ঢাকা, রবিবার, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ১৮ মে ২০২৫, ২০ জিলকদ ১৪৪৬

ফিচার

চায়ের দেশে বেড়ানো

ফেরদৌস আহমেদ, মৌলভীবাজার জেলা প্রতিনিধি | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১:৫৩, অক্টোবর ৩০, ২০১১
চায়ের দেশে বেড়ানো

এই হেমন্তে শীতের আগমনী পরশ প্রকৃতিতে ভর করেছে। বিশেষ করে চা বাগান এলাকাগুলোতে এখন তরতাজা আমেজ।

গাঢ় সবুজের রঙ ছড়াচ্ছে পাতাগুলো। পাতার রঙে চোখে ধাঁধা লেগে যায়। বাগানগুলোর লাল মাটির পথ ধরে সকাল কিংবা দুপুর অথবা বিকেলজুড়ে মিষ্টি রোদ ঠাণ্ডা শীতল চমৎকার পরিবেশে ভরে থাকে। এ সময়টি এ অঞ্চলে বেড়াবার জন্য উপযুক্ত সময়।

চলতি সময় থেকে শুরু করে কয়েক মাস পর বসন্ত ঋতুতেও এই পরিবেশ ও আমেজ স্থিতিশীল থাকে। যারা ঘনবৃক্ষরাজি ভালোবাসেন, চা পাতা ভালোবাসেন, চা গাছের ফাঁকে ফাঁকে বন্ধু, স্বজন ও প্রিয়জনদের নিয়ে হাঁটতে ভালোবাসেন, সেইসব পর্যটকদের জন্য চায়ের দেশে স্বাগতম। সময় থাকলে এখনই বেরিয়ে পড়ুন। নাগরিক জীবনের ক্লান্তি, অবসাদ ও একঘেয়েমি থেকে কিছুটা স্বস্তির নিৰশ্বাস নিয়ে প্রাণ জুড়িয়ে যান এখান থেকে।

মৌলভীবাজার জেলাটি প্রকৃতির এক অপরুপ লীলাভূমি। সিলেট বিভাগের ১৬৩টি বাগানের মধ্যে ৯৩টি চা বাগান এ জেলায় অবস্থিত। অবশ্য এর মধ্যে দুটি এখন পরিত্যক্ত। দেশের ৯৩ শতাংশ চা পাতা এখানের বাগান থেকেই উৎপন্ন হয়।

সকালে চা শ্রমিকদের লাইন ধরে রঙ-বেরঙয়ের জামা-কাপড় পড়ে যাতায়াতটি এ অঞ্চলেই দেখা যায়। বিকেলে তোলা চা পাতা বাগানের ফ্যাক্টরিতে জমা দেয় শ্রমিকরা। সারাদিন শ্রমিকরা চায়ের সবুজে বিচরণ করে পাতা তোলার সাথে সাথে ভেজা ও তাজা পাতার স্বাদ ও গন্ধ শুঁকে নেন। হাঁটতে হাঁটতে পথেই শরীরের ঘাম শুকিয়ে বাড়ি ফেরেন তারা।

হেমন্তের শুরু থেকে বসন্তের শেষ সময় পর্যন্ত অনেক বাগানেই ছায়াছবি, নাটক, শর্টফিল্ম, ডকুমেন্টারি ইত্যাদি শ্যুটিং হয়ে থাকে। এ সময় গাছের পাতা সবুজে সবুজে ভরে যায়। পর্যটকদের উপচেপড়া ভিড়ও থাকে।

আপনি যদি এখানে বেড়াতে আসেন, তাহলে নিবিড় পর্যবেক্ষণের জন্য যে কোনো একটি বাগানকে বেছে নিতে পারেন। এছাড়া বাড়তি পাওনা হিসেবে রয়েছে বাংলাদেশ চা গবেষনা ইন্সটিটিউট (বিটিআরআই) ও চা জাদুঘর। আর শ্রীমঙ্গল থেকে ভানুগাছ পথটি ভ্রমণের জন্য বেছে নিলে আরও পাবেন লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান। এটি যে কোনো প্রকৃতি-প্রেমিকদের জন্য বিশেষ দর্শনীয়। পাশাপাশি শ্রীমঙ্গল শহরের কালীঘাট রোডে সাত রঙের চায়ের স্বাদ নিতে পারেন প্রিয়জনদের নিয়ে।

চা শিল্পের প্রাণ চা-শ্রমিক। আর চা শ্রমিকদের প্রাণ হলো নারী চা-শ্রমিক। মাথার ওপর থেকে বেতের দড়ি দিয়ে ঝুড়িটি পিঠের সাথে বেঁধে রেখে দু হাতের আঙুল দিযে চা গাছ থেকে নারী চা-শ্রমিকদের পাতা তোলার দৃশ্য দেখতে অপরুপ লাগে। ঘন সবুজের মাঝে নানা রঙের শাড়ি পরে নানা বর্ণের নারী শ্রমিকরা যে চা উত্তোলন করে থাকেন সেই বাস্তব দৃশ্যটির প্রতিফলন ঘটিয়েছেন শিল্পী সঞ্জীত রায় তার শিল্পকর্মে। দু পাশে সারি সারি চা বাগান, বন-পাহাড়ের লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান। তারপরই দেখা মিলবে এই শিল্পকর্ম ‌চা কন্যার। ঢাকা থেকে শ্রীমঙ্গল প্রবেশের পথে মৌলভীবাজার জেলার সীমানায় সবাইকে স্বাগত জানায় এই চা কন্যা। সাতগাঁও চা বাগান কর্তৃপক্ষ চা কন্যার এই ভাস্কর্যটি নির্মাণ করেছে। এই বাগানের স্বত্বাধিকারী মরহুম আহমেদুল কবির।

চা বাগান দেখার পাশাপাশি কমলগঞ্জের সুদৃশ্য মাধবপুর লেক, গোবিন্দপুর বাগানের কোল ঘেঁষে রাস্তার পাশে চমৎকার আরও একটি লেক এবং শমসেরনগরের ক্যামেলিয়া লেকটিও দেখে যেতে পারেন। এছাড়া হাকালুকি হাওর, বাইক্কা বিল, সীতেশ দেবের সেবাশ্রম, মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত, হামহাম জলপ্রপাতটি দেখে যেতে পারেন। বাড়তি আনন্দ হিসেবে পাথারিয়া ও ধলই চা বাগানের ভেতরে বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমানের স্মৃতিস্তম্ভটি এক নজর দেখে এই বীরের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে যেতে পারেন। এখানে একটি ছোট্ট অবকাশ ছাউনিও রয়েছে।

কীভাবে আসবেন  

ঢাকার সায়েদাবাদ থেকে শ্যামলী কিংবা হানিফ পরিবহনে শ্রীমঙ্গল এসে নামবেন। ভাড়া নেবে জনপ্রতি ২৫০ টাকা। শ্রীমঙ্গল থেকে বাসে, সিএনজি অটোরিক্সায় চড়ে এসব গন্তব্যে পৌঁতে পারবেন। অথবা স্থানীয়ভাবে মাইক্রোবাস ভাড়া করে নিতে পারেন।
কমলাপুর থেকে জয়ন্তিকা কিংবা উপবন ট্রেনেও শ্রীমঙ্গল আসতে পারবেন। ভাড়া প্রায় সমানই।

থাকা

প্রতিটি চা বাগানেই খুব আকর্ষণীয় বাংলো রয়েছে। তবে পরিচয় বা সম্পর্ক না থাকলে সেগুলো পাওয়া কঠিন। কিছু কিছু বাগানে বাংলো ভাড়াও দেওয়া হয়।

এছাড়া মৌলভীবাজার ও শ্রীমংগলে রয়েছে বিভিন্ন মানের আবাসিক হোটেল, সরকারি-বেসরকারি রেস্ট হাউস।
সবগুলোতেই আগেভাগে বুকিং দিয়ে ও যোগাযোগ করে যাওয়াই উত্তম।

বাংলাদেশ স্থানীয় সময় ২১৪৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ৩০, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।