত দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছি; সেটার তুলনায় তারা এখনো অনেক পিছিয়ে। কিন্তু যদি ঠিক মতো তাদের ব্যবহার করা হয় তাহলে গ্রামের সবাই পুরো দেশটাকেই পাল্টে দেবে। এছাড়া আমরা সবসময় শহরের কথা ভাবি। শহরকে কিভাবে আরো উন্নত করা যায় সেটা নিয়েই ব্যস্ত থাকি। অথচ আমাদের জনসংখ্যার অধিকাংশ মানুষ গ্রামে থাকে। ’
গ্রামের শিক্ষার কোন স্তর নিয়ে কাজ করছেন এই প্রশ্নের উত্তর নিজ থেকেই দেন। জানান, ‘আমরা মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক স্তর নিয়ে কাজ করছি। ’
এ কথাটি শুনে আমার মনে প্রশ্ন জাগে। তিনটি স্তর শেষ করে উচ্চতর শিক্ষায় পড়ার যোগ্যতা হয়। তাহলে গবেষণায় প্রাথমিক স্তর নেই কেন? খালিদ বলেন, ‘আমাদের দেশে প্রাইমারি এডুকেশন অনেক দূর্বল। তবে আমরা যে বিষয়টি নিয়ে কাজ করছি সেখানে ইংরেজিতে একটু দক্ষতা প্রয়োজন। যেটা প্রাথমিক স্তরে খুবই খারাপ অবস্থা। তাই উপরের দুটি স্তরকে বেছে নেওয়া হয়েছে; অন্তত তাদের ঝালাই করা যাবে। তাছাড়া কাগজে কলমে না থাকলেও আমরা প্রাথমিক স্তর নিয়েও কাজ করছি। ’
গবেষণার বিস্তারিত তথ্য:
গবেষণার বিষয় শুরুতেই হচ্ছে শ্রেণীকক্ষ নিয়ে। শ্রেণী কক্ষের ব্যবহার। অর্থাৎ ক্লাসে মাল্টিমিডিয়া ব্যবহার করে কী করে শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষাকে বাস্তবমুখর করা যায় সে চেষ্টা করা। এবং সেই সাথে দেখা এ পদ্ধতি শিক্ষার্থীরা ঠিক কতটুকু লাভবান হতে পারছে।
দ্বিতীয়ত, ক্লাসের বাহিরে কোনো ট্রেনিংয়ের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের ব্যবহারিক শিক্ষা প্রদাণের ব্যবস্থা করা। সেখানেও দেখা তারা ক্লাসের শিক্ষায় বেশি লাভবান হচ্ছে নাকি ট্রেনিংয়ের মাধ্যমে নিজের প্রতিভা বিকাশ করতে পারছে।
তৃতীয়ত, দৈনন্দিন জীবনে আমরা বাসায় যে প্রযুক্তিগুলো ব্যবহার করি। যেমন: টেলিভিশন, মোবাইল ফোন ইত্যাদি। এগুলোর মাধ্যমে শিক্ষামূলক কিছু করা।
খালিদ জানান, ‘গবেষণার পাইলট প্রজেক্ট হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার রতনপুর ইউনিয়নের খাগাতুয়া গ্রামের তোফায়েল আলী টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজকে। এ স্কুলটি সরকারের আইসিটি প্রজেক্টের একটি অংশ।
পুরো প্রজেক্টটি অল্ব ইউনিভার্সিটি ওবেল ফাউন্ডেশন এবং ডিনেট-এর সহযোগিতায় ডিনেট এবং বিজ্ঞান তথ্য ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের যৌথ উদ্যোগে তিন বছর মেয়াদি প্রজেক্টের অংশ হিসেবে পরিচালিত হচ্ছে।
ডিনেট আইসিটি মন্ত্রণালয় থেকে সোলার প্যানেল, এলসিডি টিভি এবং ল্যাপটপ দিয়ে খালিদের এ গবেষণায় সহযোগিতা করছেন। এছাড়াও সিডিতে করে শিক্ষার্থীদের পড়ানোর জন্য কিছু কনটেন্টও সরবরাহ করছে। এসকল মাল্টিমিডিয়া পরিচালনা করার জন্য শিক্ষকদেরও ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা রয়েছে বলে খালিদ জানান।
সাইফুদ্দিন খালিদ বাংলাদেশের ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ থেকে কম্পিউটার সায়েন্সে পড়াশোনা করেছেন। পরে একই বিশ্ববিদ্যালয়ে লেকচারার হিসেবে চাকরি জীবন শুরু করেন। গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে পিএইচডি করতে পাড়ি জমান ডেনমার্কের অল্ব বিশ্ববিদ্যালয়ে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৫১ ঘণ্টা, ২৫ অক্টোবর, ২০১১